চেম্বার শুরু করতে যাচ্ছেন অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা!
ঘোষণা দিয়ে চেম্বার শুরু করতে যাচ্ছেন গাইনী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা
রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও আজ থেকে ঘোষণা দিয়ে চেম্বার শুরু করতে যাচ্ছেন গাইনী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা। উল্লেখ্য, মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দোষী ৩ চিকিৎসকের বিষয়ে শাস্তির সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ২৬ আগস্ট শৃঙ্খলা বৈঠক ডেকেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে যা বলেন অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহাঃ
গতকাল রোববার (১৩ আগস্ট) নিজ ফেসবুক টাইম লাইনে চেম্বার শুরুর ঘোষণা দেন অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা। সেখানে তিনি লিখেছেন, আমি এখন আমার নিজের হাসপাতালে আমার পরামর্শ শুরু করছি। মানে আমি ইমপালস হাসপাতালের একজন পরিচালক। আমার নতুন চেম্বার ইমপালস হাসপাতাল যা ৩০৪/ই শহীদ তাজউদ্দিন এভিনিউতে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নাম্বার : ০১৭১৫০১৬৭২৭। আমি আগামীকাল থেকে সেখানে থাকব। ১৪.৮.২০৩. বিকাল ৩.০০ টা থেকে রাত ১০.০০টা পর্যন্ত। হটলাইন নম্বর হল ১০৬৪৪। যেহেতু আপনি ইতিমধ্যে জানেন, ইমপালস হাসপাতাল ব্যথাহীন প্রসবের জন্য বিখ্যাত। কারণ এটি বিদেশী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তারদের নিয়ে গঠিত শক্তিশালী দল রয়েছে। শীঘ্রই দেখা হবে। ধন্যবাদ আপনাকে।
ডা. সংযুক্তার চেম্বার শুরুর বিষয়ে বিএমডিসি’র বক্তব্য : ২০১০ সালের পর থেকে তাঁর রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করা ছিল না। সেন্ট্রাল হাসপাতালের ঘটনার প্রেক্ষিতে এই বিষয়টা সামনে আসে। এরপর তিনি ২১ জুন রেজিস্ট্রেশন নবায়নের জন্য আবেদন করেন। তাঁর বিরুদ্ধে যেহেতু অনেক অভিযোগ আসছিল, এ কারণে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করা হয়নি। তখন তিনি বার বার বিএমডিসিতে খোঁজ নিতে থাকেন- কেন তার রেজিস্ট্রেশন নবায়ন হচ্ছে না? যেহেতু তাঁর রেজিস্টেশন নবায়নের বন্ধ বা স্থগিত রাখা প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিএমডিসিকে কোন নির্দেশনা দেয়া নেই, সেজন্য বিএমডিসি সভাপতির অনুমোদন সাপেক্ষে সম্প্রতি তাঁর রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করা হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি চেম্বার করতে পারেন কি-না, সে ধরনের কোন এখতিয়ার বিএমডিসির নাই। তবে মন্ত্রণালয় তাঁর ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দিলে, বিএমডিসি সেটা প্রতিপালন করবে। তাছাড়া, মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দোষী ৩ চিকিৎসকের বিষয়ে শাস্তির সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ২৬ আগস্ট শৃঙ্খলা বৈঠক ডেকেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। এরআগে, ডা. সংযুক্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোন এখতিয়ার বিএমডিসির নাই।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে দোষী ডা. সংযুক্তাসহ ৩ চিকিৎসকঃ
সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে কুমিল্লার গৃহবধূ মাহবুবা রহমান আঁখির চিকিৎসায় ১৮টি ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে কমিটি তদন্তে ডা. সংযুক্তা সাহাসহ তিন চিকিৎসক, সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমনকে দোষী সাব্যস্ত করে ছয় দপ্তরে চিঠি দিয়েছে। পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ১৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা, ডা. শাহাজাদী মুস্তার্শিদা ও ডা. মুনা সাহার বিরুদ্ধে ১০টি, সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ৪টি এবং আঁখির স্বামী ইয়াকুবের বিরুদ্ধেও ৪টি ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিন চিকিৎসকের ১০ ভুলঃ
তদন্ত প্রতিবেদনে ডা. সংযুক্তার বিরুদ্ধে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন ৯ জুন রাতে তিনি বিদেশ যাবেন, তা রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাননি। এ ছাড়া তিনি ফেসবুকে স্বাভাবিক প্রসব নিয়ে অতিরঞ্জিত ও অনৈতিক প্রচারণা চালান।
ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদার বিরুদ্ধে বলা হয়, তার কোনো গাইনোকলজি ডিগ্রি নেই। ডা. সংযুক্তার অনুপস্থিতির কথা তিনি রোগীর স্বজনদের কাছে গোপন রেখেছিলেন। পাশাপাশি ডা. শাহজাদী কথাবার্তা ও আচার-আচরণে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করেন, যাতে রোগীপক্ষের মনে হয় যে সংযুক্তা সাহা ওই সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিত করাতে ডা. শাহাজাদী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেননি। তিনি রোগীর বাস্তব ও প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন না করে বিভিন্ন উপায়ে স্বাভাবিক প্রসব করানোর চেষ্টা করেন।
চিকিৎসক মুনা সাহার বিরুদ্ধেও সংযুক্তা সাহার অনুপস্থিতির কথা গোপন করার কথা জানানো হয়েছে। হাসপাতালে রোগী আসার পর তিনি এমন পরিবেশ সৃষ্টি করেন, তাতে রোগীপক্ষের মনে হয়নি যে ডা. সংযুক্তা হাসপাতালে উপস্থিত নেই।