সরিষাবাড়ী হাসপাতাল সম্পূর্ণ রোগীবান্ধব : ডা. বদরুল হাসান

ইলিয়াস হোসেন :
2023-05-25 08:52:49
সরিষাবাড়ী হাসপাতাল সম্পূর্ণ রোগীবান্ধব : ডা. বদরুল হাসান

সরিষাবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক

রোগীদের প্রত্যাশা পূরণে শতভাগ সচেষ্ট থাকেন জামালপুরের সরিষাবাড়ী  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক-নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রোগীবান্ধব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম ছড়িয়েছে হাসপাতালটি। শুধু সরিষাবাড়ির মানুষই নন সীমান্তবর্তী সিরাজগঞ্জের কাজিপুর ও টাঙ্গাইল থেকেও রোগীরা আসেন হাসপাতালটিতে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগের জরিপেও উপজেলা পর্যায়ে দেশসেরা হাসপাতাল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ডক্টর টিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বদরুল হাসান। 

আলাপকালে তিনি বলেন, রোগীদের শতভাগ সেবা দিতে প্রস্তুত সরিষাবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক-নার্সসহ পুরো টিম। তারা সবাই  অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ।   

ডা. বদরুল হাসান জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগত রোগীদের বেসরকারির পরীক্ষা নিরীক্ষার উপর নির্ভর করতে হয় না। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সচল আছে। রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে প্রতিদিন এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি হচ্ছে। এক কথায়-  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য সরকার নির্ধারিত প্রায় সবগুলো রোগের পরীক্ষা চলমান আছে সরিষাবাড়িতে। ফলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের বাইরের বেসরকারি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

ডা. বদরুল আরও বলেন, উপজেলা হাসপাতাল হিসেবে সব ধরনের রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয় সরিষাবাড়িতে। পাশাপাশি কয়েকটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাও পেয়ে থাকেন রোগীরা। বর্তমানে হাসপাতালটিতে শিশু বিশেষজ্ঞ, গাইনী বিশেষজ্ঞ, অর্থপেডিক্স বিশেষজ্ঞ ও অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ পদায়ন রয়েছেন। নিয়মিত সার্জারি হচ্ছে। সিজারসহ মাইনর কিছু সার্জারি হয়ে থাকে। সার্জারি বিশেষজ্ঞ থাকলে মেজর অপারেশন করা সম্ভব হতো। এখন মাসে প্রায় ৩শ’র মত মাইনর সার্জারি হচ্ছে। 

এনসিডি কর্ণার থেকে ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের রোগীদের নিবন্ধন করে  নিয়মিত ফ্রি ওষুধ ও চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। উপজেলার এ ধরনের প্রায় ৭০ ভাগ রোগীকে নিবন্ধন করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি। 

অচিরেই চোখের রোগীদের জন্য ডিজিটাল কর্ণার চালু করা হবে। কর্ণারে আগত রোগীদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকেরা ভিডিও-কলের মধ্যে যুক্ত হয়ে চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন। সেন্টারে থাকবেন প্রশিক্ষিত সিনিয়র স্টাফ নার্স। তারা রোগীদের সকল তথ্য ও রিপোর্ট চিকিৎসকদের পাঠাবেন। রিপোর্টের আলোকে ময়মনসিংহ মেডিকেলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা অনলাইনে রোগীর সাথে সরাসরি কথা বলে প্রেসক্রিপশন করবেন। সপ্তাহে ৬দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই সেবা চলমান থাকবে। আগামী ২/১ মাসের মধ্যেই চক্ষু সেন্টারটি চালু করা সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা তাঁর।    

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিদিন বিকাল ৩টা হতে বিকাল ৬টা পর্যন্ত এ সেবা চালু থাকে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং মেডিকেল অফিসাররা রোস্টার ভিত্তিক এ সেবা সচল রেখেছেন। রোগীরা এতে উপকৃত হচ্ছেন বলে জানান সরিষাবাড়ির ইউএইচএফপিও। 

প্রতিনিয়তই শয্যার চেয়ে বাড়তি রোগীর চাপ থাকে হাসপাতালটিতে। এ কারণে অনেকেরই স্থান হয় মেঝে কিংবা হাসপাতালের বারান্দায়। প্রতিদিন বহিঃবিভাগে রোগী আসছেন ৬২০ হতে ৬৫০ জন। জরুরী বিভাগে আসেন গড়ে ৮০ হতে ৯০ জন। নিয়মিত ভর্তি থাকে ৫০ হতে ৫৫ জন।

ডা. বদরুল জানান, ২০২২ সালে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে সেবা দেয়া হয়েছে  ৯১৯৪৯ জনকে। অন্তর্বিভাগ থেকে সেবা পেয়েছেন ১১৫১০ জন। জরুরী বিভাগ থেকে সেবা দেয়া হয়েছে ১৬৭৪৩ জন রোগীকে। এছাড়াও ১৪৪ জনকে সিজার, ১২০৭ জনকে নরমাল ডেলিভারি সুবিধা দেয়া হয়েছে। প্যাথলজি থেকে আয় হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার আটশত ৮০ টাকা। এ্যাম্বুলেন্স থেকে এসেছে ৫ লক্ষ ২০ হাজার চারশত ৫০ টাকার আয়। 

চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বহির্বিভাগ থেকে সেবা পেয়েছেন  ৪৭২৪৭ জন। অন্তঃবিভাগ থেকে ৩৬১০ জন এবং জরুরী বিভাগ থেকে ৬৭৩২ জন রোগীকে সেবা দেয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে ৪৬ জনকে সিজার ও ৩৫২ জনকে নরমাল ডেলিভারি সেবা দেয়া সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়াও প্যাথলজি থেকে আয় হয়েছে ১ লক্ষ ১১ হাজার ৩শত ৮০ টাকা। এ্যাম্বুলেন্স থেকে আয় হয়েছে ২ লক্ষ ২৭ হাজার ৮শত টাকা। 

শয্যা অনুযায়ী চিকিৎসক ও নার্স পদায়নের দাবি জানান ডা. বদরুল হাসান। হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণীর সাপোর্টিং স্টাফের ৬৪ শতাংশ পদ শূন্য রয়েছে। ঘাটতি থাকা জনবল নিয়োগ দেয়া হলে আরও উন্নত সেবা দেয়া সম্ভব হতো বলে জানান তিনি। 

এক প্রশ্নের জবাবে ডা. বদরুল হাসান বলেন, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৬৩ সালে।২০০৮ সালে এটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার প্রচষ্টা চলছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় স্থানের অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে আশু সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যের ঊর্ধতন কর্তকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেন তিনি। 


আরও দেখুন: