তামাকজাত পণ্য ব্যবহারে অসংক্রামক রোগ বাড়ছে
সিরডাপে তামাক ও অসংক্রামক রোগ: জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ‘এফসিটিসি’র সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের গুরুত্ব শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
আমাদের দেশে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ার কারণে অসংক্রামক রোগ যেমন- হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগ ইত্যাদি বাড়ছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপে তামাক ও অসংক্রামক রোগ: জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ‘এফসিটিসি’র সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের গুরুত্ব শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে উপরোক্ত কথা বলা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে। এতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হুমকিতে পড়ছে। বর্তমানে নারীদের মধ্যেও ধূমপান ব্যবহারের মাত্রা বাড়ছে। তারাও ই-সিগারেটের মতো ভয়ংকর নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ছে। তাই তরুণদের জনস্বাস্থ্য রক্ষায় অবিলম্বে ই-সিগারেটের মতো ক্ষতিকর পণ্যের আমদানি রপ্তানি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার এফসিটিসির আলোকে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন পাবলিক হেলথ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগত্তত্ব ও গবেষণার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. নিজাম উদ্দীন আহমেদ।
মূল প্রবন্ধে তারা বলেন, দেশে তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন তিন কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, তামাক ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। এর কারণ বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নির্মিত করার ক্ষেত্রে এখনো সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। তাই প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিদ্যমান তামাকনিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে তামাক নির্মূলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. এ এস এম শহিদুল্লাহ, ডা. নাদিরা সুলতানা, পুষ্টিবিদ তাসনিমা হক, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এবং তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ছয়টি ধারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। সেগুলো হলো-আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা, অর্থাৎ সব পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা। তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা। ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।