অবশেষে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সুখবর

ডক্টর ডেস্ক
2023-09-09 19:13:15
 অবশেষে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সুখবর

ইন্টার্নদের জন্য বেতন-ভাতা বৃদ্ধি

দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা ৫ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। আগামী মাস থেকে এটি কার্যকর হওয়ার আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে। অর্থ বিভাগের অনুমোদন পেলেই শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা ২০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন।

আজ শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেসিক সার্জিক্যাল ট্রেইনিং প্রোগ্রামে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এসব কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

জানতে চাইলে প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া ওসমানী মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মো. মোস্তাকিম শাফি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জিজ্ঞেস করেছি, স্যার আমাদের ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে কতটুকু আপডেট আছে? তিনি বললেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০ হাজার টাকা ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অর্থ বিভাগের অনুমোদন পেলেই ২০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা কার্যকর হবে। আশা করছি, আগামী মাস থেকে ভাতা বৃদ্ধি কার্যকর হবে।’

এদিকে ভাতা বৃদ্ধির খবরে আনন্দিত দেশের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মোহাম্মদ সুজন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য অধিপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই, এমন একটি উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। তাদের প্রতি আমরা অনেক কৃতজ্ঞ, আমাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল এটি। আমাদের আরেকটি দাবি হলো প্রতি বছর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বৃদ্ধির একটি নিয়ম চালু করা। এতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আরও বেশি অনুপ্রেরণা পাবে। চিকিৎসকরা দিন-রাত পরিশ্রম করে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেন, তারপরও প্রশংসা পায় খুব কম। চিকিৎসকদের শুধু বেতন নয়, নিরাপত্তার দিকেও যেন কর্তৃপক্ষ নজর দেয়। সেবিষয়ে আমরা সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই প্রতিটি রোগীকে কেন্দ্র তাদের তৎপরতা অনস্বীকার্য। সকল স্বাস্থ্য সংকটেই নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা দিয়ে যান এসব নেপথ্য নায়ক।

বৈশ্বিক মহামারী করোনাতে রোগীর তুলনায় চিকিৎসক কম থাকায়, শিক্ষানবিশ এসব চিকিৎসককে রাখতে হয় ব্যাপক ভূমিকা। এটা সর্বজনবিদিত যে, দেশের সম্মানজনক পেশাগুলোর অন্যতম চিকিৎসা। অথচ মর্যাদার এ পেশায় তাদের সূচনা হয় অনুল্লেখযোগ্য পারিশ্রমিকে, যা প্রতিটি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে পেশার প্রতি করে তোলে সীমাহীন নিরুৎসাহী।

গত কয়েক বছর ধরে ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ের একাধিক নিউজ প্রকাশ করেছে মেডিভয়েস। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সভাপতি ডা. মহিউদ্দিন জিলানী মেডিভয়েসকে বলেছিলেন, ‘আমাদেরকে মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়ে মাস চলা প্রায় অসম্ভব এবং খুব কষ্ট হয়। ব্যয় মিটাতে আমাদেরকে মাঝে মাঝে টিউশনি ও বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেওয়া লাগে। সমন্বয় করে মাস পার করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে হতাশায় কেউ কেউ পরিবর্তন করেন চিকিৎসার মতো মহৎ পেশা।’

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. মারুফ উল আহসান শামীম বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, কর্মক্ষেত্রে যে আমাদের শ্রম বা ত্যাগ এর একটি সঠিক মূল্যায়ন চাই। সেইসাথে আমাদের ভাতাটা আরও বাড়ানো উচিত। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা সময় উপযোগী করা হোক।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. সুজায়েত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিপেক্ষিতে বেশির ভাগ ইন্টার্ন চিকিৎসক হতাশায় ভোগেন। কারণ, ইন্টার্ন চলাকালীন ভাতা পায় ১৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত খরচ,পারিবারিক খরচসহ অন্যান্য কিছু সামাল দেওয়া লাগে। একজন শিক্ষার্থী যখন এমবিবিএস শেষ করেন, তখন পরিবারের প্রত্যাশা থাকে। এখন যে হারে সবকিছু দাম বাড়ছে, সেই অনুপাতে পরিবারকে সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মাঝে মাঝে খেয়াল করলে দেখা যায়, চিকিৎসকদের মধ্যে ক্যাডার পরিবর্তন করার প্রবণতা বাড়ছে। যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের যে পারিশ্রমিক বা ভাতা দেওয়া উচিত তা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ডাক্তাররা ক্যাডার পরিবর্তন করছেন।

ইন্টার্নদের দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ ঐক্যমত পোষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, চিকিৎসকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। যাতে চিকিৎসক পুরো সময়টাতে হাসপাতালে মনোযোগী হতে পারে। তাঁদের ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ একমত। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আসলে তাঁদের সঙ্গে বসে আলোচনা করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন ডক্টর যখন পাস করে যায়, তাঁর কাছ থেকে অনেকের চাহিদা থাকে। স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় ভিন্ন কথা। তারপর থেকে ইন্টার্নদেরকে এভাবে ঠকানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।’


আরও দেখুন: