শেখ হাসিনা মেডিকেলের নিজস্ব ভবন নির্মাণ শুরু জুলাই থেকে : অধ্যক্ষ
শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, হবিগঞ্জ (অস্থায়ী ভবন)
চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে শুরু হচ্ছে হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের নিজস্ব ভবন নির্মাণ কাজ। পরবর্তী দু’বছরের মধ্যেই নিজস্ব ভবনে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সুনির্মল রায়।
কলেজটির অবস্থান হবিগঞ্জ জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে। উত্তরে সুনামগঞ্জ ও সিলেট, পূর্বে মৌলভীবাজার, পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মাঝে অবস্থিত দেশের ৩১তম সরকারি মেডিকেল কলেজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এটি।
সম্প্রতি ডক্টর টিভি অনলাইনকে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সুনির্মল রায় জানান, ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হবিগঞ্জের এক জনসভায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি ৫০ জন ছাত্র ছাত্রীকে ভর্তির জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলেজটির প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান ডা. মো. আবু সুফিয়ান। কিন্তু ক্লাস নেয়ার কোন স্থান না থাকায় সে বছর কোন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়নি। এরপর ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৫১ জন শিক্ষার্থী ভর্তির মধ্যদিয়ে কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।
ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম : নিজস্ব ভবন না থাকায় শুরু থেকেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলছে একাডেমিক কার্যক্রম।শ্রেণীকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে নব-নির্মিত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটির ২য় ও ৩য় তলাকে। পাশাপাশি মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল না থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন আড়াইশ' শয্যার হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে।
ফলাফল : শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতায় প্রতিবন্ধকতাকে পাশকাটিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। যার ফলশ্রুতিতে মেডিকেলের প্রতিটি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করছেন শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
অন্যান্য : ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে শিক্ষকদের আন্তরিক তত্ত্বাবধানে চলছে শেহামেক, হবিগঞ্জ এর একাডেমিক কার্যক্রম। বর্তমানে ৫টি ব্যাচের শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকমণ্ডলীর সহায়তায় বেশ কয়েকটি মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে। তাছাড়াও বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক সেমিনারের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
আবাসন : ছাত্রাবাস রয়েছে ৩টি। এরমধ্যে অনন্তপুরে ২টি এবং ইনাতাবাদে ১টি।
ছাত্রী নিবাস আছে ১টি। এটি শহরের মাছুলিয়ায় অবস্থিত। ভাড়াবাড়ি হলেও যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষক-শিক্ষিকা: মেডিকেলের সব বিষয়েই মোটামুটি পর্যাপ্ত শিক্ষক আছেন। তবে, ক্লিনিকাল বিষয়ের শিক্ষক রয়েছেন তুলনামূলক কম। নাক-কান-গলা বিভাগ ও চক্ষু বিভাগে কোন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নেই। প্রভাষক দিয়ে ক্লাস চলছে। এছাড়াও
রেজিস্ট্রার বা সিএ না থাকায় সমস্যা হচ্ছে হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের।
স্থায়ী ক্যাম্পাস : অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সুনির্মল রায় জানান, হবিগঞ্জ-লাখাই সড়কের পাশে সদর উপজেলায় প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে নির্ধারিতস্থানে স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সুনির্মল রায়।
তিনি জানান, ৩০ একর নিজস্ব জমিতে তৈরি হবে- পরিকল্পিত একাডেমিক ভবন, অফিস কক্ষ, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল ও ইন্টার্নদের জন্য আলাদা হোস্টেল। পাশাপাশি নির্মাণ হবে- নিজস্ব হাসপাতাল, লাইব্রেরি, নার্সিং কলেজ, খেলার মাঠ, অডিটোরিয়াম, মসজিদ, পুকুর, ফুলের বাগান। ২০২৫ সালের মধ্যে এসব নির্মাণ শেষ হবে বলে আশাবাদী অধ্যক্ষ ডা. সুনির্মল।
তাঁর মতে, অবকাঠামো নির্মাণ শেষে দেশের একটি আদর্শ মেডিকেল শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হবে হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।