প্রাইভেট পোস্টগ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের সংবাদ সম্মেলনে দেয়া লিখিত বক্তব্য
প্রাইভেট পোস্টগ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডক্টরস এসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলন
ভাতা বাড়ানোর দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ শনিবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্রাব) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রাইভেট পোস্টগ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডক্টরস এসোসিয়েশনের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকদের দেয়া লিখিত বক্তব্য হুবহু ডক্টর টিভির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল :
চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত চিকিৎসকবৃন্দ, উপস্থিত মিডিয়া প্রতিনিধিগণ, আপনারা আমাদের ডাকে সবসময়ই সাড়া দিয়ে পাশে থেকেছেন, আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।
আপনারা জানেন, আমরা প্রশিক্ষণরত চিকিৎসকরা সম্মিলিতভাবে চিকিৎসাখাতে আমাদের বাস্তবিক সমস্যা এবং প্রতিকূলতার কথা চিন্তা করে কিছু মৌলিক এবং যৌক্তিক দাবী নিয়ে সরব হয়েছি। এর যৌক্তিকতা আপনারা জানেন এবং এই প্রেক্ষিতে আপনারা সবাই আমাদেরকে সমর্থন দিয়েছেন, দিয়ে যাচ্ছেন- আমরা এজন্যে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
কিন্তু এই সমর্থন আমাদের মূল সমাধান নয়। আমরা এর বাস্তবায়ন চাই।
আর তাই গত কয়েকদিনে, সময়ের প্রয়োজনে আমাদের এই যৌক্তিক দাবী সংক্রান্ত সবকিছু আপনারা দেখেছেন এবং আপনারা সবকিছু জানেন। এই বিষয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই।
কিন্তু আজ, খুব দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমরা আপনাদের ডেকেছি।
আমরা বিসিপিএস এ গিয়েছিলাম। সমস্ত স্যার ম্যামদের সাথে আমাদের খুব আন্তরিক কথাবার্তা হয়েছে।
কিন্তু রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান- বিএসএমএমইউ-তে আমরা যখন গিয়েছি, আপনারা দেখেছেন, আমরা কতটা অসহায়ত্বের মধ্যে পরে গিয়েছিলাম।
মাননীয় ভিসি স্যার আমাদের পিতৃতুল্য ব্যক্তি। আমরা উনার কাছে একটা সমাধানের আশায় গিয়েছিলাম। অথচ, আমাদের বিরুদ্ধে বেশকিছু এলিগেশন এসেছে -
১. আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিতে হাত দিয়েছি এবং ছবি দুটো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আমরা বিনীতভাবে আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা বিএসএমএমইউতে গিয়ে দেখে আসুন আদতে আমাদের বিরুদ্ধে আনা এই অপবাদ সত্যি কী না। আমরা সেদিন ভিডিও করেছি। এবং আপনারা চাইলে সেটা এক্ষুনি দেখতে পারেন।
২. আমরা একটা মহৎ পেশায় নিয়োজিত আছি। তাই আমাদের যৌক্তিক দাবী সংক্রান্ত আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে আমরা পরিচালনা করছি। অথচ প্রশ্ন এসেছে- আমাদের এই আন্দোলনের পেছনে রাষ্ট্র বিরোধী ভিন্ন মতাদর্শ, ভিন্ন উদ্দেশ্য জড়িত কী-না!
আমরা খুব স্পষ্টভাবে, জোর গলায় বলতে চাই- আমরা স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ এক সাহসী প্রজন্ম। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ শুধু স্লোগানে নয়, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমাদের মননে, চিন্তা এবং চেতনায় ধারণ করি। একটি মহৎ পেশায় নিয়োজিত দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেধাবী ছেলে আমরা। আমরা বিবেক বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করি এবং আমাদের কোন কর্মকাণ্ডে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সে ব্যাপারে আমরা সবসময়ই সচেতন।
আমরা এমন কিছু কখনোই করবো না, যাতে একটা মেধাবী প্রজন্মের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছেলেদের উপর আস্থা হারান। কথা একদম ক্লিয়ার এবং লাউড!
৩. এলিগেশন এসেছে, বিএসএমএমইউ-তে আমরা সেদিন একজন সম্মানিত স্যারের গায়ে ঢিল মেরেছি আর তাতে স্যারের চোখে কনজাংক্টিভাল হেমোরেজ হয়েছে !!
মাননীয় ভিসি স্যারের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে আমরা এতটুকুই বলতে চাই,
"স্যার, আপনি কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে আহত স্যারকে আমাদের এবং মিডিয়ার সামনে আনতে পারেন নাই। আপনি দাবী করেছেন, আমরা আপনার সন্তানতুল্য। সন্তানের বিরুদ্ধে একজন পিতা হিসেবে এমন মিথ্যাচার করে সন্তানের কাছে তার পিতার গ্রহনযোগ্যতাকে এভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না।"
৪. মাননীয় ভিসি স্যার বলেছেন- পৃথিবীর কোথাও প্রশিক্ষণরত চিকিৎসক কিংবা প্রশিক্ষণরত শিক্ষার্থীদের কোন ভাতা প্রদান করা হয় না।
স্যার এই ভাতাকে বৃত্তি বলে উদ্ধৃত করেছেন।
এখন এটা কি ভাতা নাকি বৃত্তি নাকি স্যালারী- আমরা সেই বিতর্কে যাবো না। আমরা ইউরোপ, অ্যামেরিকায়ও যাবো না। আপনি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কিংবা পাকিস্তানের দিকে তাকান। ওখানে "রেসিডেন্ট পোস্ট গ্র্যাড ডাক্তারদের "মান্থলি ট্রেইনিং এলাওয়েন্স" কত তার একটা ডকুমেন্ট আমরা আপনাদেরকে দিতে চাই।
স্যারের কথার প্রেক্ষিতে আমরা আর কিছুই বলতে চাই না। বাকিটা আপনারা যাচাই-বাছাই করে নেন।
প্রশ্ন আসতে পারে- আমরা এখানে সব জেনে বুঝেই এসেছি। তাহলে এখন আন্দোলন কেন??
উত্তরটা হচ্ছে- আপনি সরকারি হাসপাতালে কতটুকু সেবা পাবেন সেটা অবশ্যই জেনে-বুঝেই যান। কিন্তু তাতে আপনারা কতটুকু সন্তুষ্ট হন??
সুযোগ থাকলে আপনি তার সদ্ব্যবহার করতে চাইবেন- এটাই স্বাভাবিক।
আমরা কিন্তু হাসপাতালে আমাদের সাধ্যের বাইরে গিয়েও আমাদের রোগীদের জন্য চেষ্টা করি।
আর যেখানে স্বাস্থ্যখাতে প্রতি বছর অর্ধেকের বেশি বাজেট ফিরে যায় সেখানে এই সুযোগ কতটা প্রাপ্তব্য সেটা বলাই বাহুল্য।
যেটার অভাব সেটা হচ্ছে- আপনার সদিচ্ছা।
৫. গত ১৩ তারিখ রাতে মাননীয় ভিসি স্যার একাত্তর টিভির জার্নালে বলেছেন, সেদিন ঢাকার বাইরের মেডিকেল থেকে যারা বিএসএমএমইউ-তে এসেছি - তারা কেউই যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে আসেননি।
আপনারা ওসব মেডিকেলে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, প্রতিটা বিভাগে সম্মানিত স্যার ম্যামকে জানিয়েই ওরা এসেছে।
স্যার ম্যামদের কাছে যে আমরা গিয়েছি, তাদেরকে অবহিত করেছি- আমাদের কাছে তার সাক্ষ্য প্রমাণাদি সমস্ত কিছু আছে।
৬. অধিকন্তু, মাননীয় ভিসি স্যার গত ১৪ তারিখ সকালে ওনার প্রতিষ্ঠানে "যদি কেউ ১৩-১৫ তারিখ পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে অনপুস্থিত থাকে, তাহলে তাদের নামলিপিবদ্ধপূর্বক সত্যায়িত করে যাতে ওনার এডমিনিস্ট্রেশনে জমা দেয়া হয়।"
- এমন একটি প্রজ্ঞাপন জারী করেছেন। এবং ১৩ তারিখ সকালে মৌখিকভাবে উনি এটাও বলেছেন যে, কেউ তার প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে তিনদিন অনপুস্থিত থাকলে তাকে তার কোর্স থেকে বহিঃষ্কার করা হবে !!'
আপনাদেরকে আমরা সেই কপিও হস্তান্তর করছি।
আজকে আমাদের দুঃখ হচ্ছে- এমন একটা প্রজ্ঞাপন আমরা আমাদের দাবীর স্বার্থে স্যারের কাছে আশা করেছিলাম!!
আজকের প্রেস কনফারেন্সের এই পর্যায়ে ভিসি স্যারের আনা এলিগেশনের প্রতিটা কথার ব্যাখ্যা আমরা দিয়ে দিয়েছি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- আমরা স্যারের কাছে কী চাই??
আমরা চাই,
স্যার যদি এরপরও আমাদের কর্মকাণ্ডে মনক্ষুন্ন হন, আমরা স্যারের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
আর একজন পিতৃতুল্য অভিভাবক হিসেবে স্যার আমাদের বাস্তবিক প্রেক্ষাপটের কথা চিন্তা করে স্যারের যতটুকু যেটা করা প্রয়োজন, স্যার যেন সেটা করেন এবং স্যার বলেছিলেন, উনি আমাদেরকে নিয়ে আমাদের দাবীর পক্ষে প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ে যাবেন। আমরা স্যারের সাথে যেতে রাজি আছি।
আর শেষ পর্যায়ে আমরা এখন আমাদের চাওয়া বা পরবর্তী পরিকল্পনা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ আন্তর্জাতিক সফর শেষে দেশে ফিরবেন। আমরা অচিরেই চাই, আমাদের শ্রদ্ধেয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়, মাননীয় ভিসি স্যার, বিসিপিএস প্রেসিডেন্ট, ডিজি হেলথ পরিচালক মহোদয়, ডিজি এডুকেশন পরিচালক মহোদয়, স্বাচিপ এবং অন্যান্য অথরিটির সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ যারা আছেন- অনুগ্রহ করে আমাদেরকে একটি সুস্থ দিক নির্দেশনা এবং সুনির্দিষ্ট প্রজ্ঞাপন দিন।
অথোরিটি যদি আমাদের সাথে বসতে চায়, আমরা নিঃশর্তে রাজি আছি। কিন্তু, সেটা কোন আশ্বাসের জন্যে নয়। আমরা এখন সিদ্ধান্ত চাই।
এজন্যে যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে আমাদের বসতে হয়, আমরা তাই-ই করবো।
পরিশেষে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপাকে করজোরে অনুরোধ করবো -
জাতির পিতার হস্তক্ষেপ ছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি, আর আপনার হস্তক্ষেপ ছাড়া বর্তমানে কোন যৌক্তিক আন্দোলন সফলতার মুখ দেখেনি। আপনার প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আগেও ছিল, এখনো আছে। আমাদের চিকিৎসকদের জন্যে আপনি এখন পর্যন্ত যা করেছেন তা ইতিহাসে নজিরবিহীন।
কিন্তু আপা, আজ আমরা আর না পারতে আপনার কাছে এসেছি। আপনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আপনার কর্মী হিসেবে নয়, আপনার ছেলে হিসেবে দাবী নিয়ে এসেছি।
আমরা জানি আপনি আমাদের ফিরিয়ে দেবেন না।
চিকিৎসাখাতকে আরও এগিয়ে নেয়ার জন্যে আজকে আমাদের এই দাবী। আমরা চাই, বাংলাদেশের চিকিৎসাখাতকে বিশ্ব দরবারে আরও উঁচু অবস্থায় নিয়ে যেতে। আপনারা আমাদের তারিখ দিন- আমরা অপেক্ষায় আছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।