দূষণ ও অস্বাস্থ্যকর খাবারে বাড়ছে ব্লাড ক্যান্সার

ইলিয়াস হোসেন :
2023-05-27 21:02:39
দূষণ ও অস্বাস্থ্যকর খাবারে বাড়ছে ব্লাড ক্যান্সার

দূষণ ও অনিয়মে বাড়ছে ব্লাড ক্যান্সার

বর্তমানে ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ৬ শতাংশ রোগী ব্লাড ক্যানসার বা রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত। তবে, ক্যান্সারের এ ধরণটি দ্রুত বাড়ছে। এমনকি ২০৩০ সাল নাগাদ মোট ক্যান্সার রোগীর ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে বলে শঙ্কা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। ডক্টর টিভিকে এ কথা বলেন 

.........

ব্লাড ক্যানসার বা রক্তের ক্যানসার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত। সময়ের সঙ্গে এ ধরনের রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি পাল্টেছে, অনেক উন্নতিও লাভ করেছে।

মূলত লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা এবং মায়েলোমা এই তিনটিকে আমরা ব্লাড ক্যানসার বলে থাকি। এগুলো হলো বিভিন্ন রক্তকোষের ক্যানসার। রক্তকোষ তৈরি হয় বোনম্যারো বা অস্থিমজ্জায়, তারপর ধাপে ধাপে পরিপক্ব বা পরিণত হয়ে অবশেষে এটি রক্তে আসে। যদি কোনো কারণে অতিমাত্রায় ও অস্বাভাবিকভাবে এই রক্তকোষ তৈরি হয়, তাহলে সেগুলো পরিপক্ব হতে পারে না। এতে প্রচুর অপরিপক্ব ও অস্বাভাবিক রক্তকোষ রক্তপ্রবাহে চলে আসে। মূলত শ্বেত রক্তকণিকাই বেশি আক্রান্ত হয়। কিন্তু ক্রমে অস্থিমজ্জা পুরোপুরি আক্রান্ত হওয়ার কারণে রক্তের অন্যান্য কোষের অভাবও দেখা দেয়।

কেন হয়?

ব্লাড ক্যানসার কেন হয় তার সঠিক কারণটি এখনো অস্পষ্ট। নানা ধরনের তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব, রাসায়নিক বর্জ্য, ধূমপান, কৃত্রিম রং, কীটনাশক, ভাইরাস ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়। এগুলোর প্রভাবে জিনে মিউটেশন ঘটে যায় ও কোষ বিভাজনে অস্বাভাবিক উল্টাপাল্টা সংকেত প্রবাহিত হয়। তখন কোষ বিভাজনে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, অপরিণত অস্বাভাবিক কোষ রক্তপ্রবাহে চলে আসে। ব্লাড ক্যানসার ছোঁয়াচে বা সংক্রামক নয়। ব্লাড ক্যানসার ছোট–বড় যে কারও হতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন?

দীর্ঘদিনের জ্বর, রক্তশূন্যতা, ত্বকে লাল র‌্যাশ, দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্তপাত, হাড়ে ব্যথা, বারবার সংক্রমণ ইত্যাদি সব উপসর্গ নিয়ে প্রকাশ পেতে পারে ব্লাড ক্যানসার। অনেক সময় কেবল রুটিন পরীক্ষা করতে গিয়েই ধরা পড়ে। রক্তের কাউন্ট ও পেরিফেরাল ব্লাড ফিল্মই বেশির ভাগ সময় রোগ ধরিয়ে দেয়। তবে বোনম্যারো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয়। ফ্লো সাইটোমেট্রি, ইমিউনোফেনোটাইপিং ইত্যাদি আধুনিক পরীক্ষা এখন সরকারি হাসপাতালগুলোতেই হচ্ছে। সাইটোজেনেটিকস করলে রোগের কেমোথেরাপির ধরন সম্পর্কে ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, রোগ সারাইয়ের সম্ভাবনা আঁচ করা যায়।

লিউকেমিয়া চিকিৎসায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। শিশুদের একিউট লিউকেমিয়ার চিকিৎসায় নিরাময়ের হার উন্নত বিশ্বে ৯০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ও আধুনিক কেমোথেরাপি রোগীদের সেরে ওঠার আশার আলো দেখাচ্ছে।

 

.....................

বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন : বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ১০ মার্চ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট শুরু করেছিলাম আমরা। বর্তমানে এই চিকিৎসা পদ্ধতি দেশের অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালেও শুরু হয়েছে।

তাই আর নয় বিদেশ। এখন ব্লাড ক্যান্সারসহ অন্যান্য রক্তরোগের উন্নত চিকিৎসা দেশেই সম্ভব।

পাশাপাশি সমন্বিত ক্যান্সার কেয়ার হাসপাতালের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে থাকবে সঠিক রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা, দক্ষ চিকিৎসক ও নার্সের সমন্বয়।
ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বমানের চিকিৎসাব্যবস্থা যেমন কেমোইমিউনো থেরাপি ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন ইত্যাদি চালু রয়েছে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে।

ব্লাড ক্যান্সারের বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে

 

♦ কেমোথেরাপি

♦ ইমিউনোথেরাপি (লিম্ফোমা ও মাইলোমায় কার্যকর)।

♦ টার্গেটেড অ্যান্টিক্যান্সার ও অ্যান্টিবডি ড্রাগ, যা লিম্ফোমা, CMLI, CLL-এর বেলায় বিশেষ কার্যকর।


আরও দেখুন: