বাড়তে পারে ডেঙ্গু, নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ জরুরি

ডক্টর টিভি ডেস্ক
2023-05-05 12:56:19
বাড়তে পারে ডেঙ্গু, নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ জরুরি

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১১ জন

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এক হাজার ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, এর মধ্যে ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৫৭১ রোগী। ঢাকার বাইরে ৪৯১ জন। এই সময়ে মারা গেছে ১১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘিরে একটু আগেভাগেই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরের প্রবণতা দেখে এটা হচ্ছে আমাদের একটা অনুমান, যা ভুল হলে আমরা খুব খুশি হব যে, শনাক্তের সংখ্যা কম হলো। কিন্তু আপনাকে তো প্রস্তুতিটা রাখতেই হবে।’

সাধারণত বর্ষাকালেই ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার বিস্তার হয়। আর ডেঙ্গুর ‘পিক’ বা সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়ে থাকে জুলাইয়ের পর থেকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে এখন বর্ষার সময়কাল অনুমান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সঠিক সময় মশা নিয়ন্ত্রণের।

কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘আমরা এখন মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে এবার এডিস মশার যে ঘনত্বটা পাচ্ছি, তা একটু বেশি। আবার সাম্প্রতিক রোগী ভর্তির ট্রেন্ডও বেশির দিকে। এ জন্য আমরা সতর্কবার্তা দিচ্ছি যে, এডিস মশা যেহেতু বেশি, ডেঙ্গুও বেশি হতে পারে।’

চলতি মে মাসের প্রথম দুই দিনে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে আসে যথাক্রমে ২৪ ও ২৭ জন। পরের দুই দিনে অবশ্য সংখ্যাটা কমে দাঁড়ায় ১৬ ও ৯ জনে। তবে এটি শুধুমাত্র হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা। আর সরকারি হিসাবে সবটা আসে না বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, বিগত কয়েক বছরে ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে ২০১৯ সালে। সে বছর ১ লাখের বেশি লোক শনাক্ত হয়। আর সবচেয়ে বেশি মারা যায় ২০২২ সালে মোট ২৮১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম মনে করেন, এখন মানুষ সচেতন হয়েছে। তারা চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে, ল্যাবে টেস্ট করাচ্ছে। ফলে সংখ্যাও বাড়ছে। আরেকটা অংশ হয়তো খেয়াল করেনি, নিম্ন আয়ের মানুষ অথবা তার আশপাশে সেই সুবিধাটা নিতে আগ্রহী ছিল না, জ্বর হয়ে গেছে ২-৩ দিন, ফলে সেটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

তবে পরিস্থিতি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তাদের জন্য, যারা দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডেঙ্গুর মোট চারটি ভ্যারিয়েন্ট আছে। একই ভ্যারিয়েন্টে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে সেটি শরীরে খুব একটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে না। তবে যদি অন্য কোনো ভ্যারিয়েন্ট দ্বিতীয়বার কাউকে আক্রান্ত করে তাহলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

ডা. নাজমুল বলেন, ‘কমিউনিটিতে চারটা ভ্যারিয়েন্টই আছে। এখন টু, থ্রি বা ফোর যদি আমাকে কামড়ায়, সেটা দিয়ে যদি আমার জ্বর হয় তাহলে সেটা মারাত্মক হবে। সেটা কিন্তু সাধারণ ডেঙ্গুর মতো হবে না। এখন গত দুই দশকে বা তারও আগে থেকে মানুষের তো ডেঙ্গু হয়েছে, অনেকে তো পরীক্ষাও করেনি, তাদের ঝুঁকিটা বেশি। যেটা গত কয়েক বছরে আমরা দেখছি, আইসিউতে বেশি যাচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।’

রাজধানীতে মশা নিয়ন্ত্রণের বড় দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এ বছর তারাও তাদের কাজে কিছু পরিবর্তন এনেছেন বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত সকালে লার্ভিসাইড আর বিকেলে ফগিং করতাম। এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি লার্ভিসাইডের ওপর, অর্থাৎ লার্ভা থেকে যাতে মশারই জন্ম না হয়, সেটা বেশি কার্যকরী হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত টুল বিটিআই আমরা এ মাস থেকেই প্রয়োগ করতে যাচ্ছি।’ জলাশয়-ড্রেনে গাপটি মাছও ছাড়া হচ্ছে বলে জানান ডিএনসিসির এ কর্মকর্তা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতালগুলো এখন থেকেই প্রস্তুত রাখছে, যাতে ডেঙ্গু রোগী সামাল দেওয়া যায়। গত বছর থেকে চিকিৎসক-নার্সদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছে তারা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছেন সবাই।


আরও দেখুন: