সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধায় সিক্ত ডা. জাফরুল্লাহ
ডা. জাফরুল্লাহ রাজনীতি করেননি ঠিকই কিন্তু রাজনীতিতে বিবেকের কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনি মানুষকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে চৈত্র সংক্রান্তিতে তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হাজারো মানুষ। তারা প্রিয় এই ব্যক্তিত্বকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিশিষ্টজন ডা. জাফরুল্লাহর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাকিদের বলেন, ‘জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন আদর্শ বাঙালি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। খবরের কাগজে কেউ কেউ লিখেছেন ‘পিপলস ডক্টর’। সাধারণ মানুষের ডাক্তার শুধু নন, সাধারণ মানুষের জন্য একজন খাঁটি, অকৃত্রিম বাঙালি। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা অবশ্যই বটে, আমাদের বর্তমান চিকিৎসা সম্বন্ধে পরিবর্তন বা দৃষ্টিভঙ্গির নতুন চিন্তা তার পথিকৃৎ তিনি।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান বলে আমি মনে করি। তাঁর ছাত্রজীবন থেকে আমরা যারা তাঁকে জানি, তিনি সারা জীবন সাধারণ মানুষের জন্য লড়াই করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর (ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী) অসামান্য অবদান ছিল। পরবর্তীকালে বাংলাদেশকে নির্মাণের জন্য তিনি শুধু কথা বলেননি, কাজ করেছেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র একটি নজির। স্বাস্থ্য খাতে ও স্বাস্থ্য নীতিতে তাঁর যে ভূমিকা তা নিসন্দেহে এই জাতিকে উপকৃত করেছে।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আজকে আমরা গর্ব করি যে, আমাদের ওষুধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করি। সেই ওষুধ প্রণয়নে তাঁর ছিল অবিচল প্রচেষ্টা এবং সেই প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। আমি বলব, তিনি রাজনীতি করেননি ঠিকই কিন্তু রাজনীতিতে বিবেকের কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনি থেকেছেন এবং মানুষকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘কয়েকশ বছর পরপর একটি জাতিতে এমন একজন মানুষ জন্মায়। আমি উনাকে মনে করি আমাদের অঘোষিত অষ্টম বীরশ্রেষ্ঠ। তিনি ছিলেন প্রেরণার উৎস। তাঁর মৃত্যুতে জাতির যে ক্ষতি হয়েছে তা সহজে পূরণ করতে পারব না।’
কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মৌলিক জায়গা ছিল গণস্বাস্থ্য। জাফরুল্লাহ একদিকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা, আজকে আমরা সেই হিসেবে তাঁকে সম্মান দিয়েছি। যারা তাঁকে সম্মান দিয়েছেন তাদের কাছেও আমরা কৃতজ্ঞ। তরুণদের কাছে আমার আবেদন হবে, তার কাছ থেকে শেখা যে, জীবন বলতে কী বোঝায়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘নানা মাত্রায় নানা বিবেচনায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দীর্ঘদিন মানুষের মনে থাকবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তিনি সম্মান পেয়েছেন।’
বেসরকারি সংস্থা নিজেরা করির প্রধান নির্বাহী ও অধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, ‘জাফর ভাই অনন্য এবং আমার জীবনে এই রকম মানুষ খুব কম পেয়েছি। সাহস তো আছেই, সে একজন দেশপ্রেমিক। শোষিত মানুষকে এত ভালোবাসতেন। পুরো জীবন দিয়েছেন মানুষের প্রতি, মানুষের জন্য।’
ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১১ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে মারা যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি দীর্ঘদিন কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনার পর কিডনি সমস্যার পাশাপাশি তাঁর লিভারের সমস্যাও দেখা দেয়। এ ছাড়া, তিনি অপুষ্টিসহ গুরুতর সেপটিসেমিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন।