সাংবাদিক রনিকে ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়নি : বিশেষজ্ঞ অভিমত

ইলিয়াস হোসেন
2023-07-10 22:25:35
সাংবাদিক রনিকে ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়নি : বিশেষজ্ঞ অভিমত

সাংবাদিক রনিকে ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়নি : বিশেষজ্ঞ অভিমত

চাঁদপুরের স্থানীয় সাংবাদিক ইব্রাহীম রনিকে কোন ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়নি। যক্ষ্মা না হলেও যক্ষ্মার পুরো কোর্স সম্পন্ন করায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বলে যে খবর বেড়িয়েছে তা সঠিক নয়। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন রনি যথেষ্ট সুস্থ আছেন।   


সোমবার (১০ জুলাই) ডক্টর টিভির প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান। তাঁর অধীনেই চিকিৎসা চলছে অধ্যাপক আলী হোসেনের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগকারী সাংবাদিক রনির। 


অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে- ভুল চিকিৎসার যে অভিযোগ আনা হয়েছে- তা সঠিক নয়। কারণ অনেক সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যক্ষ্মার জীবাণু পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে শারীরিক উপসর্গ যেমন- জ্বর, কাশি, কফ, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখে এবং বিভিন্ন পরীক্ষা যেমন- বুকের এক্সরে, রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, সিবিসি ও আরো কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হই। এক্ষেত্রে রোগী ইম্পেরিয়াল টিবি’র চিকিৎসা দেয়া হয়। আলোচিত রোগী রনির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম অনুসরণ করেছেন চিকিৎসক। রোগীর বর্তমান অবস্থা আলোচনা করে পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করার কথা জানান তিনি।   

অধ্যাপক ডা. আতিক আরও বলেন, বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসাধীন সাংবাদিক  রনি এখন অনেক ভাল আছেন। হাসপাতাল ওয়ার্ডে নিজে নিজে স্বাভাবিক হাঁটাচলা করছেন। নিজের কাজ নিজেই সম্পন্ন করছেন। রনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন বলে যে খবর বেড়িয়েছে- তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় এই বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ।

তাঁর মতে, রোগী সম্পর্কে রিপোর্টার মনগড়া কথা লিখেছেন। কোন চিকিৎসকের বক্তব্য তাতে আসেনি। বাস্তব অবস্থা দেখতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে গিয়ে রোগীকে দেখে আসতে বলেন এই বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ।


অধ্যাপক ডা. আলী হোসেনের বক্তব্যঃ


ডক্টর টিভিকে অধ্যাপক ডা. আলী হোসেন জানান, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর চাঁদপুরের সাংবাদিক রনি রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে আমার চেম্বারে আসেন। ওই সময় তার জ্বর ছিল এবং ওজনও যথেষ্ট কমে গিয়েছিল। ওনার চেস্ট এক্সরেতে যক্ষ্মার একটা 'শ্যাডো' ছিলো।


মূলতঃ আমার কাছে আসার আগে চাঁদপুরের এক চিকিৎসক তাকে প্রথমে যক্ষ্মার ওষুধ দেন। রোগী তা সেবন করবেন কি-না তা আমার কাছে জানতে চান। সব দেখে-শুনে চাঁদপুরের চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়েছিলাম।


অধ্যাপক ডা. আলী হোসেন আরও বলেন, রোগী ওষুধ খাওয়ার দুইমাস পর আবার আমার চেম্বারে আসেন। দেখা যায়- এক্সরেতে আগের সেই শ্যাডো আর নেই। এবার তার জ্বরও ছিল না, ওজনও যথেষ্ট বেড়েছে। এতে স্পষ্ট হয় যে, চিকিৎসায় রোগীর  উপকার হয়েছে এবং তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। একই রোগী আবার চার মাস পর আমার চেম্বারে আসেন। তখন আবার যক্ষ্মার সমস্যা পাওয়া যায়। এটাতো হতেই পারে। এমডিআরসহ যেকোনো রোগ আবার ফিরে আসতেই পারে। মেডিকেল সাইন্সেই এটা বলা আছে। যক্ষ্মার ন্যাশনাল গাইডলাইনেও বলা আছে -যদি রোগীর ওজন কমে যায়, বিকেলের দিকে জ্বর আসে, কাশি থাকে তবে যক্ষ্মার ওষুধ ফুল ডোজ দেওয়া যাবে। সুতরাং আমি এখানে কোন ভুল চিকিৎসা দেইনি।


উল্লেখ্য, টিউবারকিউলোসিস (টিবি) বা যক্ষ্মা না হলেও বাংলা ট্রিবিউনের চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি ইব্রাহীম রনিকে যক্ষ্মার চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে সম্প্রতি  বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, যক্ষ্মা না হয়েও যক্ষ্মার পুরো কোর্স সম্পন্ন করায় তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। চিকিৎসা নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে


আরও দেখুন: