সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও ডা. সংযুক্তার নিবন্ধন বাতিল দাবি
এভাবে আর কোনো ‘হত্যাকাণ্ড’ যাতে না ঘটে, সেজন্য হাসপাতালগুলোতে আলাদা মনিটরিং সেল গঠনের অনুরোধ করেছেন ইয়াকুব
সন্তান জন্ম দিতে রাজধানী সেন্ট্রাল হাসপাতালে এসে কুমিল্লার গৃহবধূ মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তার স্বামী ইয়াকুব আলী।
কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে জমা দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, সেন্ট্রাল হাসপাতাল তথ্য গোপন করে এবং ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে আঁখি ও তার নবজাতক সন্তানকে ‘হত্যা করেছে’। সে কারণে সেন্ট্রাল হাসপাতাল এবং প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা সাহার নিবন্ধন বাতিলের পাশাপাশি ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন ইয়াকুব।
অভিযোগে তিনি লিখেছেন, তার স্ত্রী গর্ভধারণের পর ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারিবিষয়ক ফেসবুক ভিডিও দেখে তারা ডা. সংযুক্তা সাহার কাছে চিকিৎসা সেবা নেওয়া এবং সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী আঁখিকে কয়েকবার ডা. সংযুক্তা সাহার কাছে দেখানো হয়।
ইয়াকুব বলছেন, গত ৯ জুন রাত ৯টায় আঁখির প্রসব ব্যথা শুরু হলে তারা প্রথমে ডা. সংযুক্তা সাহার সহকারী জমিরকে ফোন করে বিষয়টি জানান। জমির এবং সংযুক্তা সাহার একজন সহকারী চিকিৎসক চেম্বারে আছেন নিশ্চিত করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেন।
সেদিন রাত ১২টা ২৫ মিনিটে আঁখিকে নিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে যান তার স্বামী। সংযুক্তা সাহার চেম্বারে গেলে কর্মচারীরা জানান, চিকিৎসক লেবার ওয়ার্ডে আছেন, তারা তাদের লেবার ওয়ার্ডে নিয়ে যান।
ইয়াকুব অভিযোগ করেন, তিনি ডা. সংযুক্তা সাহার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে একজন সহকারী চিকিৎসক আঁখিকে ভেতরে নিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে। কিছুক্ষণ পর আমাকে নিচে অ্যাডমিশন ফি দিতে বলে। আমি নিচে গিয়ে ডা. সংযুক্তা সাহার নামে অ্যাডমিশন নিই। রশিদ এনে ডা. সংযুক্তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বলা হয়– আপনার স্ত্রীর ডেলিভারি হচ্ছে, সংযুক্তা সাহা ম্যাডাম ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবে।’
ইয়াকুব বলেন, ‘আমার অনুমতি না নিয়ে ডা. সংযুক্তা সাহার টিমের সদস্য মুনা সাহা, শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা আমার স্ত্রীকে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করায়। সন্তান প্রসব করানোর জন্য সাইড কাটতে গিয়ে মূত্রনালি, মলদ্বারসহ অন্যান্য অর্গান কেটে ফেলে। এতে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়, যা বন্ধ করতে তারা ব্যর্থ হন। আমার অনুমতি ছাড়া অজ্ঞান অবস্থায় ওটিতে নিয়ে সিজার করে বাচ্চা বের করে।’
অভিযোগে তিনি বলেছেন, তিনি ডা. সংযুক্তা সাহার খোঁজ করলে অন্য চিকিৎসকরা সকালে তাকে জানান সংযুক্তা সাহা নেই। ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা স্বীকার করেন, তিনি সংযুক্তা সাহার নির্দেশে এ কাজ করেছেন। আমাকে রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিকেল যেতে বলেন।
এরপর পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে স্ত্রীকে ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করান ইয়াকুব আলী। তখন সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, তাদের সন্তান মারা গেছে। ১৮ জুন আঁখিও মারা যান।
ইয়াকুব আলী লিখেছেন, তাদের তিন বছরের সংসার। সন্তানকে নিয়ে তাদের অনেক পরিকল্পনা, অনেক আয়োজন ছিল, অনেক কেনাকাটা করেছিলেন। কিন্তু সেন্ট্রাল হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় নিমিষেই যেন সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আমি এখন বেঁচে থাকার সাহসটুকু হারিয়ে ফেলেছি।
এভাবে আর কোনো ‘হত্যাকাণ্ড’ যাতে না ঘটে, সেজন্য হাসপাতালগুলোতে আলাদা মনিটরিং সেল গঠনের অনুরোধ করেছেন তিনি।
ভুল চিকিৎসা, চিকিৎসায় অবহেলা বা চিকিৎসাজনিত অভিযোগের প্রতিকার পেতে বিএমডিসিতে লিখিত অভিযোগ করা যায়। বিএমডিসি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিলে এবং তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে সেই চিকিৎসকের নিবন্ধন নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য স্থগিত বা চিরতরে বাতিল করতে পারে। নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেলে সেই চিকিৎসক আর বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন না।