চর্মরোগ সোরিয়াসিসের সর্বাধুনিক চিকিৎসা বিএসএমএমইউয়ে : ভিসি
বিশ্ব সোরিয়াসিস দিবস রোববার (২৯ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথভাবে র্যালির আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগ ও সোরিয়াসিস এওয়ারনেস ক্লাব
চর্মরোগ সোরিয়াসিসসহ সকল রোগের উন্নত চিকিৎসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সোরিয়াসিস চিকিৎসার সর্বাধুনিক পদ্ধতি ফটোথোরিপ মেশিনের মাধ্যমে চিকিৎসাও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া হচ্ছে। সব রোগের চিকিৎসা সেবা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে- যা অনেকেই জানেন না।
‘সবার জন্য চিকিৎসার সমঅধিকার’ প্রতিপাদ্যে বিশ্ব সোরিয়াসিস দিবস রোববার (২৯ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথভাবে র্যালির আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগ ও সোরিয়াসিস এওয়ারনেস ক্লাব। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকের সামনে শেখ রাসেল ফোয়ারা থেকে শুরু হয়ে বটতলা প্রদক্ষিণ করে এ ব্লকে গিয়ে শেষ হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
চিকিৎসক নার্সদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সকল রোগীদের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। গবেষণা, রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য সকল রোগীর তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে সকল চিকিৎসক, শিক্ষকদের তিনি গবেষণায় জোর দিতে আহ্বান করেন।
র্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ মুনীর রশিদ, সোরিয়াসিস ওয়ালফেয়ার ক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সামিউল হক, সাধারণ সম্পাদক ডা. এম আবু হেনা চৌধুরী, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. লুবনা খন্দকার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মুস্তাক মাহমুদ, অধিকতর উন্নয়নসমূহের প্রকল্প পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. পবিত্র কুমার দেবনাথ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
র্যালিতে জানানো হয়, সোরিয়াসিস এক ধরণের সাধারণ এবং দীর্ঘ মেয়াদী চর্মরোগ। যাতে মলিন রূপালী আঁশযুক্ত ছোপ দেখা যায়, যা উঠে যাবার পর সামান্য রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে মোট ৩ শতাংশ মানুষ সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়ে চলছে। সোরিয়াসিস কোন ধরণের ছোঁয়াচে বা সংক্রামক চর্মরোগ নয়। রোগের ইতিহাস, উপসর্গ, বাহ্যিক ত্বক পরীক্ষার মাধ্যমে, রোগের লক্ষণ সনাক্ত করন, চিকিৎসা ইতিহাস এবং রোগ সম্পর্কিত পারিবারিক ইতিহাস সংগ্রহের মাধ্যমে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় করা হয়। কখনো কখনো নিশ্চিত রোগ নির্ণয়ের জন্য ত্বক কেটে ত্বকের কলা স্থান অনুবিক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয়। (বায়োপি ও হিস্টোপ্যাথলজি)। সোরিয়াসিস রোগ নির্নয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন নাই কিন্তু বিভিন্ন ঔষধ প্রয়োগের জন্য রক্তের গুনগত মান, কিডনী, লিভার ও হার্টের অবস্থা জানার জন্য রক্ত ও আনুষাঙ্গিক (ইসিজি, এক্সরে) পরীক্ষা করা হয়। ঔষুধ প্রয়োগকালে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নির্ণয়ের জন্যে নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে একাধিক বার রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এ রোগের মূল কারণ এখনও জানা যায়নি। সোরিয়াসিস নারী ও পুরুষ উভয়েরই হতে পারে এবং যে কোন বয়সে এই রোগ হতে পারে তবে ১৫ বছর থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে বেশী দেখা যায়। ৪৬ বছর বয়সের আগেই ৭৫ শতাংশ সোরিয়াসিস রোগ নির্ণয় হয়ে যায়।
র্যালিতে আরও জানানো হয়, সাধারণত বহিঃত্বকে (এপিডার্মিসে) নূন্যতম ২৮ দিনে নতুন কোষস্তর তৈরী হয় এবং বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে এই সজীব কোষগুলি মরে গিয়ে উপরের কেরাটিন স্তরে উঠে এবং খসে পড়ে। সোরিয়াসিসে ত্বকে দ্রুত ও মাত্রাতিরিক্ত নতুন কোষ তৈরী হয়। মাত্র ৪ দিনে নতুন অপরিপক্ক কোষের স্তর দেখা যায় যা স্বাভাবিক নিয়মে খসে পড়ে না। ফলে অপরিপক্ক কোষগুলি স্তরিত হয়ে পুরু তৃষ্ণের সৃষ্টি করে, যা দেখতে মাছের আঁশের মত মোটা ও সাদা হয়। এ রোগের কারণে অন্তঃত্বকে (ডার্মিসে) রক্তনালী গুলো বড় ও পাতলা পাত্র বিশিষ্ট হয়ে যায় এবং বেশী রক্ত সঞ্চালিত হয়, ফলে সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ত্বকের রং লাল বর্ণের হয়। মাছের আঁশের মত শক্ত পুরু চামড়া ছড়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তের ফোটা দেখা যায় যা সোরিয়াসিস রোগ নির্ণয়ে একটি লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ত্বকের সোরিয়াসিস বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে শরীরে যখন সাদা চকচকে মাছের বড় বড় আঁশের মত ক্ষত দেখা যায় তখন তাকে প্লাক সোরিয়াসিস বলে যাহা শরীরের যে কোন স্থানে। হতে পারে তবে কনুই, হাটু এবং মাথার ত্বকে বেশি পরিলক্ষিত হয়। অনেক সময় বগলে, কুচকিতে, হাত ও পায়ের ভাঁজে এবং পায়ু পথের ভাঁজে আঁশযুক্ত লাল বর্ণের ক্ষত দেখা যায় তাকে ইনভার্স সোরিয়াসিস বলে।বৃষ্টির ফোটার মত সমস্ত শরীরে হুড়ানো সোরিয়াসিস ক্ষতকে গ্যাটেট সোরিয়াসিস বলে। সাধারনত গলায় জীবানু ঘটিত সংক্রমনের পর এধরনের সোরিয়াসিস দেখা যায়। অনেক সময় চামড়ার নিচে অস্বাভাবিক পূজপূর্ণ সোরিয়াসিস দেখা যায় তাকে পাটুলার সোরিয়াসিস বলে। এটা খুব খারাপ ধরনের সোরিয়াসিস, রোগী গুরুতর অসুস্থ হয় ও রে ভুগে থাকে। কখনো কখনো সোরিয়াসিস আক্রান্ত রোগীর সমস্ত শরীর লাল বর্ণ হয়ে শুষ্ক চামড়া বারে পড়তে পারে তাকে ইরাইথ্রোডার্মিক সোরিয়াসিস বলে। সোরিয়াসিস আক্রান্ত মাথার ত্বকে ভী খুশকী দেখা যায় যা বড় বড় আঁশের মত হয়। এবং মাথার ত্বক লাল বর্ণ ধারন করে। ইহাকে স্কাল্প সোরিয়াসিস বলে।
সোরিয়াসিসে আক্রান্ত রোগীর আনুমানিক এক তৃতীয়াংশ অস্থি সন্ধির প্রদাহে ভুগতে পারে। সাধারনত ত্বকে সোরিয়াসিসের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার কিছু কাল পরে অস্থি সন্ধি আক্রান্ত হয়। তবে কখনো কখনো ত্বকে সোরিয়াসিসের লক্ষন অনুপস্থিত থেকে শুধুমাত্র অস্থি সন্ধি আক্রান্ত হতে পারে। সোরিয়াসিস আক্রান্ত অস্থি সন্ধির এ প্রদাহকে সোরিয়াটিক আথ্রাইটিস বলে। সোরিয়াটিক আথ্রাইটিস দেহের যে কোন অস্থিসন্ধিতে হতে পারে তবে হাতের অস্থি সন্ধি সমূহ, হাটু ও গোড়ালির অস্থি সন্ধিতে বেশি পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্বক ও অস্থি সন্ধির সোরিয়াসিসে আক্রান্ত রোগীদের নখে সোরিয়াসিস হয়। তবে অনেক সময় শুধু নখেই সোরিয়াসিস হতে পারে। সোরিয়াসিসের লক্ষণ হিসেবে নখের উপরিভাগে এক বা একাধিক গর্ত দেখা যায়, নখের অগ্রভাগ ভেঙ্গে যায়, নখ নিচ থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং নখের বহিঃস্তর সম্পূর্ণ রূপে নষ্ট হয়ে যায়। ভঙ্গুর নখের রং সাধারনত হরিদ্রাভ ও বাদামী হয়। একে অনেকে নখের ছত্রাক সংক্রমন মনে করে থাকেন।