ছাত্রজীবনে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) এমবিবিএস কে-৮০ ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে বক্তব্য দিচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক
ছাত্রজীবনে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির লক্ষ্যে অ্যাডমিশন টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কিন্তু ভর্তি হতে পারেননি। সোমবার (২৪ জুলাই) ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) এমবিবিএস কে-৮০ ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে দেয়া বক্তব্যে এই তথ্য জানান তিনি।
ঢামেকের নবীন শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তোমরা খুবই ভাগ্যবান, তোমাদের চেষ্টার মাধ্যমে এখানে ভর্তি হতে পেরেছো। যারা ভর্তি হয়েছো, আজকে তাদের পিতা-মাতা ওখানে বসেছেন। আজ পিতামাতা হিসেবেও তারা গর্বিত, আত্মীয়-স্বজনরাও আজ গর্বিত।
জাহিদ মালেক বলেন, আমার পিতা-মাতা কিন্তু ওখানে বসতে পারেন নাই, আপনারা যেখানে বসেছেন। কারণ আমিও ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম, এই মেডিকেল কলেজে। কিন্তু আমি এখানে ভর্তি হতে পারি নাই। এ কারণে আজকে আপনারা যেখানে বসতে পেরেছেন, সেখানে আমার পিতামাতা বসতে পারেন নাই। তার জন্য আপনাদেরকে আমি অভিনন্দন জানাই এবং ছেলে-মেয়েদেরকেও অভিনন্দন জানাই।
জাহিদ মালেক বলেন, আমি আনন্দিত, গর্বিত- এই ধরনের একটি প্রোগ্রামে হাজির হতে পেরেছি। আপনারা জানেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ তার সুফল পাচ্ছে। দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে ৩৭টি, যেখানে সিট রয়েছে ৪ হাজার ৩শ’ ৫০টি। এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় ৪৯ হাজার ছাত্র-ছাত্রী। এই ৪৯ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্য থেকে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ১১ হাজার।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এবারে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেলগুলোতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা চাই, স্বচ্ছতার সাথে সঠিক ও যোগ্য ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি হোক। এজন্য পরীক্ষাও নিয়েছি ডিজিটাল পদ্ধতিতে, স্বচ্ছতার সাথে। রেজাল্ট নিয়েও কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। সকলেই এর প্রশংসা করেছে। ভর্তি পরীক্ষার সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য মেডিকেলের শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
মেডিকেল শিক্ষার মানের কথা বলতে গিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, করোনার সময় অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানে তেমনভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়নি। কিন্তু এমবিবিএস-সহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই শিক্ষার্থী ভর্তি করেছি। যে যে ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা দেয়া যায়, তার ব্যবস্থা করেছি। যার কারণে কোন ছেলে-মেয়ের একবছরও লস হয়নি কিংবা অটোপাসও দিতে হয়নি। মেডিকেল সাইন্সে অটো পাসের সুযোগ নাই। অনেকেরই অনেক রকম আকুতি ছিল, কিন্তু আমরা অটোপাসে যাইনি। পরীক্ষা নিয়ে যোগ্যতম ছাত্র-ছাত্রীদেরকেই ভর্তির চেষ্টা করেছি।
স্বাস্থ্যখাতে বঙ্গবন্ধুর অবদান স্মরণ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য বঙ্গবন্ধু অনেক কিছু করে গেছেন। বিসিপিএস ও বিএমডিসি বঙ্গবন্ধুর হাতে শুরু। বাংলাদেশে ডাক্তারদেরকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নতি করে দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু। ফ্যামিলি প্লানিংয়ের কাজকর্মও বঙ্গবন্ধু শুরু করেন। অনেককিছুই বঙ্গবন্ধু শুরু করেছেন। আমরা সেসব কাজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে চলেছি।
ঢামেকের শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে এই ঢাকা মেডিকেল কলেজে যারা ভর্তি হতে পেরেছো, এটাকে আমরা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠতম মেডিকেল কলেজ হিসেবে জানি। এখানকার হাসপাতালও শ্রেষ্ঠ।
মেডিকেল অ্যাডমিশনে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে তোমরা জীবনের ক্যারিয়ার গঠনের প্রথমধাপ পাড়ি দিতে পেরেছো। এখনো অনেক পথ বাকি। জীবনের পথচলা সবে শুরু। সেই পথে যে যার প্রচেষ্টা অনুযায়ী সাফল্য পাবেন। যতখানি সিনিসিনিয়ারিটি দেবে, পরিশ্রমী হবে, অধ্যবসায়ী, মনোযোগী থাকবে, যতখানি শিক্ষকদের কথা শুনবে এবং ক্লাসে এটেন্ড করবে- এসব বিষয় মিলেই সাফল্য আসবে। শুরুতেই মাইন্ড সেট করে নিতে হবে যে, আমি একজন ভাল ছাত্র হবো। এবং পরবর্তীতে একজন ভাল ডাক্তার হবো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভাল ডাক্তার হওয়া মানে, আমাদেরকে সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। ডাক্তার হওয়ার আগেই ক্লিনিক্যালি কাজকর্ম শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ প্র্যাকটিসের কাজ শুরু হয়ে যায়। কাজেই ভাল ডাক্তার হতে গেলে- মানুষ যাতে আস্থা রাখে, বিশ্বাস করে- তাহলেই একজন ভাল ডাক্তার হওয়া সম্ভব। ডাক্তার যারা আছেন, তারা সেবা দেয়ার জন্যই আছেন। আর ভাল সেবা দিলে, ভাল নাম হলে টাকা-অর্থ এমনিতেই চলে আসে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমি বিদেশে যাই- অনেককেই দেখেছি ট্যাক্সি চালাচ্ছে, ডাক্তারদের এমন হওয়া উচিত নয়।
মেডিকেলে পড়ালেখা করে ভিন্ন ক্যাডার বেছে নেয়াকে নিরুৎসাহিত করতে গিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, আবার অনেকেই ডাক্তারি পাস করেছেন, সরকারি চাকরিতে ভিন্ন ক্যাডারে আছেন। অনেকেই অ্যাডমিন ক্যাডারে, ফরেন ক্যাডারে- বিভিন্ন ক্যাডারে আছেন। অথচ, তারা যে ৫/৬ বছর এখানে পড়ালেখা করলো, মা-বা যে তাদের টাকা দিলেন, সরকার যে টাকা খরচ করলো. সেটা কিন্তু বৃথা হলো। জনগণ তার কাছ থেকে ডাক্তারি সার্ভিসটা পেল না। আমি আশা করবো, যারা এখানে আমাদের প্রিয় ছেলে-মেয়েরা আছো, যে শিক্ষাটা নিচ্ছো- সেই শিক্ষাটা কাজে লাগাতে হবে দেশের মানুষের জন্য।
মনে রাখতে হবে- এই দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে তুমি পড়ালেখা করছো। যারা সরকারি মেডিকেলে পড়ালেখা করছো- তাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না- কোটি টাকা ব্যয় হয়, একজন ছেলে-মেয়ের পেছনে- এই শিক্ষার পেছনে। কাজেই তাদের কাছে জনগণের একটা দাবি রয়েছে, তারা যেন চিকিৎসা পায়- এই ভাল ডাক্তারের কাছ থেকে। আমরা যেন এমন ভাল ডাক্তার হই, যাতে আমাদের দেশের মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে না যায়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আস্থার অভাবে, অনেক মানুষ আস্থার অভাবে চিকিৎসা নিতে বিদেশে যায়। দেশে এখন অনেক ফ্যাসিলিটি হয়েছে, ভাল হাসপাতাল হয়েছে, যন্ত্রপাতি আছে, ভাল ডাক্তার আছে। কিন্তু এখনো আমরা আস্থা অর্জন করতে পারিনি অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যখাতে আমরা ডেভেলপ করেছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন. স্বাধীনতার সময়, বা তার আগে পরে, আমাদের দেশে মাত্র ৮টি মেডিকেল কলেজ ছিল। এক হাজার সিট ছিল। আর আজকে ১১০টি মেডিকেল কলেজ প্রায়। দেড় লক্ষাধিক বেড। কোন ইন্সটিটিউট ছিল না। এখন ২০টি ইন্সটিটিউট। ৫টি মেডিকেল ইউনিভার্সিটি। আজ এতখানি উন্নয়ন হয়েছে। স্বাধীনতার আগে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ছিল না। এখন প্রায় শতভাগ ওষুধ দেশে তৈরি হচ্ছে। বিশ্বমানের ওষুধ তৈরি হচ্ছে।
ভুলে গেলে চলবে না, এই সরকারের আমলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের সময়েই সেটা সম্ভব হয়েছে। আগে কি ছিল, আর এখন কি আছে? এটা যদি আমরা বিচার করি দেখি, তাহলে বুঝতে পারবো এই সরকারের সময়ে আমরা কি পেয়েছি। স্বাস্থ্য সেবা কতটুকু উন্নত হয়েছে। চিকিৎসা সেবায় কতটুকু উন্নত হয়েছে।