‘দেশেই ৭০ ভাগ শিশু ক্যান্সার রোগী ভাল হচ্ছে’
শিশু ক্যান্সারের সুচিকিৎসা এখন দেশেই হচ্ছে
শিশু ক্যান্সারের সুচিকিৎসা এখন দেশেই হচ্ছে। এই সেক্টরে যথেষ্ট সাফল্য দেখাচ্ছেন বাংলাদেশি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসার আওতায় আসা শিশু ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগই সুস্থ হচ্ছে। পরবর্তীতে তারা অন্য সবার মতই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারেন। ডক্টর টিভি অনলাইনকে এসব আশার কথা শোনান দেশের শীর্ষস্থানীয় শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আমিরুল মোরশেদ।
তিনি জানান, বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীদের নিয়ে নিজস্ব কোন তথ্য নেই। তবে, আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার শিশু ক্যান্সার রোগী যুক্ত হচ্ছে। এই ক্যান্সারের মূল কারণ জেনেটিক্যাল অর্থাৎ বংশানুক্রমে শিশুরা ক্যান্সার জীবাণু বহন করে পৃথিবীতে জন্মায়।
আরও একটা নিমর্ম সত্য হলো শিশু ক্যান্সার রোগীদের বেশিরভাগই ডায়াগনোসিস হয় না। ধারণা করা হয়, মাত্র অর্ধেক রোগী চিকিৎসকদের কাছে আসেন। তাদের মধ্যেও মাত্র ২৫ ভাগের মত চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। অর্থাৎ ক্যান্সার আছে, কিন্তু চিকিৎসকের কাছেই আসছে না। কিছু সংখ্যক চিকিৎসকের কাছে এসে ডায়াগনোসিস হচ্ছে। কিন্তু তারপর আর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে রাজি হচ্ছে না। এর মূল কারণ দারিদ্র ও অসচেতনতা। এছাড়াও, তাদের চিকিৎসা খরচ চালিয়ে নেয়ার মত সহায়তাকারী পান না, আরেকটা কারণ শিশু ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় প্রচুর রক্ত ও রক্তের উপাদান লাগে- যেটা সংগ্রহ করা অনেকের জন্যেই অসাধ্য হয়ে পড়ে।
শিশু ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় ৯০ এর দশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু অনকোলজি বিভাগের যাত্রা শুরু। এরপর ২০০৫ সালে ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এই চিকিৎসা শুরু হয়। ২০০৮ সালে দেশের ৮টি মেডিকেল কলেজে পেডিয়াট্রিক্স অনকোলজি সেন্টার চালু হয়। ২০১০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক্স অনকোলজি সেন্টারকে পূর্ণাঙ্গ শিশু অনেকোলজি সেন্টার হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এছাড়াও সিএমএইচ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুরের আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, ঢাকার শিশু হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসার আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।
শিশুদের ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. আমিরুল মোরশেদ বলেন, আগেই বলা হয়েছে- শিশুদের বেশিরভাগ ক্যান্সারের কারণ জেনেটিক। এ কারণে শিশুদের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা অসম্ভব। তবে কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে শিশুদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব। সেগুলো হলো- গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলিক এসিড পাওয়া, জন্মের পর বুকের দুধ খাওয়া, শৈশবকালে পর্যাপ্ত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, গর্ভাবস্থায় তামাক এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা, শিশুদের সেকেন্ডহ্যান্ড ধোঁয়া থেকে দূরে রাখা, বায়ুদূষণ থেকে দূরে থাকা, ক্ষতিকারক রাসায়নিক এবং বিষাক্ত এক্সপোজার এড়িয়ে চলা।
সবশেষে, অধ্যাপক ডা. আমিরুল মোরশেদ বলেন, বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গুণী ও দক্ষ শিশু রক্তরোগ ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা শিশুদের ক্যান্সারের চিকিৎসা করে থাকেন। সঠিক সময়ে, সঠিক নিয়মে, সঠিক চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে পারলে শিশুদের ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। তাই শিশুর ক্যান্সার ধরা পড়লে উদ্বিগ্ন না হয়ে শিশু রক্তরোগ ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ দেন তিনি।