সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাফলতি নেই, আটক চিকিৎসকদের মুক্তি দাবি

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2023-07-02 18:42:06
সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাফলতি নেই, আটক চিকিৎসকদের মুক্তি দাবি

প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের কোন গাফলতি নেই- দাবি কর্তৃপক্ষের

বহুল আলোচিত প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের কোন গাফলতি বা অবহেলা নেই বলে দাবি করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একইসাথে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আটক দুই চিকিৎসকের অবিলম্বে মুক্তি দাবি জানিয়েছেন। রোববার (২ জুলাই) সেন্ট্রাল হসপিটালের পক্ষে পরিচালক ডাঃ এম. এ. বি সিদ্দিক এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালক ডাঃ এম.এ. কাশেমের যৌথ স্বাক্ষরে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব দাবি জানানো হয়েছে।  

বিজ্ঞপ্তির ভাষ্য অনুযায়ী, অপারেশন থিয়েটারে রোগীর লাইফ সেভিংয়ের জন্য ডা. জামিল, ডা. আলম এবং পরবর্তীতে ডা. মিলিসহ পুরো টিম প্রশংসাযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। কর্তব্যরত ডাক্তাররা মেডিকেল ইথিকস মেনে সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সাথে চিকিৎসা দেন এবং রোগীর স্বার্থ  বিবেচনা করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেন। প্রাপ্ত তথ্যে প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাফলতি বা অবহেলা প্রতীয়মান হয় না। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হাসপাতালের শীর্ষ দুই কর্তা বলেছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া ছাড়াই ডা.  শাহজাদী ও ডা. মুনা সাহাকে কারাগারে অন্তরীণ রাখা দুঃখজনক। এতে করে হসপিটালের সেবাপ্রদানকারী ডাক্তার ও স্টাফদের মাঝে ভীতি বা আস্থার সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।

এছাড়াও, মৃত আঁখির স্বামী মোঃ ইয়াকুব আলীর দায়ের দায়ের করা ফৌজদারী মামলায়  ডাক্তারদের আটক রাখা, অন্যান্যদের হয়রানী করা এবং পাশাপাশি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া ছাড়াই বিপুল অংকের (দুই কোটি) টাকা ক্ষতিপূরণ দাবী করা স্ববিরোধী বলে মন্তব্য করা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।  

মিথ্যাচার করেছেন অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহাঃ

এ ঘটনা থেকে নিজের দায় এড়াতে বিভিন্ন সময়ে অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা সংবাদ সম্মেলনের নামে সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে নানাভাবে মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। তিনি বিভিন্ন প্রেস বিফ্রিংয়ে সেন্ট্রাল হসপিটালকে দায়ী করে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তার বক্তব্যে সেন্ট্রালের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। পাশাপাশি তিনি নিজের দায় সেন্ট্রালের উপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। হসপিটাল কর্তৃপক্ষ এই ঘটনা জানতে পারেন ঐদিন ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, অধ্যাপক ডাঃ সংযুক্তা সাহা ১০ জুন রাত ১টা ৪০ মিনিটে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এরআগে উক্ত রোগী হসপিটালে আসবেন মর্মে অবহিত হন। সেইসাথে রোগীর চিকিৎসা কিভাবে হবে- তা তাঁর অন কল ডাক্তারদের নির্দেশনা দিয়ে হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করেই চলে যান। 

অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সেন্ট্রাল হসপিটাল তাকে কোন কমিশন দেয়নি এবং তার নিকট থেকে কমিশন নেয়নি। হসপিটালের বিল কত এবং ডাক্তারের বিল কত তা বিলে উল্লেখ থাকে। বিল সক্রান্ত বিষয়ে অধ্যাপক ডাঃ সংযুক্তা সাহার বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বিল যাচাইয়ের জন্য তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেছেন। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার জোরপূর্বক নির্দেশ ছিল, তার অনুপস্থিতিতেও তার নামে রোগী ভর্তি দিতে হবে। ইতোপূর্বেও তার অবর্তমানে তার নামে রোগী ভর্তি হয়েছে এবং তার মনোনীত কন্সালটেন্টরা রোগীর চিকিৎসা দিয়েছেন।  

সেন্ট্রালের নিয়ম কানুন না থাকা সত্ত্বেও, ২০০৭ সাল থেকে কিভাবে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেন- এই প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। পাশপাশি বিভিন্ন ভিডিও’র মাধ্যমে হসপিটালকে প্রমোট করলেন কেন? অন্য একটি প্রতিষ্ঠান ছেড়ে আসলেন কেন? প্রকৃত অর্থে তিনি সেন্ট্রালের সার্ভিস ও সিস্টেম সম্পর্কে সব সময় সেন্ট্রাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ প্রদান ও প্রশংসা করেছেন- বলে দাবি করেছেন সেন্ট্রাল কর্তৃপক্ষ।  

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে- ঘটনার আগে, মোঃ জমিরের সাথে রোগীর কথোপকথনের রেকর্ড এবং রাত ১০টা ৩০ মিনিটের পর থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত আলোচিত রোগীর বিষয়ে অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার মোবাইলের কল লিষ্ট এবং Whatsapp এবং মেসেঞ্জারের কথোপকথন ফরেনসিক করে রেকর্ড যাচাই করলে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।

মিডিয়ার মাধ্যমে ডা. শাহজাদী এবং ডা. মুনার ১৬৪ ধারায় বক্তব্য সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে।  ডা. শাহজাদীর বক্তব্য অনুযায়ী- উক্ত রোগীর বিষয়ে অধ্যাপক ডাঃ সংযুক্তা সাহার সাথে মোবাইলেও কথা হয়েছে। ডা. সংযুক্তা সাহার মোবাইলটি ফরেনসিক টেস্ট করলে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে।

অধ্যাপক ডাঃ সংযুক্তা সাহা সেন্ট্রাল হসপিটাল ছাড়া আরো হসপিটালে চেম্বার করতেন। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে যে, নরমাল ডেলিভারী এবং তাঁর রোগীদের জন্য তার নিজস্ব টিম ছিল। তার অন কল ডাক্তার ছিল। অনকল ডাক্তাররাই তার রোগী ডিল করতেন। সেন্ট্রালের ডাক্তাররা অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা ও তার টিমের নির্দেশনা অনুসারে কেবল দায়িত্ব পালন করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। 

অধ্যাপক ডা. সংযুক্ত সাহার ব্যক্তিগত সহকারী জমির ও অন্যান্যদের সাথে কি কথা হয়েছে তা শুধু মোঃ ইয়াকুব আলী এবং তাঁরাই বলতে পারবেন। সহকারী মোঃ জমির তার ব্যক্তিগত স্টাফ। মোঃ জমিরের সাথে যোগাযোগ করেই হসপিটালে আসেন। হসপিটালের কোন স্টাফ/চিকিৎসকের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেননি।  মোঃ জমিরের সাথে মামলার বাদী মোঃ ইয়াকুব আলী এবং ডাঃ শাহজাদী ও অধ্যাপক ডাঃ সংযুক্তা সাহার সাথে এ সংক্রান্ত বিষয়ে সকল কথোপকথন জানতে পারলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। 

মরহুমা মাহবুবা রহমান আঁখিকে অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার আন্ডারে ভর্তির বিষয়ে সেন্ট্রালের  প্রশাসন/ ম্যানেজমেন্টের কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী নিজেই বলেছেন যে, তিনি আনুমানিক ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে হসপিটালের দায়িত্বরত উপ-পরিচালক ডাঃ মাসুদ পারভেজকে এ বিষয়ে অবহিত করেন। ম্যানেজমেন্ট ঘটনা জানার পরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া সেন্ট্রাল হসপিটালের বক্তব্য হচ্ছে, মরহুমা মাহবুবা রহমান কুমিল্লার যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন ঐ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা রোগীর কি ডায়াগনোসিস করেছিলেন এবং কি এডভাইস করেছিলেন, কুমিল্লা থেকে সেন্ট্রালে আসা পর্যন্ত কি কি ঘটনা ঘটেছে এবং রাস্তায় রোগীর অবস্থা কেমন ছিল এ সংক্রান্ত সকল তথ্য উপাত্ত নিয়ে প্রকৃত ঘটনা কি ঘটেছে- তা উদঘাটন করা হোক এবং প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা। 

অভিযোগ প্রমানিত হওয়া ছাড়াই বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে সেন্ট্রাল হসপিটালকে দোষী হিসেবে সাব্যস্ত করে কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দেওয়া এবং অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার ভিত্তিতে আইন অনুযায়ী বিষয়টির সমাধান করা। মোট কথা সত্য যাতে উদঘাটিত ও প্রকাশিত হয়।

প্রসঙ্গত: কুমিল্লা থেকে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য এসে নবজাতক হারানোর পর মা মাহবুবা রহমান আঁখিরও দুঃখজনক মৃত্যু হয়। স্বজনদের দাবি অনুযায়ী- ৯ জুন প্রসব বেদনা শুরু হয় আঁখির। সেই রাতেই নরমাল ডেলিভারির জন্য ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে প্রসূতি আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ডা. সংযুক্তা সাহার বদলে ডেলিভারি করতে যান ডা. মিলি।

তাদের অভিযোগ, স্বাভাবিক প্রসবে জটিলতা দেখা দেয়ায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে সিজার করা হয়। কিন্তু দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রসূতির পেট কাটতে গিয়ে মূত্রনালি ও মলদ্বার কেটে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অজ্ঞান অবস্থায় সিজার করে বাচ্চা বের করার পর বাচ্চার হার্টবিট কমে গেলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে।


এ ঘটনায় ১৪ জুন ধানমন্ডি থানায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে মামলা করেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী। মামলার আসামি করা হয়- সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. মুনা সাহা (২৮), ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা (৩৮), অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার সহকারী মো. জমির, ডা. এহসান, ডা. মিলি ও সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজসহ আরও অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে।

গত ১৫ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে গ্রেপ্তার করে ধানমণ্ডি থানা পুলিশ। ১৮ জুন দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আঁখির মৃত্যু হয়।


আরও দেখুন: