ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যয়ে এত ব্যবধান কেন?
হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড
ডেঙ্গুর চিকিৎসায় রোগীপ্রতি সরকারি হাসপাতালে খরচ পড়ে ১০ থেকে ২০ হাজার হাজার টাকা। একই চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালে খরচ নিচ্ছে ২ লাখ টাকা। আর কর্পোরেট হাসপাতালে গেলে তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত। হাসপাতাল ভেদে একই রোগের চিকিৎসা ব্যয়ে এতো ব্যবধানকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি দেশে ভয়াবহভাবে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। একই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে মা ও ছেলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন রাজধানীর একটি হাসপাতালে। রোগীর খাবার, হাসপাতালে যাতায়াতে, পরীক্ষা নীরিক্ষা, ওষুধ সব মিলে খরচ হয়ে গেছে ৮ হাজার টাকা। রিকশাচালক স্বামী হঠাৎ এত টাকা যোগাড় করতে না পারায়, ঘরের সম্পদ বন্ধক রেখে টাকার যোগার করতে হয়েছে। পুরো সুস্থ হতে লাগবে আরও টাকা। ঋণের এসব টাকা কতদিনে শোধ করতে পারবেন সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় গোটা পরিবার।
আক্রান্তদের মধ্যে যারা অধিক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, তাদের নেয়া হচ্ছে আইসিইউতে। তাদের চিকিৎসা খরচ আরও অনেক বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি মুগদা হাসপাতালের আইসিইউতে ১৩ দিন ভর্তি থাকা রোগীর খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকার বেশি। রোগীর স্বজনরা জানান, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও সব পরীক্ষার সুযোগ মেলে না। বাধ্য হয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করতে হচ্ছে। এতেও ধারণার চেয়ে খরচ বেড়ে যাচ্ছেন তাদের।
হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডেঙ্গু রোগীর অতিরিক্ত খরচের অন্যতম কারণ অ্যাপারেসিস প্লাটিলেট। রক্তের প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে নেমে গেলে, ১ থেকে ৩ ব্যাগ পর্যন্ত প্লেটিলেট নিতে হচ্ছে রোগীদের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যাধুনিক মেশিনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা ১ ব্যাগ প্লাটিলেট বাবদ খরচ পড়ে ১৪ হাজার টাকা। বেসরকারিতে গেলে এজন্য টাকা গুণতে হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা জানান, গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ ২০৭ জন ডেঙ্গু রোগীর ৮ দিনের খরচের তথ্যের ভিত্তিতে একটি রিপোর্ট পেশ করে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালভেদে ৮দিনে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে।
তবে খরচের এই ব্যবধানকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও সোসাইটি অব মেডিসিনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. এইচ এ এম নাজমুল আহসান। তিনি বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্যারাসিটামল আর স্যালাইনের ব্যবহার বেশী যার খরচ নিতান্তই। শেষের চারদিন রোগীর শারীরিক অবস্থার নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হলেও তাতে পরীক্ষা নীরিক্ষা ও ওষুধ ব্যয় লাখ ছাড়ানো কোন ভাবেই যৌক্তিক নয়।
বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসার খরচ পর্যালোচনা করে কারা অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা এবং ওষুধ কিনতে রোগীদের বাধ্য করছে, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।