এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের ৪০ শতাংশই সেপ্টেম্বরে
ভাইরাসজনিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ
ভাইরাসজনিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে সাধারণত আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এ বছর নির্ধারিত সময়ের আগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। চলতি বছরের মোট আক্রান্তের প্রায় ৪০ শতাংশই সেপ্টেম্বর মাসে শনাক্ত হয়েছে। যা উদ্বেগজনক- বলছেন চিকিৎসকরা।
ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা কোনও ব্যক্তিকে কামড়ালে চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। আবার ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটি ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে যায়।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হওয়া ৭৪ জনের মধ্যে ২১ জনই মারা গেছেন সেপ্টেম্বর মাসে। যা মোট মৃত্যুর ২৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এছাড়া চলতি বছর সেপ্টেম্বরে মৃত্যুর সংখ্যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ৭ গুণ বেশি। ২০২২ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে মারা যান মাত্র ৩ জন। অন্যদিকে, এ বছর আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ২৮ জন মারা গেছেন। যা মোট মৃত্যুর ৩৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং জুলাই মাসে মারা যান ১৬ জন বা মোট মৃত্যুর ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ।
ডেঙ্গুতে শিশুরা কম আক্রান্ত হলেও মৃত্যু বেশি। মোট ৭৪ জনের মধ্যে ২৬ জন শিশু মারা গেছে। যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৩৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে নারীরা। এ বছর প্রায় ২৫ জন বা ৩৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ নারী মারা গেছে ডেঙ্গুতে। অন্যদিকে পুরুষ মারা গেছে ২৩ জন। যা শতাংশের হিসেবে ৩১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। শক সিনড্রোম, হেমোরেজিক সিনড্রোম ও এক্সপান্ডেট সিনড্রোম ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে জানান চিকিৎসকরা।
২০২০ সালে ডেঙ্গুতে কেউ মারা না গেলেও ২০২১ সালে ৫ জন এবং ২০২২ সালে মারা গেছেন ৪১ জন।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৬৭৯ জন। এর মধ্যে সর্বশেষ গত তিন মাসে এর সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে সদ্য শেষ হওয়া সেপ্টেম্বর মাসে ৩ হাজার ৮৯২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যা মোট রোগীর প্রায় ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ। আগস্ট মাসে হাসপাতালে ভর্তি রোগী পাওয়া যায় ৩ হাজার ১১ জন। যা রোগীর প্রায় ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ। জুলাইয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ৩১১ জন ডেঙ্গু রোগী। যা এ বছর মোট আক্রান্তের ২৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এ ছাড়া গত জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিল ২৮৩ জন। মে মাসে ৫৩ জন, এপ্রিল মাসে ১৮ জন, মার্চ মাসে ১২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন এবং জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত পাওয়া যায় ৭৭ জন।
এদিকে চলতি বছরের গত ৯ মাসের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আগামী দিনগুলোতে এর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, ভরা বর্ষায় সাধারণত এ রোগের প্রকোপ থাকে না। বর্ষা শেষ হওয়ার পরপরই এর প্রকোপ বাড়তে থাকে। অর্থাৎ, জুলাই থেকে পরের মাসগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। যদিও এ বছর খুব তাড়াতাড়িই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে। এ প্রকোপ অব্যাহত থাকলে এ বছরের পরের মাসগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।