চিকিৎসকদের মুক্তির দাবিতে কঠোর কর্মসূচি বিএমএ’র
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)
রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় আটককৃত চিকিৎসক ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনার মুক্তি এবং ডা. বেগম মাকসুদা ফরিদা আক্তার মিলিকে অন্যায়ভাবে মামলায় জড়ানোর প্রতিবাদে কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)।
শনিবার বিএমএ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চিকিৎসক নেতারা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ডক্টর টিভিকে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।
বিএমএ সভাপতি বলেন, চিকিৎসকদের মুক্তির দাবিতে আগামীকাল রোববার (১৬ জুলাই) সারাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএমএ। এরপর সোমবার ও মঙ্গলবার টানা দুদিন সারাদেশে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ থাকবে। এ সময় সব ধরনের অপারেশনও বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন তিনি।
আন্দোলনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, দুইজন চিকিৎসক এক মাস ধরে জেলে বন্দী হয়ে আছেন। মানবিক কারণে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, বিএমডিসির অধীনে সেসবের তদন্ত করতে হবে। তারা দোষী হলে আদালত তাদেরকে সাজা দেবেন। কিন্তু প্রমাণ সাপেক্ষে বিচারের রায় ঘোষণার আগে কোনভাবেই চিকিৎসকদের সাজা মেনে নেয়া যায় না।
এদিকে, বিএমএ ঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন টিম বিডিএফ এর চেয়ারম্যান ডা. নিরুপম দাশ। বিএমএ’র আন্দোলন কর্মসূচিকে সময়োপযোগী বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। চিকিৎসকদের অধিকার আদায়ের যেকোন ন্যায়-সঙ্গত আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সার্বিক সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছেন এই চিকিৎসক নেতা।
প্রসঙ্গত: কুমিল্লা থেকে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য এসে নবজাতক হারানোর পর মা মাহবুবা রহমান আঁখিরও দুঃখজনক মৃত্যু হয়।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ৯ জুন প্রসব বেদনা শুরু হয় আঁখির। সেই রাতেই নরমাল ডেলিভারির জন্য ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে প্রসূতি আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ডা. সংযুক্তা সাহার বদলে ডেলিভারি করতে যান ডা. মিলি।
তাদের অভিযোগ, স্বাভাবিক প্রসবে জটিলতা দেখা দেয়ায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে সিজার করা হয়। কিন্তু দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রসূতির পেট কাটতে গিয়ে মূত্রনালি ও মলদ্বার কেটে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অজ্ঞান অবস্থায় সিজার করে বাচ্চা বের করার পর বাচ্চার হার্টবিট কমে গেলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে।
এ ঘটনায় ১৪ জুন ধানমন্ডি থানায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে মামলা করেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী। মামলার আসামি করা হয়- সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. মুনা সাহা (২৮), ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা (৩৮), অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার সহকারী মো. জমির, ডা. এহসান, ডা. মিলি ও সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজসহ আরও অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে।
এক পর্যায়ে ১৫ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে গ্রেপ্তার করে ধানমণ্ডি থানা পুলিশ। ১৮ জুন দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আঁখির মৃত্যু হয়।