চিকিৎসক গ্রেফতারে রোগীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন : বিএসএমএমইউ ভিসি

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2023-07-12 17:41:09
চিকিৎসক গ্রেফতারে রোগীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন : বিএসএমএমইউ ভিসি

বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সাব কমিটি আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ

চিকিৎসকদের গ্রেফতার করায় রোগীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ। 

বুধবার (১২ জুলাই) এ ব্লক অডিটোরিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সাব কমিটি আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

গর্ভাবস্থায় ও প্রসবকালীন জটিলতা কিভাবে কমিয়ে আনা যায়- শীর্ষক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অবস এন্ড গাইনী বিভাগের অধ্যাপক ডা. শিউলী চৌধুরী ও ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দা সাঈদা।

চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সব  প্রোটোকল মেনে রোগীদের সেবা করতে হবে। রোগীদের দুঃখে দুঃখী ও সমব্যাথী হতে হবে।

রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের সাম্প্রতিক ঘটনা উল্লেখ করে ভিসি বলেন, তদন্তের আগেই চিকিৎসকদের ফৌজদারী আইনে আটক বা গ্রেফতার করলে দেশের স্বাস্থ্যখাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এরফলে ব্যাহত হতে পারে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। তদন্তের পর কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যায়। কিন্তু তার পূর্বেই চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত নয়। এতে রোগীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ তখন রোগীদের জরুরি চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা মামলা/গ্রেফতারের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জরুরি চিকিৎসাসেবা দানের ক্ষেত্রে তাদের মাঝে এক ধরণের অনিহা ভাব কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক।

সেন্ট্রাল হাসপাতালের ওই ঘটনা অনেকটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়েছে বলেওমন্তব্য করেন তিনি। এসময় চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন আপগ্রেড করে রাখারও পরামর্শ দেন তিনি। 

অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রসূতি মায়েদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য মিডওয়াইফদের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা অত্যন্ত  জরুরি। এ প্রশিক্ষণ দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তুত রয়েছে। সারা দেশে সিজারিয়ান অপারেশনকে একটি নির্দিষ্ট প্রটোকল ও সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। গর্ভবতী মা ও তার সন্তানের অবস্থা বুঝে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত দিবেন সিজার করা হবে, না-কি নরমাল ডেলিভারি হবে। আগেভাগে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।

ভিসি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে গৃহীত নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে দেশে শিশু মৃত্যু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমেছে। তাঁর  নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে মাতৃ মৃত্যুর হার ২০৩০ সালে প্রতি লাখে ৭০ এ নিয়ে আসতে চাই।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মা ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. শিউলী চৌধুরী। এতে তিনি মিডওয়াইফদের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা, প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিশ্চিত করা, যথাযথ রেফারেল সিস্টেম গড়ে তোলা, সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

ফিটোম্যার্টানাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দা সাঈদা বলেন, প্লাসেন্টা এ্যাক্রেটা ডিসঅর্ডার হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থার অন্যতম। এর ফলে গর্ভফুল প্রায়শই জরায়ুর নীচের দিকে অবস্থান করে এবং খুব গভীরভাবে জরায়ুর দেয়ালে মাংসপেশী ভেদ করে ঢুকে যায়। ফলে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারি করার প্রয়োজন হয় এবং গর্ভফুল আলাদা হওয়ার সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। যেসকল মায়ের আগে সিজার হয়েছে এবং এই সমস্যায় রয়েছে তাদের ঝুঁকির মাত্রা আরো বেশি। সেক্ষেত্রে আগে ভাগেই সতর্ক হওয়াসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা যেমন অনিবার্য তেমন অপারেশনের সময় প্রয়োজন সুদক্ষ অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্সদের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম নিশ্চিত করা।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রোভিসি (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন। সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রোভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন ) অধ্যাপক ডা. মোঃ মনিরুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী।

প্যানেল অব এক্সাপার্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অবস এন্ড গাইনী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেগম নাসরীন, অধ্যাপক ডা. তৃপ্তি রানী দাশ প্রমুখ। 


আরও দেখুন: