স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তা বাড়াতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
জাতিসংঘ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে ‘ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি)’ বিষয়ক ইউএনজিএ উচ্চ-স্তরের বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সবার জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ (ইউএইচসি) নিশ্চিত করতে পাঁচটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে ‘ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি)’ বিষয়ক ইউএনজিএ উচ্চ-স্তরের বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক অংশীদারদেরকে সবার জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ নিশ্চিত করতে পাঁচটি ক্ষেত্রে সমর্থন করার জন্য অনুরোধ করছি। ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে: প্রথমত, শিশু, মা এবং কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যের জন্য উন্নয়ন সহায়তা বজায় রাখা এবং অভিবাসীদের স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু-স্বাস্থ্য চক্র মোকাবেলা করা।
দ্বিতীয়ত, সকলের জন্য স্বাস্থ্য আইডিসহ একটি আন্তঃ-চালিত, ডেটা-নির্ভর স্বাস্থ্য তথ্য সিস্টেম বিকাশে দক্ষতা বিনিময় করা।
তৃতীয়ত, আমাদের উপযোগী একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য বীমা স্কিম বিকাশে সহায়তা করা,
চতুর্থত, দ্রুত বর্ধনশীল স্বাস্থ্য-প্রযুক্তি স্টার্ট আপসহ স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো; এবং
পঞ্চমত, জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পেটেন্ট প্রকাশ এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের ‘ট্রিপ’ (ট্রাফিক রেসপন্স এন্ড ইনফর্মেশন পার্টনারশিপ) বাধ্যবাধকতা মেনে চলা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রজন্ম ইউএইচসি সমন্বত করে ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারে। সকলে হাতে হাত মিলিয়ে তা সম্ভব করার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী অথচ অর্জনযোগ্য এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা।
বাংলাদেশে সবার জন্য স্বাস্থ্যেসেবার সুযোগ নিশ্চিত করা আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিশেষায়িত মেডিকেল হাসপাতাল পর্যন্ত দেশব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা তৃণমূলে বেসরকারি অংশীদারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ লভ্যাংশ দিয়েছে, কারণ, বাংলাদেশ প্রতি ১ লাখ জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ১৬৩-এ নামিয়ে এনেছে। এছাড়াও প্রতি হাজার জন্মে নবজাতকের মৃত্যুহার ১৫ এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী মৃত্যু হার ২৮-এ নেমে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, শিশু টিকাদানের ওপর আমাদের গুরুত্ব সার্বজনীন কভারেজ অর্জন করেছে। আমাদের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছরের কাছাকাছি।
তিনি উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারী ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। আমরা এখন ডেঙ্গু মোকাবেলায় হাই অ্যালার্টে কাজ করছি। আমরা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের জন্য উন্নত চিকিৎসা চালু করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মানবিক ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চিকিৎসা সেবা প্রদানের মান প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি আরও বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং স্নায়বিক রোগের বিষয়ে বাংলাদেশের নীতি এবং পদক্ষেপ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।
তিনি বলেন, সংবেদনশীল পদ্ধতিতে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করি। আমরা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের বিরুদ্ধে প্রস্তুতির জন্য একটি ‘এক স্বাস্থ্য পদ্ধতি’ প্রচার করছি। আমরা পুষ্টি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা এবং পানিতে ডুবে মৃত্যুর বিষয়ে সচেতনতা বাড়াচ্ছি।
তিনি বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, কেউ পকেটের পয়সায় স্বাস্থ্যসেবার জন্য কষ্ট পাবে না। আমাদের জনস্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলো শূন্য বা সর্বনিম্ন খরচে পরিষেবা প্রদান করে, যা আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ৮০% কভার করে,’ তিনি যোগ করেন। তিনি বলেন, প্রশিক্ষিত কর্মী দিয়ে তাদের সেবার মান উন্নয়নে বাংলাদেশের মনোযোগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো খরচ মিটনো জন্য একটি কার্যকর অর্থায়ন মডেল তৈরি করা। বাংলাদেশে, আমরা আমাদের ওষুধের চাহিদার ৯৮% দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ করি।’
এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।