নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে যা চাইবেন পাবনা মেডিকেলের অধ্যক্ষ
পাবনা মেডিকেল কলেজ
মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ পেলে পাবনা মেডিকেল কলেজের জন্য অবিলম্বে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ওবায়দল্লাহ ইবনে আলী।
সম্প্রতি কথা প্রসঙ্গে ডক্টর টিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে পাবনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশ্ন করা হয়, নব-নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর গ্রামের বাড়ি পাবনাতে। তো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যদি আপনার সাক্ষাৎ হয়, তাহলে তাঁর কাছে কি চাইবেন? জবাবে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ওবায়দল্লাহ ইবনে আলী উপরোক্ত কথা বলেন। তিনি জানান, পাবনা এলেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। মেডিকেল কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও স্থাপিত হয়নি নিজস্ব হাসপাতাল। ফলে হাতে-কলমে শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যদিও শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নি করতে হচ্ছে ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরবর্তী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা সদর হাসপাতালে।
২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর পাবনা মেডিকেল কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. এ. বি. মির্জ্জা মোঃ আজিজুল ইসলাম। এ কারণে পাবনা মানসিক হাসপাতালের জমি থেকে ৩০ একর জমি মেডিকেল কলেজের নামে বরাদ্দ নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজটি উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে কলেজটিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। বর্তমানে এ কলেজে প্রতি ব্যাচে ৭০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে।
পাবনা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর অনেকেই মেডিকেল শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। কেউ কেউ এমডি, এমএস ও এফসিপিএ-সহ নানা ডিগ্রি লাভ করেছেন। সেইসাথে বিসিএসসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক চাকরিতে সফল হয়েছেন।
অধ্যক্ষ জানান, বর্তমানে প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষক রয়েছেন। পড়ালেখায় কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। শুরুতে কলেজটিতে প্রতি ব্যাচে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি ছিলো। সরকারের আদেশে বর্তমানে ৭০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে সুযোগ সুবিধা পাড়েনি। ৫০ জনের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিয়েই চালানো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে ক্লাস করতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে, ঝামেলা হচ্ছে আবাসনে। হলগুলিতে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ফলে মেডিকেল শিক্ষার জন্যেআদর্শ পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
মেডিকেল কলেজে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর নিয়োগ হয়নি। এখন পর্যন্ত আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে। অচিরেই জনবল ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
অধ্যক্ষ জানান, মেডিকেল কলেজটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। প্র্যাকটিক্যাল করার জন্য ল্যাব রয়েছে। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসও হচ্ছে। কিন্তু একটা বড় অন্তরায় রয়ে গেছে, হাতে কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণে। শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নি করতে প্রায় ছয় কিলোমিটার ভাঙ্গাচোরা রাস্তা পাড়ি দিয়ে যেতে হয় সদর হাসপাতালে। যা অত্যন্ত বিড়ম্বনার।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হাসপাতাল না থাকায় প্রকৃতভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ হচ্ছে না। কলেজে তারা যে শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার সুযোগ পান, সদর হাসপাতালে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে তাদের পাওয়া সম্ভব হয় না। সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নিতে হয় জুনিয়র কনসালট্যান্টদের কাছ থেকে।
অধ্যক্ষ জানান, দীর্ঘদিন যাবত হাসপাতাল নির্মাণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া ছাড়াও উন্নত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পাবনার মানুষ। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রতিনিয়ত ঢাকা বা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হচ্ছে তাদের। পাবনার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি দ্রুত স্থাপনের মাধ্যমে এ সমস্যা দূর করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
অধ্যক্ষ জানান, এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রফেশনাল পরীক্ষায় মেডিকেল কলেজটির শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করছে। ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় প্রথম স্থানসহ ঈর্ষনীয় সাফল্য পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ওবায়দল্লাহ ইবনে আলী বলেন, নতুন রাষ্ট্রপতি যেহেতু পাবনার কৃতিসন্তান। এ কারণে আমরা আশা করছি, পাবনা মেডিকেলের সব ধরনের সমস্যা অচিরেই দূর হবে। এখানকার প্রয়োজনীয় উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি আদর্শ মেডিকেল শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থান করে নেবে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।