‘বিশ্বের একমাত্র’ ফাইলেরিয়া হাসপাতাল ফের চালু

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2023-06-13 09:46:38
‘বিশ্বের একমাত্র’ ফাইলেরিয়া হাসপাতাল ফের চালু

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯ মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ

গোদ রোগের চিকিৎসায় প্রতিষ্ঠিত নীলফামারীর সৈয়দপুরে ‘বিশ্বের একমাত্র’ ফাইলেরিয়া হাসপাতাল আবারও চালু হয়েছে। সোমবার (১২ জুন) সকাল থেকে হাসপাতালটির চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানিয়েছেন অস্থায়ী আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মান্না চক্রবর্তী।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘কিছু ঝামেলার কারণে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে ৮ মে পরিচালককে চিঠি দেই। হাসপাতালের পরিচালক সব সমস্যা সমাধান করেছেন। চালুর খবরে বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী আসছেন। তারা চিকিৎসাসেবা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।’

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯ মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, পরিচালনা কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বসহ নানা সমস্যায় ধুঁকে ধুঁকে চলার পর গত ৮ মে হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ১ হাজার গোদ রোগী চিকিৎসেবা থেকে বঞ্চিত হন।

হাসপাতালের পরিচালক রাকিবুল ইসলাম তুহিন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন হাসপাতালটি বন্ধ করে সাভারের হাসপাতালটি জমজমাট করার জন্য এখানে ৬৯.৫০ শতক জমির মধ্যে ২৯.৫০ শতক জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। বাকি জমিসহ হাসপাতালটি বিক্রয় করার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। হাসপাতালটি রক্ষার জন্য ডা. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করি। এতে ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ভুল বুঝিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ফাইলেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এ রোগের চিকিৎসার জন্য ২০০২ সালে জাপান সরকারের অর্থায়নে উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ এলাকায় যাত্রা শুরু করে ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইম্যুনোলজি (আইএসিআইবি) হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে ছিল।

হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রকল্প পরিচালক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন ওই সময় স্থানীয়ভাবে ১৮ জন দেশি-বিদেশি চিকিৎসককে নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। জাপান, কানাডা ও বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় দুটি বহুতল ভবন নিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। জাপান ও অন্যান্য দেশ থেকেও গবেষণাকর্মীরা আসেন এখানে।

তবে ২০১২ সালে হাসপাতালটিকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে সংকট সৃষ্টি হয়। পরিচালনা কমিটির দ্বন্দ্বে ভেঙে পড়ে সেবা কার্যক্রম। মুখ ফিরিয়ে নেয় দাতা সংস্থাগুলো। এর পর থেকে ধুঁকে ধুঁকে চলতে থাকে এ হাসপাতাল।

সূত্র আরও জানায়, ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে টোকেন মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার প্রত্যয়ে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাব নামে নতুন করে যাত্রা শুরু করে হাসপাতালটি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা লেপরা বাংলাদেশের সঙ্গে বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তি অনুযায়ী হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক সব ধরনের সহযোগিতা করবে লেপরা বাংলাদেশ। বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রাকিবুল ইসলাম তুহিন পরিচালকের দায়িত্ব নেন। এরপর বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন করে প্রায় ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রত্যেকের কাছে ফেরতযোগ্য জামানতের কথা বলে নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। এভাবে প্রায় ৫০ লাখ টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দেন পরিচালক। এর পর থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জামানতের টাকা ও বেতন পরিশোধের দাবি জানালে বিভিন্ন অজুহাত দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, ৯ মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না তারা। বকেয়া বেতনের দাবিতে সম্প্রতি কর্মবিরতি পালন করেছেন। বেতনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অনেকে চলে গেছেন। পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও এখন আর হাসপাতালে যান না। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে নেসকো। রোগী বহনের অ্যাম্বুলেন্সটি পরিচালনা কমিটির এক সদস্য ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। সম্প্রতি অর্থ নিয়ে দ্বন্দ্বে পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও হাসপাতালের সমন্বয়কারী পদত্যাগ করেছেন। দৈনিক আয়ের অর্থ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের পরিবর্তে জমা হয়েছে পরিচালকের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে।


আরও দেখুন: