ডেঙ্গুর চিকিৎসায় বাংলাদেশ সফল : অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
ডেঙ্গুর চিকিৎসায় বাংলাদেশ সফল : অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর চিকিৎসায় যথেষ্ট বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা সাফল্য দেখিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও খ্যাতিমান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। মঙ্গলবার (১৬ মে) জাতীয় ডেঙ্গু সচেতনতা দিবস উপলক্ষে ডক্টর টিভিকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু নতুন কিছু নয়। ২০০০ সালে দেশে প্রথম শনাক্ত হয়। এরপর প্রতিবছরই কমবেশি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। শুরুতে এটা কেবল বর্ষাকালে দেখা দিত। এখন বছর জুড়েই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি জানান, ডেঙ্গু নির্মূল করতে হলে এর বাহক এডিস মশাকে আগে শেষ করতে হবে। আমরা আর কোন ডেঙ্গু রোগী চাই না। নিয়ম মেনে এডিস মশার বংশ বিস্তার যাতে হতে না পারে সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
ডা. আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গুর চিকিৎসায় আমাদের চিকিৎসকেরা যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে কারণে আগের চাইতে ডেঙ্গুতে প্রাণহানী অনেক কমেছে। সরকার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও জনগণের সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে একটা আশঙ্কার কথা হলো- আগে কেবল শহরেই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যেত। এখন গ্রামেও ডেঙ্গু হচ্ছে। এর মানে হলো- এডিস মশা এখন সারাদেশেই ছড়িয়েছে। এজন্য সবাইকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। ঘরের আশপাশে যাতে পানি জমে এটা জন্ম নিতে না পারে- সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তাছাড়াও এখন বছর জুড়েই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। অথচ শুরুতে এটা কেবল বর্ষাকালেই শনাক্ত হয়েছে।
তিনি জানান, ডেঙ্গুর প্রচলিত ধরন বদলে গেছে। আগে ডেঙ্গু হলে- শুরুতে উচ্চমাত্রার জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা ও গায়ে র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যেত। এরপর ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরেজিকের নানা লক্ষণ (প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমে যাওয়া, দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ ও পায়ুপথে রক্তপাত) দৃশ্যমান হতো।
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অনেকেরই জ্বর শুরুর দু-একদিনের মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরেজিকের লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। সেইসাথে রোগীর শারীরিক অবস্থারও মারাত্মক অবনতি ঘটছে। স্বল্প সময়ে ‘শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে হার্ট, কিডনি, লাংসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের রোগীদের আইসিইউ-তে নিতে হচ্ছে। দুর্ভাগ্যক্রমে এরমধ্যে কিছু রোগীকে বাঁচানো যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ২০০০ সালে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু জ্বর দেখা দেয়। সেই বছরে ৯৩ জন মারা যায়। ৩ বছর পরে মৃত্যুর সংখ্যা ধীরে ধীরে প্রায় শূন্যে নেমে আসে। তবে এটি আবার ২০১৮ সালে ফিরে আসে, এতে ২৬ জন মারা যায় এবং ১০,১৪৮ জন আক্রান্ত হয়। ২০১৮ এর আগে সর্বোচ্চ আক্রান্ত লোকের সংখ্যা ছিলো ২০০২ সালে, ৬,২৩২ জন। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। সে বছর এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবে ১ লাখ বলে জানানো হয়। এর মধ্যে মারা যান ১২১ জন।