নবীন চিকিৎসক রিয়াজুল হাসানের অস্বাভাবিক মৃত্যু
ডা. রিয়াজুল হাসান শুভ
অভিমানে মায়ার বাঁধন ছিঁড়ে চলে গেলেন নবীন চিকিৎসক রিয়াজুল হাসান শুভ। আজ রোববার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। ডক্টর টিভি অনলাইনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডা. রিয়াজুল হাসান শুভ’র ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডা. আবু সায়েম। তিনি জানান, ডা. রিয়াজুল হাসান শুভ’র পিতার কাছ থেকে তিনি এই তথ্য জানতে পেরেছেন।স্বজনদের ধারণা, ডিপ্রেশনজনিত কারণে আত্মহত্যা করেছেন ডা. শুভ।
ডা. আবু সায়েম জানান, রিয়াজুল হাসান শুভ রংপুর মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০২২ সালের জুনে ইন্টারশিপ সম্পন্ন করেন। এরপর বিসিএস এর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।
এদিকে, সদ্য প্রয়াত বন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন ডা. আবু সায়েম। নিজ ফেসবুক টাইম লাইনে তিনি লিখেছেন,
শুভ আমার রোলমেট, পড়ার সঙ্গী। অসম্ভব ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র। পড়াশুনায় যেমন মনোযোগী, আড্ডাতেও তেমন পারদর্শী। খেতে ভালোবাসত, খাওয়াইতে ভালোবাসতো। তার ভালোবাসায় শিক্ত হয় নি, তাকে ভালোবাসেনি, এমন একজন ও ছিল না আমাদের ব্যাচে। সেই ছেলে সুইসাইড করলো!
কি সমস্যা ছিল, এটা পাবলিকলি বলব না। কিন্তু তার মধ্যে যে পরিবর্তনগুলো দেখেছি, বলতে পারি।দুইটা বিষয়ে ডিপ্রেসড ছিল। সমস্যা সবারই থাকে। সমস্যা ছাড়া এই দেশে মানুষ আছে বলে বিশ্বাস করি না।
সে তার কথাগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার সময়, দেখতাম সে কাঁপতেছে। কেঁপে কেঁপে বলতো, বন্ধু আমাকে একা রাখিস না। একা থাকলে আমার ভয় লাগে। খারাপ কিছু করে ফেলতে পারি।
জাস্ট অবাক হইতাম। শুভর মতো এতো স্ট্রং পারসোনালিটির একটা ছেলে এমন করতেছে কেন! এরপর থাকে মনোরোগবিদ্যার বড় স্যার দেখানো হইলো। তাকে আমরা সবাই কাউন্সেলিং করলাম। ভালোবাসা দিয়ে, রাগ দিয়ে, যে যেভাবে পারছে। সবথেকে বেশি ভালোবাসতো সোহাগ আর নাঈম। আমি রাগ দেখায় বলতাম, বাপ মার জন্যে হলেও সারভাইব কর। সোহাগ নাঈম থামায় দিতো। এভাবে প্রতিদিন সব মেনে নিয়ে ভালো থাকতো। আবার শুরু হতো কাঁপুনি, চোখে মুখে অসম্ভব ভয়।
মনে হতো, এতো আমার বন্ধু শুভ না। অন্য কেউ। তার আচরন মাত্রা দিনদিন অস্বাভাবিক হতে লাগলো। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতো। সবাই ভাবলাম, এভাবে ২৪ ঘন্টা ঢাকায় তাকে দেখে রাখা সম্ভব না। তাকে বাসায় পাঠায় দেই। বাসায় বসে পড়বে।
শেষ বারের মতো, তাকে বাস এ তুলে দিলাম। সেই রাতের কথা মাথায় ভাসতেছে। ছোট বাচ্চার মতো আমার হাত ধরে ছিল। বলতেছিল, সায়েম আমাকে বাসায় পাঠাইস না। কোনো উত্তর করি নাই।
বাসায় যাওয়ার পর, তার অভিযোগ আমাদের উপর, যে তার পড়াশুনা হচ্ছে না। বাসা থেকে রংপুর শিফট হলো। নতুন উদ্যমে পড়াশুনা শুরু করলো।
বন্ধু হিসেবে তার সব থেকে কাছের নাঈম আর সোহাগ, এরপর সৌরভ। দুজনের চেষ্টার কমতি ছিল না, তার জন্য। বন্ধু বন্ধুকে এতো ভালোবাসতে পারে, ওদের তিনজনকে না দেখলে জানতে পারতাম না।
তার জন্য সোহাগ ঢাকা ছাড়লো। একি রুমে দুইজন উঠলো বিসিএস পড়ার জন্য। ভিডিও কলে কথা হতো। ভেবে নিলাম, সব ঠিক ঠাক হয়ে গেছে।
আজকে বিকালে সোহাগ কেঁদে ফোন দিল। শুনে বিশ্বাস করলাম না। এটা হতেই পারে না। তার বউকে ফোন দিলাম। তার ভাবিকে ফোন দিলাম। বন্ধু সিফাতকে ফোন দিলাম। সবাই এক বাক্যে বললো, সে আর নাই! ব্যাচ A এর সবথেকে ভালো স্টুডেন্ট টা আর নেই! ফোন দিয়ে বলতো, দোস্ত রংপুর আয় দেখা করি। বলছি, রংপুর আমি যাবো না। এখন তোর সাথে দেখা করার জন্য পরকালে যেতে হবে! এই বিচার তোর!
শেষ যেবার ফোন দিছিল, ধরতে পারি নাই। এই কষ্ট কোথায় রাখবো??