করোনায় ৩২৬ কোটি টাকার হাত ধোয়া প্রকল্প কাজে আসেনি
করোনা মোকাবিলায় দেশে লকডাউন ও হাত ধোয়ার মতো কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে
করোনাকালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) মানুষকে হাত ধোয়ানোর উদ্যোগ নেয়। সারাদেশে জনসমাগম হয়– এমন স্থানে হাত ধোয়ার বেসিন বসায় এ সংস্থা। এজন্য ৩২৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
‘কভিড–১৯ মোকাবিলায় হাইজিন’ শিরোনামের একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। করোনা মোকাবিলায় দেশে লকডাউন ও হাত ধোয়ার মতো কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে।
তবে যে কার্যক্রম মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজে লেগেছে, তা হলো মাস্ক ব্যবহার ও অল্প সময়ের মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) পাবলিক লেকচারে এক গবেষণাপত্রে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
‘সেভেন লেসন ফ্রোম প্যান্ডামিক ফর লো অ্যান্ড মিডল ইনকাম কান্ট্রিস’ শীর্ষক গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আহমেদ মুশফিক মোবারক।
বুধবার (৭ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সন্মেলনকক্ষে ‘কভিড-১৯ মহামারির আগে, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শিক্ষা’ শীর্ষক এ লেকচার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
অধ্যাপক মুশফিক মোবারক বলেন, করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে ধনী দেশ ও বাংলাদেশের মতো গরিব দেশে এক ধরনের পদ্ধতি কার্যকর নয়। বাংলাদেশ শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ ধনী ও উন্নত দেশগুলোর গৃহীত পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। যেমন ধনী দেশগুলো কঠোর লকডাউন দিয়েছিল। এ সময় তারা তাদের নাগরিকদের এসএমএসের মাধ্যমে অর্থ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে লকডাউন কার্যকর হয়নি। কেন না এর ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক নিম্নআয়ের মানুষ দরিদ্র্য হয়েছে। তাই লকডাউন এ দেশের জন্য কোনো কার্যকর পদ্ধতি হয়নি। সেই সঙ্গে হাত ধোয়ার মতো কর্মসূচির পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হলেও এটা করোনা মোকাবিলায় কার্যকর হয়নি। এ পদ্ধতি অন্যান্য অনেক রোগ ও জীবাণু থেকে রক্ষা করেছে।
তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি সামাজিক দূরত্বও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। কিছুটা হয়তো ভূমিকা রেখেছিল। তবে বাংলাদেশে করোনা মহামারী মোকাবিলায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে মাস্ক পরা কর্মসূচি। এ কাজে সমাজে ব্যাপক সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছিল। পরে যখন টিকা আবিষ্কার হয়, তখন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ তা সংগ্রহ করে জনগণের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে স্বাধীনতার আগে থেকে কলেরার টিকা ও স্বাধীনতার পর পোলিওসহ বিভিন্ন রোগের টিকা কর্মসূচির সফলতা করোনার টিকাদান কর্মসূচিকেও সফল করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। দ্রুত সময়ে বেশি মানুষের কাছে টিকা পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। করোনা মহামারীর থেকে শিক্ষা হলো টিকা কার্যক্রমে পরনির্ভরতা এ দেশকে ভুগিয়েছে। কেন না ভারত থেকে যখন টিকা রপ্তানি বন্ধ করা হয়, তখন বাংলাদেশ বেশ সমস্যায় পড়েছে। এক্ষেত্রে টিকা রাজনীতি হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে টিকা উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে।
মুশফিক মোবারক বলেন, আফ্রিকা মাহদেশে এখনো অনেক কম টিকা গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ তাদের অর্থনৈতিক সংকট ও বাংলাদেশের মতো এত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ছিল না। সেই সঙ্গে তাদের ওখানে গ্রাম অনেক দূরে ও জনসংখ্যার ঘনত্ব কম হওয়ায় টিকা পৌঁছানো যায়নি। করোনা ব্যবস্থাপনায় আফ্রিকার দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশ শিক্ষণীয় হতে পারে।
তিনি বলেন, করোনার স্বাস্থ্য ক্ষতির সঙ্গে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয়েছে। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি পূরণ হয়নি। এ ক্ষতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকবে। অর্থাৎ ওই সময়ের শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনে দক্ষ কর্মী নাও হতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. বিনায়ক সেন বলেন, করোনা মহামারী থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশে যে রকম সামাজিক পরিবর্তন আশা করা হয়েছিল, সেটি আসেনি। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে যেভাবে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ওই সময়ে দেখা দিয়েছিল, সেটি পরবর্তী সময়ে কাজে লাগানো হয়নি। বরং কোনো ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমেছে। আবার যে অর্থ বরাদ্দ ছিল সেটিরও কার্যকর ব্যবহার হয়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনার মতো স্বাস্থ্য দুর্যোগে সফল হয়েছে। তবে সামাজিক সংস্কারের দিক দিয়ে ভালো কিছু হয়নি। করোনা মহামারীর পর ইউনিভার্সেল হেলথ ও ইউনিভার্সেল সোশ্যাল প্রটেকশন সিস্টেমে যাওয়া উচিত ছিল, সেটি হয়নি। টিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি হয়েছে, এটি ঠিক হয়নি।