সন্তোষজনক ফলাফল করছেন খুলনা মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা : অধ্যক্ষ

ইলিয়াস হোসেন :
2023-02-27 15:16:12
সন্তোষজনক ফলাফল করছেন খুলনা মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা : অধ্যক্ষ

পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল করছেন খুমেকের শিক্ষার্থীরা : অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দীন-উল ইসলাম

প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর একাডেমিক পরিবেশে যথেষ্ট উন্নতি করতে পেরেছেন। যার ফলশ্রুতিতে সাম্প্রতিক সব পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল করছেন খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি ডক্টর টিভি অনলাইনকে এমনটাই জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দীন-উল ইসলাম। 

অধ্যাপক ডা. দীন-উল ইসলাম জানান, খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষকেরা সবাই যথেষ্ট আন্তরিক। বিদ্যমান সমস্যা কাটিয়ে কিভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগী রাখা যায়- প্রতিনিয়ত সেই চেষ্টা তারা করেন। সাম্প্রতিক সব পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল করছেন শিক্ষার্থীরা। 

8de6979b-5e30-46c2-9691-e2b01bc78cfe

যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে : 

খুমেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দীন-উল ইসলাম জানান, ১৯৯২ তে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু। ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বর্তমানে ১৮০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। প্রতি বছরই ৩/৪ জন করে বিদেশী শিক্ষার্থীও ভর্তি হচ্ছেন। শিক্ষার্থী কয়েকগুণ বাড়লেও অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়েনি। ক্লাস-হোস্টেল সবকিছুই ৫০ জনের সুবিধা-সম্পন্ন। শিক্ষকের সংখ্যাও বাড়েনি।

তিনি আরও জানান, খুলনা মেডিকেল কলেজে ৪টা লেকচার গ্যালারি আছে- যেগুলো যথেষ্ট বড়। কিন্তু টিউটোরিয়াল ক্লাসগুলো নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ব্যাচ করে ক্লাস নিতে হচ্ছে। শিক্ষক ৩ জন থাকলে ৩টা ব্যাচ করতে হচ্ছে। এখন ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে মানসম্মত পরিবেশে টিউটোরিয়াল ব্যাচ করা যায় না। টিউটোরিয়াল ব্যাচ হতে হবে সবসময় ছোট ছোট গ্রুপে। সর্বোচ্চ ২৫/৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ভালমানের টিউটোরিয়াল ব্যাচ করা যায়। খুমেকের শিক্ষক সংখ্যা যদি বর্তমানের দ্বিগুণ হতো, তাহলে কাঙ্খিত ও মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হতো।

অধ্যক্ষ জানান, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ৫০ জন শিক্ষার্থী অনুযায়ীও সব সাবজেক্টে শিক্ষক নেই। যেমন ফরেনসিক। এখানে কোন লেকচারার নেই। ৩ জন শিক্ষক আছেন- যারা সবাই কারেন্ট চার্জে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। অথচ, ফরেনসিক বিভাগে একাডেমিক কাজের পাশাপাশি এক্সট্রা কিছু কাজ থাকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মেয়েদের পোস্টমর্টেম করবেন মেয়ে ডাক্তার। অথচ, বার বার চেয়েও ফরেনসিকে কোন মেয়ে ডাক্তার পাচ্ছি না। কারণ, এই ক্ষেত্রে ডিগ্রিধারী দক্ষ জনবলের অনেক ঘাটতি। আরও কিছু বিষয়ে কম সংখ্যক শিক্ষক আছেন। দেশের অন্যান্য মেডিকেলের মত এখানেও বেসিক সাবজেক্টে টিচার ঘাটতি আছে।

তাছাড়াও ক্লাস কক্ষ ও হোস্টেল দু জায়গাতেই স্থান সংকুলান করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। ক্লাসরুমগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য সন্তোষজনকভাবে পরিবেশ তৈরি করতে পারছি না। হোস্টেলগুলোতেও মানবেতরভাবে তাদের রাখতে হচ্ছে। প্রতিবছরই নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির পর, তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে ভীষণ কষ্ট হয়ে যায়।

73c59a07-bced-4fbe-9f2e-ee7edebdb781

এমনকি ৫০ জনের জন্য ইন্টার্ন হোস্টেল ছিলো। এখনও সেটাই রয়ে গেছে। যার কারণে পঞ্চম বর্ষ কমপ্লিট করার পরও শিক্ষার্থীদেরকে আমরা ইন্টার্ন হোস্টেলে পাঠাতে পারছি না। অনেকেই বাধ্য হয়ে ছাত্র হোস্টেলে থেকেই ইন্টার্ন জীবন পার করছেন। যে কারণে নতুন শিক্ষার্থীদেরকেও জায়গা দিতে পারছি না।

আশার কথা হলো- দায়িত্ব নেয়ার পর অ্যাকাডেমিক পরিবেশে যথেষ্ট উন্নতি করতে পেরেছি। শিক্ষকেরা সবাই যথেষ্ট আন্তরিক। বিদ্যমান সমস্যা কাটিয়ে কিভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগী রাখা যায়- প্রতিনিয়ত সেই চেষ্টা তারা করেন। বর্তমান অ্যাকাডেমিক ফলাফল নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্তুষ্ট। সাম্প্রতিক সব পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল করছেন শিক্ষার্থীরা।

সম্প্রতি সারাদেশের মেডিকেল প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রিন্সিপ্যালদের নিয়ে কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে মেডিকেলগুলোর বিদ্যমান সমস্যা কাটানোর উপায় নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়। আশা করছি- শিগগিরই শিক্ষক ঘাটতি পূরণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে জানান খুমেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দীন-উল ইসলাম।

উল্লেখ্য, খুলনা মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের খুলনা শহরে অবস্থিত একটি চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি খুলনা বিভাগের প্রথম সরকারী মেডিকেল কলেজ। ১৯৯২ সালে ৪০.২৫ একর জমির উপর এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে প্রায় ৯০০ ছাত্রছাত্রীর পাশাপাশি স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া এখানে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে স্বল্পকালীন কোর্স ও প্রশিক্ষন চালু আছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হওয়ার ২৮ বছর পরেও বিভিন্ন কারনে মেডিকেল কলেজে কোনো কেএমসি ডে পালন হতো না। ২৮ বছর পর কেএমসি ডে পালনের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের আলোচনায় প্রতিবছর "৮-জুলাই" কেএমসি ডে পালনের সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। উল্লেখ্য ১৯৯২ সালের ৮-জুলাই খুলনা মেডিকেল কলেজে প্রথম ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।


আরও দেখুন: