অভিযোগ প্রমাণের আগেই চিকিৎসককে জেলে নেয়া ভালো লক্ষণ নয়: অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
অভিযোগ প্রমাণের আগেই দাগি আসামির মত চিকিৎসককে আটক করে জেলে নেয়া কোন ভালো লক্ষণ নয়। এর ফলে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীর চিকিৎসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারেন অনেক চিকিৎসক।
সম্প্রতি ডক্টর টিভিকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ।
রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগে’ গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদী ও মেডিকেল অফিসার ডা. মুনা সাহাকে আটক করে জেলে রাখা প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন দেশের খ্যাতনামা এই চিকিৎসক।
ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগে মামলা হয়েছে, তার তো কোনো প্রমাণ নেই। এখন তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত হবে, দোষী প্রমাণিত হলে তবেই শাস্তি। কিন্তু তার আগেই দাগী আসামির মত আটক করে জেলে নেয়া- এটা তো কোন ভালো লক্ষণ নয়। বিষয়টা যৌক্তিক বলে মেনে নিতে পারছি না। ভুল চিকিৎসার অভিযোগ থাকলে সেটা বিএমডিসি দেখবেন। তাদের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ বিভিন্ন ধরনের সাজা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসায় কখনও কখনও অবহেলা বা ভুল হয়ে থাকতে পারে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ সাপেক্ষে এর বিচার হওয়া দরকার। সারা দুনিয়াতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সেন্ট্রাল হাসপাতালের ঘটনায় কেবল অভিযোগের ভিত্তিতে দুজন মেয়ে ডাক্তারকে জেলে নেয়া হয়েছে। অনেকদিন হয়ে গেল, তাদের তো জামিন হতে পারে। এখন এই ঘটনার পর থেকে সারাদেশের ডাক্তাররা কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। সঙ্গত কারণেই জটিল রোগীদের অন্যত্র রেফার্ড করা হচ্ছে। এতে রোগীদের ভোগান্তিও বেড়েছে।
অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত সেই দুর্ঘটনার পর থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে হাসপাতালটির স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। ওটি, আইসিইউ বন্ধ। এসব তো কোন যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। আরও অনেক চিকিৎসক সেখানে আছেন। সেখানে অনেক জরুরি রোগী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সেন্ট্রাল হাসপাতাল অবিলম্বে পুরোপুরি খুলে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান কিভাবে হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন,সেন্ট্রাল হাসপাতালের এই ঘটনা তো চিকিৎসা জগতে প্রথম না, আবার শেষও না। ভবিষ্যতেও হতে পারে। বিএমডিসিসহ স্বাস্থ্যের সংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবেগ অনুসারে বিচার ফয়সালা না করে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা থেকে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য এসে নবজাতক হারানোর পর মা মাহবুবা রহমান আঁখিরও দুঃখজনক মৃত্যু হয়।
রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, ৯ জুন প্রসব বেদনা শুরু হয় আঁখির। সেই রাতেই নরমাল ডেলিভারির জন্য ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে প্রসূতি আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ডা. সংযুক্তা সাহার বদলে ডেলিভারি করতে যান ডা. মিলি।
তাদের অভিযোগ, স্বাভাবিক প্রসবে জটিলতা দেখা দেয়ায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে সিজার করা হয়। কিন্তু দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রসূতির পেট কাটতে গিয়ে মূত্রনালি ও মলদ্বার কেটে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অজ্ঞান অবস্থায় সিজার করে বাচ্চা বের করার পর বাচ্চার হার্টবিট কমে গেলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে।
এ ঘটনায় ১৪ জুন ধানমন্ডি থানায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে মামলা করেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী। মামলার আসামি করা হয়- সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. মুনা সাহা (২৮), ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা (৩৮), অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার সহকারী মো. জমির, ডা. এহসান, ডা. মিলি ও সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজসহ আরও অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে।
এক পর্যায়ে ১৫ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে গ্রেপ্তার করে ধানমণ্ডি থানা পুলিশ। ১৮ জুন দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আঁখির মৃত্যু হয়।