স্বাভাবিক প্রসবের সময় ২ গ্রাম অ্যাজিথ্রোমাইসিনের ব্যবহার মায়েদের সেপসিস ও মৃত্যুঝুঁকি ৩৩ শতাংশ হ্রাস করতে পারে বলে নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে।

সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি ও গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ফর উইমেনস অ্যান্ড চিলড্রেনস হেলথ রিসার্চ ‘প্রসবের সময় অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রফিল্যাক্সিস ব্যবহার (এ-প্লাস)’ শীর্ষক গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যোনিপথে প্রসবের (যা স্বাভাবিক প্রসব নামেও পরিচিত) সময় অ্যাজিথ্রোমাইসিন অ্যান্টিবায়োটিকের ২ গ্রাম ওরাল ডোজ গ্রহণ করলে মায়েদের সেপসিস বা মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৩ শতাংশ কমে যায়।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আইসিডিডিআর,বি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গবেষণাটি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, এ-প্লাস গবেষণাটি সাতটি দেশের ২৯ হাজার ২৭৮ গর্ভবতী নারীদের ওপর করা হয়। দেশগুলোর মধ্যে আছে বাংলাদেশ, কঙ্গো, গুয়াতেমালা, ভারত, কেনিয়া, পাকিস্তান ও জাম্বিয়া। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত এসব গর্ভবতী নারীদের দুটি ভাগে বিভক্ত করে একটি গ্রুপকে অ্যাজিথ্রোমাইসিন ও অন্য গ্রুপটিকে প্লাসিবো (মূল ওষুধের মতোই দেখতে, কিন্তু এতে স্টাডি ড্রাগের উপাদান থাকে না) দেওয়া হয়।

প্লাসিবো গ্রুপের তুলনায় অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রুপে মাতৃকালীন সেপসিস বা মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৩ শতাংশ কম দেখা যায়। ফলাফলের এই পার্থক্য মূলত হয়েছে অন্য গ্রুপের তুলনায় অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রুপে সেপসিস কম হওয়ার কারণে।

জানা গেছে, সেপসিস তখনই হয় যখন শরীর কোনো একটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠে। এর ফলে মানবদেহের এক বা একাধিক অঙ্গ অকেজো হয় যেতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রহণকারী নারীদের মধ্যে অ্যান্ডোমেট্রাইটিস (গর্ভের আস্তরনের সংক্রমণ), ক্ষত থেকে রোগ সংক্রমণ এবং প্রস্রাবের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম দেখা যায়। প্রসব পরবর্তী জটিলতা থেকে হাসপাতালে কম ভর্তি হয়েছেন।

তবে গবেষণায় অ্যাজিথ্রোমাইসিন নবজাতকের সেপসিস বা মৃত্যুর ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে কিনা তা জানা যায়নি। উল্লেখ্য সিজারিয়ান ডেলিভারিতে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে আগে থেকেই অ্যাজিথ্রোমাইসিনের ব্যবহার করা হচ্ছে।

গবেষণার বাংলাদেশ সাইটের সহ-নেতৃত্বে ছিলেন ইমেরিটাস বিজ্ঞানী ড. রাশিদুল হক, আইসিডিডিআর,বির সহযোগী বিজ্ঞানী এসকে মাসুম বিল্লাহ ও আমেরিকার ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. উইলিয়াম পেট্রি।

ড. রাশিদুল হক বলেন, বাংলাদেশে যেখানে প্রায় প্রতি তিনটি প্রসবের মধ্যে দুটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়, সেখানে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রসবের সময় দেওয়া ২ গ্রাম অ্যাজিথ্রোমাইসিনের একক ডোজ অনেকের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে।

তিনি আশা করেন, স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ও নীতি-নির্ধারকরা স্বাভাবিক প্রসবের সময় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করবেন।

এই মাল্টি-সাইট অধ্যয়নটি এনআইসিএইচডির গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ফর উইমেনস অ্যান্ড চিলড্রেনস হেলথ রিসার্চ দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এবং গবেষণায় সহ-অর্থায়ন করে এনআইসিএইচডি ও এফএনআইএইচ। এফএনআইএইচ, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে গবেষণার জন্য অনুদান পায়।