ফেনীতে অনুমোদনহীন ক্লিনিক সিলগালা
ভর্তি রোগীদের ফেনী সদর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করে ‘আল মদিনা’ সিলগালা করে দেওয়া হয়
ফেনীতে ‘আল মদিনা’ নামে অনুমোদনহীন একটি বেসরকারি হাসপাতাল সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। রবিবার (১১ জুন) সকাল ১১টার দিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়। এর আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘ভুল চিকিৎসায়’ শিশু মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুভল চাকমা, জেলা সিভিল সার্জনের পক্ষে চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমও) আশিকুদ্দোলা, ফেনী সদর উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে ছিলেন চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমও) যোবায়ের ইবনে খায়ের।
ফেনী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম মাসুদ রানা জানান, শনিবার (১০ জুন) সন্ধ্যায় ফেনী শহরের দাউদপুর এলাকায় আল মদিনা নামে ওই বেসরকারি হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের পরিপ্রক্ষিতে জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে।
তিনি আরও জানান, এ সময় দেখা গেছে, হাসপাতাল পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো অনুমোদন নেই। তা ছাড়া হাসপাতালের অভ্যন্তরে ওটি, প্যাথলজি, ওয়ার্ডসহ নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা রয়েছে। পরে হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের ফেনী সদর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করে ‘আল মদিনা’ সিলগালা করে দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন আগে ফেনী শহরের দাউদপুর এলাকায় কাঁচা বাজার সবজি আড়তের পাশে আল মদিনা’ বেসরকারি হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। গত শনিবার ওই হাসপাতালে ওসমান গনি (৫) নামে এক শিশুকে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে এবং রোগীর স্বজনরা চিকিৎসককে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
শিশু মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনরা ক্ষুদ্ধ হয়ে চিকিৎসক আদনান আহমেদকে মরদেহের সঙ্গে কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে ফেনী মডেল থানা পুলিশ ওই স্থানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওই শিশুর বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হার্নিয়া রোগের অপারেশনের জন্য দুপুরে ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। কথা ছিল সন্ধ্যার পর অপারেশন হবে। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৪টায় ডাক্তার এসে ইনজেকশন পুশ করে অপারেশন থিয়েটোরে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই ছেলের মৃত্যুর খবর আসে।’ তার অভিযোগ, ছেলেকে ভুল অপারেশন করা হয়েছে, এর কারণেই মারা গেছে।
হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, রোগীর অপারেশন ৬টায় হবার বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগে জানায়নি। তবে রোগী হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে।
হাসপাতালের সার্জন চিকিৎসক মো. আদনান আহম্মেদ বলেন, ‘অপারেশন সঠিকভাবে হয়েছে, রক্তক্ষরণও হয়নি। তবে রোগী হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে।’
হাসপাতালের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম জানান, তিনি এ ব্যবসায় নতুন। তবে অনুমোদন নিতে বা সনদের বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না।
ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।’
ফেনী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম মাসুদ রানা জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতকে তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। অনুমোদনহীন হাসপাতালটি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সিভিল সার্জন অফিসে জমা দিতে বলা হয়েছে।