একজন চিকিৎসকের দিনলিপি

ডা. মো. তরিকুল হাসান
2023-10-08 16:33:14
একজন চিকিৎসকের দিনলিপি

সরকারি হাসপাতালে রোগীর ভীড়

এখন আমি রোগী দেখি ওয়ার্ডের একবারে শেষপ্রান্তে। লিফটের সামনে ফ্লোরে শুয়ে থাকা রোগী হাটু গেড়ে দেখতে গিয়ে প্রায়ই ভয় হয় প্যান্টের দফারফা না হয়ে যায়! সাজ্জাদ ভাই অবশ্য বলেছেন, তরিকুল তুমি কাজ করে যাও, প্যান্ট ফাইস্যা গেলে প্রয়োজনে প্যান্ট কিনে দেয়া হবে!

আলহামদুলিল্লাহ বেশিরভাগ রোগী বেশ ইম্প্রুভ হয়েছে। এক চাচা মারাত্মক স্ট্রোক নিয়ে এসেছিলেন। আজ কথা বলতে পারছেন। চাচীর মৃত্যু যেদিন হয়েছে সেই রাতেই চাচীর শোকে স্ট্রোক হয়েছে।

এতটুকু শোনার পর রনিদা বললেন, দেখ, কি চমৎকার ভালোবাসা! আমি বললাম, ইয়ে মানে, মৃত চাচী উনার প্রথম পক্ষ ছিলেন। চাচার দ্বিতীয় বউ এখন সেবা করছেন। শুনে রনিদার বাকরুদ্ধ হলো!

একজন রোগী নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ওয়ার্কআপ করছি। তেমন কূল-কিনারা করতে পারছি না। এরশাদ ভাই, মুন্না ভাই, স্বপন স্যারসহ ওয়ার্ডের যারা আমার গুরু আছেন সবার সাথে আলোচনা করেছি। এমনকি বিভাগীয় প্রধান স্যারের রুমে কাগজপত্র নিয়ে গিয়ে আলোচনা করেছি। রোগী দিনদিন খারাপ হচ্ছে। আজ সকালে রোগীর স্বজনরা বললো, স্যার আপনি অনেক চেষ্টা করেছেন। আর আশা নেই। আমরা রোগীটাকে বাড়ি নিয়ে যাবো!

ইদানিং সব ফ্রন্টে পরাজিত হচ্ছি। হঠাৎ নিজেকে নিজে মোটিভেশান দিলাম। সব দরজা বন্ধ হলে আল্লাহর দরজা খুলে যায়। রাত বেশি গভীর হলে বোঝা যায় ভোর হতে আর দেরি নেই! রোগীর স্বজনের পিঠে হাত রেখে বললাম, আমি এখনো হাল ছেড়ে দেইনি। আমরা হাল ছেড়ে দিলে শিশু সন্তানেরা এতিম হয়ে যাবে, একজন নারী বিধবা হয়ে যাবে। আল্লাহ ভরসা আপনারা দোয়া করতে থাকেন, দেখি আমি তার জন্য কি করতে পারি!

আবার রোগীটাকে যাচাই-বাছাই করতে থাকলাম। আজকে মনে হলো জট খুলে যাচ্ছে। ওয়ার্ডের ভেতরে রোগী দেখছিলেন আকরাম ভাই। তাকে নিয়ে সিএসএফ বের করে পরীক্ষার জন্য পাঠালাম। সব ওষুধ আবার যাচাই করে অপটিমাইজড করলাম। এখন আল্লাহর দরবারে হাত তুলেছি। দেখি কি উত্তর আসে, আমিতো আমার রবের কাছে চেয়ে কোনদিন ব্যর্থ হইনি..

লেখক : 

দিনলিপি!
তরিকুল হাসান
০৮/১০/২৩
ময়মনসিংহ।


আরও দেখুন: