গরিবের চক্ষু সার্জন ডা. মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্
গরিবের চক্ষু সার্জন ডা. মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্
মাত্র দুই হাজার টাকায় চোখের ছানি অপারেশন করেন বগুড়ার ডা. ইব্রাহিম আই কেয়ার সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত চক্ষু সার্জন ডা. মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্। কম টাকা নিলেও সেবার মানে কোনো ঘাটতি নেই, যে কারণে মাত্র ১০ বছরে প্রায় ২২ হাজার সফল অপারেশন করেছেন তিনি। বিশেষ সাক্ষাৎকারে ডক্টর টিভির সঙ্গে চিকিৎসা জীবনের ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন গরিরের চক্ষু সার্জন খ্যাতি পাওয়া ডা. মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্।
ডা. ইব্রাহিম আই কেয়ার সেন্টারের যাত্রা শুরু ২০১৪ সালে, বগুড়ার ধুনট উপজেলা শহরে। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি জেলার শেরপুরে স্থানান্তর করা হয়। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বগুড়া শহরের পিটিআই মোড়ে চলছে কার্যক্রম।
ডা. মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্ জানান, সাধারণ রোগীর কাছ থেকে ছানি অপারেশনের জন্য মাত্র ২ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন তিনি। এ প্যাকেজের আওতায় রোগীর অপারেশন, আনুষঙ্গিক ওষুধ, হাসপাতালের শয্যা ভাড়া, খাওয়া-দাওয়া, এমনকি রোগীর যাতায়াত খরচও বহন করে ডা. ইব্রাহীম আই কেয়ার সেন্টার! কম খরচে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি অতি দরিদ্র রোগীদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে অপারেশন ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। কম টাকা বা বিনা টাকায় সেবার অবারিত সুযোগ থাকলেও মানসম্মত চিকিৎসাসেবায় কোনো কার্পণ্য করা হয় না বলে জানান ডা. মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্।
তিনি বলেন, রোগীদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকা অবস্থায় অপারেশন করা হয় না। এ ধরনের রোগীদের সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসা নিয়ে তবেই সেন্টারে আসতে বলা হয়। যেসব এলাকায় ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়, সেখানকার জনপ্রতিনিধি, চেয়ারম্যান, মেম্বার, ইমাম ও শিক্ষকদের সুপারিশে রোগীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকেন ডা. মোঃ ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্।
তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করে যে কেউ নিজ এলাকায় চক্ষু ক্যাম্পের আয়োজন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ডা. ইব্রাহীম আই কেয়ার সেন্টার থেকে চিকিৎসক পাঠানো হয়। তারা রোগীদের সমস্যা শুনে রোগী বাছাই করে থাকেন। চোখের ছানি অপারেশনের পাশাপাশি চোখের মাংস বৃদ্ধি, নেত্রনালীর ঘা- এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে।
ডা. মোঃ ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্ আরও জানান, বিশেষ সুবিধা দেওয়া রোগীদের কাছ থেকে ন্যূনতম খরচ নেওয়া হয়। যেহেতু আমি নিজেই একজন চক্ষু সার্জন। এসব রোগীদের কাছ থেকে সার্জারির বিল খুবই কম কিংবা মওকুফ করা হয়। শুধু হাসপাতালের স্টাফদের বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করেই তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। তবে অবস্থাপন্ন রোগীদের কাছ থেকে অন্য হাসপাতালের মতোই স্বাভাবিক খরচ নেওয়া হয়।
কম টাকায় চিকিৎসা দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় এ চক্ষু সার্জন বলেন, পড়ালেখা করে ডাক্তার হয়ে মানবসেবা করার স্বপ্নটা ছোটবেলার। ডাক্তার হওয়ার পর থেকে সেটি ধরে রেখেছি। আমি যেহেতু চক্ষু বিশেষজ্ঞ। আমাদের দেশে চোখের সমস্যায় অনেক রোগী আছে। তাদের অনেকেই চিকিৎসাযোগ্য অন্ধত্বের শিকার। এদের অনেকে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না। অন্ধ হওয়ায় অন্যের সাহায্যে আশায় থাকতে হয়। নিজের কাজ করতে পারেন না। বাথরুম-গোসল-খাওয়া সবকিছুই পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েন। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তারা চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরে পেতে পারেন।
এসব অসহায় মানুষদের স্বাভাবিক জীবনের আনন্দ ফেরানোর ভাবনা থেকে মাত্র দুই হাজার টাকায় চোখের ছানি অপারেশন করার ঘোষণা দেন ডা. মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্। এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার মানুষ চক্ষুসেবা পেয়েছেন। তাদের প্রায় ৭৫ ভাগই ২ হাজার টাকার প্যাকেজে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রায় ৫০০ রোগীকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে সমমানের চিকিৎসা সেবা দিতে পেরেছেন। বাকি রোগীরা স্বচ্ছল কোটায় সেবা নিয়েছেন।
সাধারণত রোগীদের সেন্টারের গাড়িতে করেই নিয়ে আসা হয়। রাতের বেলা অপারেশন হয়। পরদিন সকালে আবার গাড়িতে করে ফেরত পাঠানো হয়। যদি কোথাও গাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা না থাকে, সেক্ষেত্রে রোগীকে বাস ভাড়া দেওয়া হয়। বগুড়া ও তার পারপাশের জেলাগুলো অর্থাৎ, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরের রোগীদের এ সুবিধা দিয়ে থাকে ডাঃ ইব্রাহীম আই কেয়ার সেন্টার। আগামীতে সেবার পরিধি আরও বাড়ানোর স্বপ্ন দেখেন ডাঃ মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্।
ডা. মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্ এমবিবিএস পাস করেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। এরপর চক্ষু বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি এফসিপিএস সম্পন্ন করেন। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সরকারি বিশেষজ্ঞ হিসেবে চাকরি করেছেন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান।