৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেট

ডক্টর টিভি ডেস্ক
2023-06-11 13:12:46
৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেট

৩২ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত

মানসিক সমস্যার জন্য ইন্টারনেটকে দায়ী করেছেন ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন অবসর কাটাতে। ইন্টারনেটের অপরিমিত ব্যবহারের কারণে তাদের স্বাভাবিক জীবনেও প্রচণ্ড নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে পড়াশোনায়। যাদের ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত।

বেসরকারি আঁচল ফাউন্ডেশনের ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রভাব: কতোটুকু সতর্ক হওয়া জরুরি’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার (১০ জুন) অনলাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের সদস্য ফারজানা আক্তার।

আঁচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রোগ্রামার বিপ্লব চন্দ্র সরকার, টাঙ্গাইলের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মারুফ আহমেদ খান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এ সমীক্ষা চালানো হয়। এতে ১ হাজার ৭৭৩ শিক্ষার্থী অংশ নেন, যার মধ্যে ছাত্র ৪৯ দশমিক ৫ এবং ছাত্র ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের আছেন শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।

সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ১৩ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থীর বয়স ১৬ থেকে ১৯ বছর, ৭৬ দশমিক ৩ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর এবং ১০ দশমিক ৫ শতাংশের বয়স ২৬ থেকে ৩০ বছর। জরিপে অংশ নেওয়া ৭২ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায়, তারা জীবনে কখনো না কখনো মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, তাদের মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেটের ভূমিকা রয়েছে। যাদের ২৬ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেটকে পুরোপুরি দায়ী করেছেন। আর মোটামুটি দায়ী ভাবেন ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।

সমীক্ষায় উঠে আসে পড়াশোনার কাজে ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। কিন্তু পড়াশোনার ফাঁকে অনলাইনে প্রবেশ করলে ৫২ দশমিক ৬ শতাংশের পড়াশোনার মনোযোগ হারিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ইন্টারনেট ব্যবহারে অতিরিক্ত আসক্তি তাদের পড়াশোনার মনোযোগ নষ্ট করছে। ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের স্বাভাবিক জীবনে ‘প্রচণ্ড নেতিবাচ ‘ প্রভাব ফেলছে এবং ৫৭ দশমিক ২ শতাংশের স্বাভাবিক জীবনে ‘কিছুটা নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে। ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি আসক্তি অনুভব করেন। তাদের মধ্যে ‘খুব বেশি আসক্ত’ ২২ দশমিক ৪ শতাংশ, ‘মোটামুটি আসক্ত’ ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ‘অল্প আসক্ত’ ২০ দশমিক ৯ শতাংশ।

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ১৩ দশমিক ১ শতাংশ বলেছেন, ইন্টারনেটের ব্যবহার তাদের আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে। এ ছাড়া ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ বলেছেন, অযাচিত কাজে সময় নষ্ট হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশের প্রতিদিন পরিমিত ঘুম হয় না। তাদের মধ্যে ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পরিমিত ঘুম না হওয়ার পেছনে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকে পুরোপুরিভাবে দায়ী করেছেন। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে পর্নোগ্রাফিতে আসক্তির বিষয়ও উঠে এসেছে। ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি বা যৌন উত্তেজক বিষয়-সম্পর্কিত ওয়েবসাইট দেখেন। অন্যের সফলতায় ১০ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর মনে হতাশার সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে।

জরিপের তথ্য অনুসারে, ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর ধৈর্যশক্তির হ্রাস ঘটে, ২৬ শতাংশ হঠাৎ রেগে যান, ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ চুপচাপ হয়ে যান। অন্যদিকে, ৩০ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, তারা যখন অফলাইনে থাকেন, তখন একাকিত্বে ভোগেন।

সমস্যা সমাধানে আঁচল ফাউন্ডেশন ১০টি প্রস্তাবনা দিয়েছে। প্রস্তাবনাগুলো হলো– ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে স্কুল-কলেজগুলোতে ‘ডিজিটাল লিটারেসি প্রোগ্রাম’ চালু করা, ইন্টারনেট রেসকিউ ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আসক্তি কাটিয়ে উঠতে কাউন্সেলিং, থেরাপি এবং শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম প্রদান করা, সামাজিক ও পারিবারিক যোগাযোগে ইন্টারনেট নির্ভরতার পরিবর্তে সরাসরি যোগাযোগকে উৎসাহিত করতে প্রচারণা চালানো, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে নিয়ে ডিজিটাল লিটারেসির প্রশিক্ষণ দেওয়া, একাডেমিক পর্যায়ে আত্ম-সচেতনতামূলক (সেল্ফ কেয়ার অ্যাক্টিভিটিস) কার্যক্রম পরিচালনা করা। এ ছাড়া, নিজেকে জানা ও মানসিক বিকাশে সহায়ক আর্ট থেরাপি, ক্লে থেরাপি, স্টোরি টেলিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা, খেলাধুলা ও ব্যায়ামাগারের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা, সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সোশ্যাল স্কিল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, পরিবার পর্যায়ে যৌনবিষয়ক সঠিক পাঠ নিশ্চিত করা, সাইবার ক্রাইম বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, মানসিক সমস্যা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে মানসিক অসুস্থতা তৈরি হয়। শিক্ষার্থীদের বড় অংশ প্রোডাক্টিভ কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। খেলার মাঠ কমে যাচ্ছে। বিকল্প হিসেবে তাদের কাছে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক চর্চাও আগের চেয়ে কমে গেছে।


আরও দেখুন: