রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় বেপরোয়া গতির একটি বাস ফাতেমা কাশেম ওরফে ওয়াফা (২৫) নামে এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে পা পিষে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সকালে এলাইক পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়।

ফাতেমা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বেসরকারি শমরিতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক। বাসচাপায় তার কোমর ও পায়ের হাড় কয়েক টুকরা হয়ে গেছে।

ফাতেমাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতালে) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ফাতেমার তত্ত্বাবধানকারী পঙ্গু হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন সঞ্জয় কুমার রায় জানান, তার অবস্থা বেশ গুরুতর। শকে যাওয়ায় রক্ত ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। সেরে উঠতে অনেক দিন সময় লাগবে।

পঙ্গু হাসপাতালে নাকে-মুখে অক্সিজেনের মাস্ক পরানোর আগে কাতর কণ্ঠে ফাতেমা জানান, সকাল ৯টার দিকে তার মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসে যেতে ফার্মগেটের আল-রাজি হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কের পাশে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলাইক পরিবহনের একটি বাস তাকে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তার পাশে ছিটকে পড়েন। এ সময় চালক তার ডান পায়ের ওপর দিয়ে বাস চালিয়ে দেন। পরে পথচারীরা তাকে ধরাধরি করে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান।

তিনি বলেন, ‘এমবিবিএস পাস করে পাঁচ মাস আগে ইন্টার্নশিপ শুরু করি। সুস্থ হয়ে ইন্টার্নশিপ শেষ করতে পারব তো?’ তার জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলার জন্য দায়ী বাসচালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন ফাতেমা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ফাতেমার কোমরের হাড় ভেঙে চার টুকরা হয়ে গেছে। তার ডান ঊরুর হাড়ও ভেঙেছে। থেঁতলে গেছে দুই পা।

খবর পেয়ে ফাতেমার মা-বাবা পঙ্গু হাসপাতালে ছুটে আসেন। ফাতেমার বাবা আবুল কাশেম রাজধানীর গ্রিন রোডে সেন্ট্রাল হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। মেয়ের অবস্থা দেখে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘বাসা থেকে মেয়েটা আমার সুস্থ অবস্থায় বের হলো। আর এখন শরীরের একি হাল হলো তার।’

আবুল কাশেম বলেন, তিন মেয়ের মধ্যে ফাতেমা ছোট। তার বড় দুই মেয়েও চিকিৎসক। তাদের বাসা রাজধানীর মিরপুরের দক্ষিণ পীরেরবাগের আমতলায়। মেয়ে মেডিকেল কলেজে বাসে যাতায়াত করতেন।

খবর পেয়ে তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসান ও পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার রুবাইয়াত জামান হাসপাতালে যান। তারা ফাতেমার বাবাকে মামলা করার অনুরোধ করেন। তিনি রাজি হচ্ছিলেন না।

পরে অবশ্য ফাতেমাকে চাপা দেওয়া বাসের চালকের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনে তেজগাঁও থানায় মামলা করেছেন বাবা আবুল কাশেম।

তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসান জানা, দুর্ঘটনার পর জনতার সহায়তায় চালককে আটক ও এলাইক পরিবহনের বাসটি জব্দ করা হয়েছে। পরে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।