‘কোভিড মোকাবিলায় টাকার চিন্তা করেননি প্রধানমন্ত্রী’

অনলাইন ডেস্ক
2023-03-14 20:44:33
‘কোভিড মোকাবিলায় টাকার চিন্তা করেননি প্রধানমন্ত্রী’

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে (বিপিএমসিএ) কোভিড মহামারী নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন, ভ্যাকসিন সফলতা এবং বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতকে সম্পৃক্তকরণ ও উদ্ধুদ্ধ করায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে সংবর্ধনা প্রদান

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি বলেছেন, কোভিড মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিশ্বের রোল মডেল হওয়াটা কোন ম্যাজিকের মাধ্যমে হয়নি, এই মোকাবিলা হয়েছে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা, উদ্যোগ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে। এই মহামারী মোকাবিলা ছিল  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার ফসল। আর এই মতো মহামারী কোভিড মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টাকার চিন্তা করেননি, তিনি মানুষের জীবনের কথা চিন্তা করে কাজ করেছেন।

আজ মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকেলে সোনারগাঁও হোটেলের ওয়েসিস মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে (বিপিএমসিএ) কোভিড মহামারী নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন, ভ্যাকসিন সফলতা এবং বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতকে সম্পৃক্তকরণ ও উদ্ধুদ্ধ করায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুবিন খান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড মোকাবিলায় সাফল্য গোটা জাতির জন্যই একটি বিশেষ অর্জন ও সফলতা। এজন্য সব থেকে বেশি অবদান রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজে সার্বিক দায়িত্ব কাধে তুলে নিয়ে এই মহামারীতে সম্মুখে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা কেবল তাঁর নির্দেশনা মেনে কাজগুলো করে গেছি। স্বাস্থ্যখাতের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যখন যা কিছু চেয়েছি, সেগুলো দিতে এক মুহূর্তও বিলম্ব করেন নাই। তিনি টাকার চিন্তা করেননি, মানুষের জীবনের চিন্তা আগে করেছেন। করোনা মোকাবিলায় আমরা আজ বিশ্বের ৫ম স্থান পেয়েছি, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এই কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী ঠিকভাবে কাজ করায় আমরা আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছি।

মন্ত্রী বলেন, আজ আমাকে যেভাবে সংবর্ধনা দেয়া হলো এটি আমি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) গোটা চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা খাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের পক্ষে গ্রহন করে সম্মানিত বোধ করছি। এর মাধ্যমে গোটা চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যখাতকে যেভাবে সম্মান দেয়া হল সেজন্য বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল এসোসিয়েশনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। 

করোনার সময়ে দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যখাত একযোগে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে কাজ করেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, করোনার সময় দেশে বিদেশে সব মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত ছিল। শুরুতে মানুষ কোন এলাকায় হাসপাতাল করতে দিতেন না। মানুষ করোনার ভয়ে সেসময় করোনা হাসপাতাল করার বিপক্ষে আন্দোলন পর্যন্ত করেছেন। সে সময় দেশের প্রাইভেট মেডিকেল হাসপাতালগুলো সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমরা প্রাইভেটখাতকে বলেছিলাম করোনার জন্য হাসপতাল ডেডিকেটেড করতে তারা সেটি মেনে নিয়েছে, বেড বাড়াতে বললে তারা বৃদ্ধি করেছে। তাদের যখন যা বলেছি তারা তাই করেছে। এসব কারণে  করোনা মোকাবিলা আরও সহজ হয়েছে বলে জানান তিনি। 

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কোভিড মোকাবিলায় অবদান রাখার জন্য বেসরকারি হাসপাতালের অবদানের প্রশংসা করেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, দেশে প্রায় ৫ হাজারের অধিক বেসরকারি হাসপাতাল প্রায় ৬২% স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা মহামারীকালে নিরলসভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মানবিক কর্মপ্রয়াস পরিচালনা করার স্বীকৃতিস্বরূপ আজীবন সেবাদানকারী বিশিষ্ট ব্যক্তির মর্যাদা প্রদান করেন এবং কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে মানবিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় প্রাইভেট মেডিকেলের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্মাননা সনদ প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে বিশ্বের ১০০ বছরের ইতিহাসে কোভিড মহামারী নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন, ভ্যাকসিন সংগ্রহ, বিতরণ ও প্রয়োগে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে  বেসরকারি স্বাস্থ্য সেক্টরের পক্ষ হতে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কোভিড মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন দিক কর্মপরিধি বিশেষত: ভ্যাকসিন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ যখন ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা করছে তখন বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ তা বিনামূল্যে পেয়েছেন। বাংলাদেশে একদিনে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়ে বিশ্বে বিরল রেকর্ড করেছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসময় আরো বলেন, যখন আমেরিকা ও ইটালিতে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যু হার ক্রমান্বয়ে বেড়ে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হয় তখন বাংলাদেশে আক্রান্তের হার বাড়লেও এক পর্যায়ে সেটি নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। ২০২০ সালের জুনের শেষে এবং জুলাইয়ে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু হার কিছুটা বাড়তে থাকে, পরে সেটিও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

দেশের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যখাতের ভূমিকা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের সরকারি হাসপাতালে দৈনিক অন্তত ১০ লক্ষ এবং বছরে ২৪ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সরকারের এই বিনামূল্যে চিকিৎসার গড় হিসাব করা হলে দেখা যাবে, বছরে সরকার ১২ বিলিয়ন ডলারের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। এই চিকিৎসা সেবা যদি বিদেশে নিতে হতো তাহলে মানুষের খরচ হতো ৬০ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, দেশের প্রাইভেট মেডিকেলগুলো বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার স্বাস্থ্যসেবা মানুষকে দিচ্ছে। কিন্তু এইসেবাগুলো যদি দেশের প্রাইভেট হাসপাতালের পরিবর্তে বিদেশ থেকে নেওয়া হতো, তাহলে মানুষের অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়ে যেত।

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি এম এম মুবিন খানের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যলয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো: টিটো মিঞাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 


আরও দেখুন: