স্বাধীনতাপদক পাচ্ছেন প্রখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী
চিকিৎসাবিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী।
দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবদান রাখায় স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন প্রখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
এবার প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাষ্ট্রের এই সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক পাচ্ছে।
যে ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবারের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন-
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) সামসুল আলম, মরহুম লে. এজি মোহাম্মদ খুরশীদ, শহিদ খাজা নিজামউদ্দিন ভুঁইয়া, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম), সাহিত্যে মরহুম ড. মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন আহমেদ (সেলিম আল দীন), সংস্কৃতিতে পবিত্র মোহন দে, ক্রীড়াতে এএসএম রকিবুল হাসান, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে বেগম নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ) এবং ড. ফিরদৌসী কাদরী।
এ ছাড়া সমাজসেবা/জনসেবায় অবদান রাখায় স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
ড. ফেরদৌসী কাদরী
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও সমানতালে কাজ করে গেছেন ড. ফেরদৌসী। দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা, ভ্যাকসিনের ট্রায়াল ও এ সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে ইনস্টিটিউট ফর ডেভলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভ অ্যান্ড হেলথ সার্ভিসেস (আইদেশি) নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ড. ফেরদৌসী। বায়োমেডিকেল বিষয়ক গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানটি দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীদের একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের যে কয়েকটি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স হয়েছে, তার বড় একটি অংশ হয়েছে এই কেন্দ্রে।
এর আগে কলেরা ও টাইফয়েড— এই দু’টি রোগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এই সিনিয়র বিজ্ঞানী। সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, ইমিউনোলোজি এবং ভ্যাকসিন উন্নয়ন ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অবদান রাখায় এশিয়ার নোবেলখ্যাত র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার ২০২১ পুরস্কার অর্জন করেন।
এশিয়ায় দারিদ্র্য বিমোচন ও সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখা ব্যক্তিদের প্রতিবছর এই ম্যাগসাইসাই পুরস্কার দেওয়া হয়। ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট র্যামন ম্যাগসাইসাইয়ের স্মরণে ১৯৫৭ সালে পুরস্কারটি প্রবর্তন করা হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত বছর এই পুরস্কারটি দেওয়া হয়নি। এক বছর বিরতি দিয়ে ফের এ বছরের জন্য এই পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট)। তাতেই উঠে এসেছে ফেরদৌসী কাদরীর নাম।
একনজরে ড. ফেরদৌসী কাদরীর যত সাফল্য
ড. ফেরদৌসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন/প্রতিষেধকবিদ্যা বিভাগ থেকে অর্জন করেন পিএইচডি ডিগ্রি। ১৯৮৮ সালে সহযোগী বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি যোগ দেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) প্রতিষেধকবিদ্যা বিভাগে। পরে তিনি একই প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং মিউকোসাল ইমিউনোলজি অ্যান্ড ভ্যাকসিনোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান।
শুরু থেকেই বাংলাদেশি এই বিজ্ঞানী চিকিৎসাবিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত গবেষণা নিয়ে কাজ করে আসছেন। এ ধরনের গবেষণা কার্যক্রমকে বিশেষায়িত করার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। সংক্রামক রোগ, রোগতত্ত্ব, ভ্যাকসিন ও এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নিয়ে কাজ করেন।
র্যামন ম্যাগসাইসাই ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ড. ফেরদৌসী কলেরা ও টাইফয়েড প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এই রোগগুলো বাংলাদেশ তথা এশিয়া ও আফ্রিকার বেশিরভাগ দরিদ্র দেশের মানুষের জন্য বড় ধরনের সমস্যা। এসব দেশে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবার সুযোগ স্বল্পতা রয়েছে। এক্ষেত্রে ড. ফেরদৌসী কাদরী কলেরার মুখে খাওয়ার ভ্যাকসিন (ওসিভি) উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
শিশু ও বয়স্কদের জন্য টাইফয়েডের ভ্যাকসিন উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে ড. কাদরীর। শুধু তাই নয়, ৯ মাস বয়সী নবজাতকদের জন্যও এই রোগের এই প্রতিষেধক উন্নয়নে অবদান রয়েছে তার। কলেরা মহামারি নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশি এই বিজ্ঞানী কাজ করে চলেছেন।
কলেরা প্রতিরোধে মুখে খাওয়ার নতুন ও সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্যাকসিন ‘স্যাংকল’-এর সম্ভাব্যতা নিয়ে ২০১১ সালে বড় ধরনের একটি গবেষণা চালিয়েছে আইসিডিডিআর,বি’র একটি গবেষক দল। সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ড. ফেরদৌসী। সেই গবেষণা কাজের অংশীদার ছিল মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের ফাউন্ডেশন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
ওই গবেষণায় উঠে আসে, সাশ্রয়ী মূল্যের ওই ভ্যাকসিন দরিদ্রদের জন্য ও শহুরে পরিবেশে কলেরার বিস্তার রোধে কার্যকর হতে পারে। ভ্যাকসিনটি কলেরার বিরুদ্ধে ৫০ শতাংশের বেশি সুরক্ষা দিয়েছে।