স্বাভাবিক প্রসবে প্রসূতিদের আস্থা বরুড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
নরমাল ডেলিভারির পর প্রসূতি মায়ের হাতে শিশুর জন্য উপহার তুলে দিচ্ছেন বরুড়ার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: কামরুল হাসান সোহেল
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রসূতি ওয়ার্ডের পর্যবেক্ষণ কক্ষে চারজন প্রসূতি নিজ নিজ সন্তান নিয়ে বসে আছেন। ১৩ জুন রাতের শেষ দিকে প্রসববেদনা নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন ওই চার মা। পরদিন সকালে অস্ত্রোপচার ছাড়াই স্বাভাবিক নিয়মে ডাক্তার ও অভিজ্ঞ নার্স ও মিডওয়াইফদের সহযোগিতায় তাঁরা সন্তান জন্ম দেন।
তারা জানান, অস্ত্রোপাচার ছাড়া স্বাভাবিভাবে সন্তান প্রসব করায় তাঁরা ভালো ও সুস্থ আছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে গড়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনজন করে প্রসূতি আসেন। তাঁরা প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার ছাড়াই নরমাল ডেলিভারি করান। অস্ত্রোপচার না করায় স্বল্প সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে সন্তান নিয়ে বাড়িতে ফিরে যান মায়েরা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ২৬৭টি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬৪টিতে। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৮, ফেব্রুয়ারিতে ৪৭, মার্চে ৫০, এপ্রিলে ৪৫, মে মাসে ৫৫টি সহ ৫ মাসে ২৩৫ নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। প্রসূতিদের আস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে।
কুমিল্লা জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থান। যোগাযোগ ব্যবস্থা আগে থেকেই বেশ ভালো। এক সময় ভাল সেবার জন্য শহরমুখী ছিলেন স্থানীয় রোগীরা। যারা শহরে যেতে পারতেন না, তারা ছুটতেন বরুড়া উপজেলার বিভিন্ন প্রাইভেট হসপিটাল ও ক্লিনিকে। বর্তমানে চিত্রটা একেবারেই বদলে গেছে।
২০২১ সালের ৬ অক্টোবর বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন ডা: কামরুল হাসান সোহেল। তিনি প্রসূতি চিকিৎসাসেবা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহন করেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারিকে (স্বাভাবিক প্রসব) গতিশীল করার উদ্যোগ নেন। এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। সেইসাথে স্বাভাবিক প্রসবে প্রসূতিদের আগ্রহী করতে বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাভাবিক প্রসবে জন্ম নেয়া শিশুদের মাঝে উপহার দেয়ার প্রচলন করেন তিনি।
এছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের সেবা নিশ্চিত করতে অনলাইনে সেবার প্রচলন করেন। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে আগত গর্ভবতী নারীদের গর্ভকালীন সেবা ও পরামর্শ বিষয়ক সাপ্তাহিক অনলাইন ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা চালু করেন। জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি কনসালটেন্ট দ্বারা মায়েদের স্বাস্থ্য পরামর্শ নিশ্চিত করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: কামরুল হাসান সোহেল বলেন, নরমাল ডেলিভারি মা ও শিশু উভয়ের জন্যই অনেক ভালো। ডেলিভারির ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মায়েদের হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া সম্ভব। নরমাল ডেলিভারি করানো মায়েরা খুব দ্রুত শিশুদেরকে বুকের দুধ পান করাতে পারেন এবং খুব কম সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। এসব কারণে নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতি মায়েরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বলে জানান তিনি।