খুলনায় সাংবাদিকদের সাথে চিকিৎসকদের মত বিনিময়

অনলাইন ডেস্ক
2023-03-10 17:38:18
খুলনায় সাংবাদিকদের সাথে চিকিৎসকদের মত বিনিময়

খুলনা বিএমএ ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে চিকিৎসক নেতাদের মতবিনিময় সভা

ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ’র ওপর দলবল নিয়ে হামলাকারী পুলিশের এএসআই নাইম শেখকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন খুলনার চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) দুপুরে খুলনা বিএমএ ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানান তারা। সূত্র : খুলনা গেজেট। 

সভায় বিচার না পেলে কর্মস্থলে না যাওয়ার কথা জানানো হয়। একইসঙ্গে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সাথে আলোচনার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. বাহারুল আলম।

বিএমএ খুলনা এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভায় বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ, খুলনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজাসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চিকিৎসক এবং গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভা সম্পর্কে নিজ ফেসবুক টাইম লাইনে বিস্তারিত জানিয়েছেন  বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. বাহারুল আলম। নিচে তার স্ট্যাটাসটি ডক্টর টিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো : 

বৃহস্পতিবার খুলনার সকল সাংবাদিক/ সংবাদকর্মীদের সাথে বিএমএ, বিপিএমপিএ ও ক্লিনিক মালিক সমিতির যৌথ নেতৃবৃন্দের সাথে এক মতবিনিময় সভা হয়।
ডা নিশাত আবদুল্লাহর নিগ্রহের প্রধান অপরাধীকে বিচারে সোপর্দ করার দাবীতে চিকিৎসকদের টানা ৪র্থ দিন যে কর্মবিরতির কর্মসূচি চলছিল, সেখানে সাংবাদিকদের সাথে বিএমএ-র বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য দেখা দেয়। সে সকল বিষয়গুলোকে মতবিনিময় সভায় উত্থাপন করে পারস্পরিক বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা প্রশমন করার চেষ্টা চালিয়েছি। শুরুতেই সাংবাদিকদের স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলার চেষ্টা করেছি – চিকিৎসকরা কর্মবিরতির কর্মসূচি চলাকালে রোগীদের জিম্মি করেছে, এ ধারণা সর্বৈব মিথ্যা। প্রচার মাধ্যমের ‘রোগী জিম্মি’র অজুহাতে রাষ্ট্র ও সরকার চিকিৎসকদের ন্যায্য দাবী উপেক্ষা করে নীরব থেকেছে।
প্রচার মাধ্যম যদি সরকারের পক্ষে বিষয়টিকে উপস্থাপনের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে রাখে তাহলে চিকিৎসকদের দাবী চরমভাবে উপেক্ষিত হয়। সাংবাদিক বন্ধুরা যেন এ কাজটি না করে। অপরাধীর বিচার কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় বিএমএ খুলনা কেবল অপরাধীকে বিচার/ শাস্তির আওতায় আনতে চেয়েছে। তারপ্রতিও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল বিভাগ কোনরকম গরজ দেখায়নি। যে কারণে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার সিদ্ধান্ত নিতে চিকিৎসকরা বাধ্য হয়। এখানে রোগী চিকিৎসা না পাওয়ার সমুদয় দায় রাষ্ট্র তথা সরকারের। প্রচার মাধ্যমে অযৌক্তিকভাবে কেবল চিকিৎসকদের অভিযুক্ত না করে বরং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সরকারকে অভিযুক্ত করা উচিত- সে বিষয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিশ্লেষণ পূর্বক জোরালো অনুরোধ জানানো হয়েছে। আরও বলেছি “কর্মবিরতি চলাকালীন হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু”– এ বিষয়ে তথ্য বিভ্রাট আছে। যথাযথ তথ্য উপস্থাপন করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি- যখন কর্মবিরতি ছিল না তখন হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা এবং কর্মবিরতি চলাকালে রোগীর মৃত্যু প্রায় কাছাকাছি। জরুরি অপারেশনের তথ্য উপস্থাপন করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি– কর্মবিরতির সময়ে কখনও জরুরি অপারেশন বন্ধ ছিল না। সুতরাং ‘চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে রোগীর মৃত্যু ঘটেছে’- সাংবাদিকদের এরূপ প্রচারে চিকিৎসকদের দাবী আদায়ের আন্দোলনকে ব্যাহত করে। আরও বলি- আত্মস্বীকৃত অপরাধী একজন পুলিশ বিধায় চিকিৎসকরা পুলিশ বিভাগ বা পুলিশ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কোন অবস্থান না নেওয়া সত্ত্বেও প্রচার মাধ্যমে “চিকিৎসক –পুলিশ দ্বন্দ্ব” এরূপ সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। এ ধরণের সংবাদ পরিবেশন না করতে অনুরোধ করি।

এর সাথে যুক্ত করি– হাসপাতালে রোগী চিকিৎসার রাষ্ট্রীয় তথা সরকারি ব্যবস্থাপনা ত্রুটিপূর্ণ ও উপকরণ অপ্রতুল থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে আপ্রাণ চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে।

মূলত রোগী অবহেলিত হচ্ছে রাষ্ট্র তথা সরকারের অব্যবস্থাপনা দ্বারা। কারণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণে নয়। চিকিৎসকরা কেবল রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য কাঠামোতে চাকরি করে।

সকল সাংবাদিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই মতবিনিময় সভায় মতামত ব্যক্ত করে এবং তাদের অভিজ্ঞতায় বিএমএ-কে কিছু পরামর্শ দেয়। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে মত বিনিময় সভা শেষ হয়। 


আরও দেখুন: