ভুয়া এমবিবিএস সনদ, ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

অনলাইন ডেস্ক
2023-02-11 14:56:54
ভুয়া এমবিবিএস সনদ, ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

দুদক গ্রেপ্তারের পর সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেছে

ট্যুরিস্ট ভিসায় চীনে যান। ফিরে এসে দেশটির তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সনদ ব্যবহার করে চিকিৎসা পেশায় নেমে পড়েন ১৩ জন। অথচ তাদের অনেকেই এইচএসসি পাস করতে পারেননি।

অবশ্য প্রত্যেকের প্যারামেডিক ডিপ্লোমা করা ছিল। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গ্রেপ্তারের পর সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেছে। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক এ তথ্য জানিয়েছেন।

চার্জশিটের আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন ও সাবেক কম্পিউটার অপারেটর অ্যান্ড সুপারভাইজার মোহাম্মদ মজিবুর রহমান।

চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ দেখানো ১৩ আসামি হলেন- কুমিল্লার মো. ইমান আলী ও মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ, সাতক্ষীরার সুদেব সেন, টাঙ্গাইলের তন্ময় আহমেদ, ভোলার মো. মাহমুদুল হাসান, চাঁদপুরের মো. মোক্তার হোসাইন, ঢাকার মো. আসাদ উল্লাহ, গাজীপুরের মো. কাউসার, নারায়ণগঞ্জের রহমত আলী, বাগেরহাটের শেখ আতিয়ার রহমান, ফেনীর মো. সাইফুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জের মো. আসলাম হোসেন ও শিবলী সাদিক।

এর আগে প্রথম দফায় এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ ব্যবহার করে চিকিৎসক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া ৭ চিকিৎসককে ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরে ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি গাজীপুর কাশিমপুর ডক্টরস হাসপাতাল থেকে মো. শিবলী সাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়।

২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর ভুয়া ১২ চিকিৎসক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। অনুমোদিত চার্জশিটে আসামির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামিরা যোগসাজশে জাল জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহারের মাধ্যমে চিকিৎসক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন সনদ গ্রহণ করে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ওই ১৩ জন বাংলাদেশি ছাত্র চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাস করে বলে জানায়। তারা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহার করে বিভিন্ন তারিখে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত রেজিস্ট্রেশন যোগ্যতার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। উত্তীর্ণ হয়েছেন এই বলে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন নম্বর গ্রহণ করে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন অনুশীলন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন। রেকর্ডপত্র যাচাইকালে দেখা যায়, তাদের এমবিবিএস সনদগুলো ভুয়া।

সূত্র আরও জানায়, এমবিবিএস সনদের সঠিকতা যাচাই করার জন্য সনদপত্রগুলোর অনুলিপি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায় দুদক। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনের বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ওই সনদপত্রগুলো যাচাইপূর্বক বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক সেকশনে বিগত ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি দুদকে রেকর্ডপত্র পাঠায়।

প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে উল্লিখিত ১৩ জন এমবিবিএস ডিগ্রিধারীর এমবিবিএস সনদ ভুয়া। এছাড়া সনদগুলোর স্বাক্ষরের সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য হস্তলেখা বিশারদের মতামত গ্রহণ করা হয়, তাতেও দেখা যায় যে সনদের স্বাক্ষরগুলোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।

ওই ১৩ জন ভুয়া এমবিবিএস সনদধারী কখনো চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি। কেউ কেউ কেবলমাত্র ট্যুরিস্ট ভিসায় চীনে গিয়েছিলেন, সে দেশে থাকার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। সুতরাং তাদের এমবিবিএস ডিগ্রির সনদগুলো ভুয়া।


আরও দেখুন: