ইটস মাই প্রফেশন, আই নেভার ওয়ান্ট টু বি এ ডক্টর!
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইনসেটে ডা. মুহিব্বুর রহমান রাফে)
অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে আধা ঘন্টার মধ্যেই মেয়েটার ভক্ত হয়ে গেলাম। প্রফেসর কিম এর সাথে গিয়েছিলাম নিউরোসার্জারী অপারেশন থিয়েটারে। গলার দুপাশে দুটো করে সর্ববৃহৎ শিরা বা ক্যারোটিড ধমনীতে অপারেশন(CEA)“অপারেশনকালীন নার্ভ মনিটরিং”
(Intraoperative Neuromonitoring) এর কাজটি মূলতঃ করে থাকেন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। নিউরোসার্জারীর কিছু অপারেশনে তাই নিয়মিত ডাক পড়ে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের।
বিরাট থিয়েটারের এক কর্ণারে নিউরোমনিটরের সামনে বসে কাজ করছিল “হোয়াইট ওয়াসড” ললনা।
কিমকে দেখে সেতো পুরোই আত্মহারা। বুঝলাম বিয়াপক খাতির তাদের। অবশ্য প্রফেসর কিম এখানকার সবচেয়ে নবীনতম ও অবিবাহিত অধ্যাপক। পুপলারিটি বুঝতে হবে।
আমাকে পরিচয় করিয়ে, কিম ললনার পরিচয় দিলেন এভাবে-
সে এখানকার সবচাইতে ডিপেন্ডেবল কাজ জানা লেডি। তারা তাকে ছাড়া ডিপার্টমেন্ট এ নিউরোমনিটরের চিন্তাই করতে পারেন না। শুনে সে-ও গদগদ।
আধা ঘন্টার মাঝেই আমি তার জ্ঞানের গভীরতা আঁচ করতে পারলাম। সে যে কাজটি করছে, সে বিষয়ে সে সত্যিই অসাধারন জ্ঞান রাখে। এমন কি কোরিয়ান অধ্যাপকরাও যেখানে ইংরেজিতে কাঁচা, সে আমার সাথে যথেষ্ট কমিউনেকেট করছিল।
আমি যখনই বিষয়গুলো নিয়ে প্রফেসর কিমের কাছে প্রশ্ন করছিলাম, সে উত্তর দিচ্ছিল, আবার পাশে থেকে নিজেই আই প্যাড বের করে সে আমাকে দেখাচ্ছিল। নিজের হাতের নোটগুলো ছবিতে কনভার্ট করে রেখেছে। যখনই প্রয়োজন ছবি দেখে পড়ে নেয়। থিয়েটারে বসে একটু একটু করে ব্যাখ্যা করতে লাগলো।
একটু পড়ে উঠে গিয়ে চুপি চুপি চিফ সার্জনকে গিয়ে বলে আসলো নিউরোমনিটরিং এর ঝামেলা হচ্ছে। কারণ প্রেসার অনেক বেশি কমে গিয়েছে। সার্জন অবেদনবিদকে দৃষ্টি আকর্ষন করলেন। প্রেসার বাড়তে থাকলো।
- তুমি সামনে থাকা অবেদনবিদ স্যারকেই তো বলতে পারতে, অতদূরে গেলে কেন?
- ডিসিপ্লিন; স্যার। আমি তো সরাসরি উনাকে নিয়ন্ত্রন করতে পারিনা। আমার কাজটুকু আমি করি। উনাকে বলে প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করানো আমার কাজ নয়। চমৎকার স্মার্ট উত্তর।
কিম-ও মাথা নাড়ছে -যার যার কাজ, তার তার।
তখনও আসলে জিজ্ঞাসা করা হয়নি সে কি ডাক্তার, না নার্স, নাকি ফিজিও বা ওটি নাকি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট?
আমি জিজ্ঞাসা করলাম- আর ইউ এ ডক্টর? তুমি কি ডাক্তার?
-নো-ও--আই এম এ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। সে সহাস্যে উত্তর দিল।
-তুমি অনেক কিছু তো ডক্টরদের চেয়েও ভালো জানো। আজ আমাকে অনেক কিছু শেখালে। আমি তো তোমাকে তাই ডক্টর ভেবেছিলাম।
প্রফেসর কিম আমার হাত চেপে ধরলেন। বুঝলাম সেনসিটিভ কিছু বলেছি মে বি।
-আই নেভার ওয়ান্ট টু বি এ ড্ক্টর । দে আর ডিফারেন্ট প্রফেশনালস। আই এম প্রাউড টু বি এ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট স্যার।
ইটস মাই প্রফেশন। আই ওয়ান্ট টু নো মাই জব বেস্ট।
আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম তার উত্তরে। আমাদের দেশে অনেকেই আত্মপরিচয় সংকটে ভোগে। আর নিজের পরিচয় ও প্রফেশনকে ভালোবাসতে হয় কিভাবে, তাই শেখালো আত্মপরিচয়ে উদ্ভাসিত কোরিয়ান মেয়েটি।
লেখক ঃ
ডা. মুহিব্বুর রহমান রাফে
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য) এমডি (ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন) ফিজিয়্যাট্রিস্ট।