আট বছরে সর্বোচ্চ নিপাহ রোগী, প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা
বাদুড় থেকে আসা নিপাহ ভাইরাসে এ পর্যন্ত ৩৩৫ জন সংক্রমিত হয়েছে। মারা গেছে ২৩৫, মৃতের হার ৭১ শতাংশ
চলতি বছর দেশে এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ জন। তাদের মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন, যা গত ৮ বছরে সর্বোচ্চ। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি আছে একাধিক রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছর দেশের ৬টি জেলায় নিপাহ রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জেলায় কেস শনাক্ত হওয়ায় বড় প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি আছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। নিপাহ থেকে বাঁচতে খেঁজুরের কাঁচা রস পান না করার পরামর্শ তাদের।
চলতি বছর রাজশাহী, নওগাঁ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, পাবনা ও ঢাকা জেলায় ৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ শিশু ও বাকিদের বয়স ১৮-৩৫ এর মধ্যে। আক্রান্তদের মধ্যে ৫ জন নারী, ৪ জন পুরুষ। তাদের মধ্যে দুই শিশুসহ ৫ জন মারা গেছেন। সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি রাজশাহী বিভাগে, এরপরেই ঢাকা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে গত ২২ বছরে ৩৩ জেলায় নিপাহ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এসব জেলাকে এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে।
২০০১ সালে মেহেরপুরে প্রথম নিপাহ রোগী শনাক্ত হয়। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিসংখ্যান বলছে, নিপাহ ভাইরাসে ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ৩৩৫ ব্যক্তি সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গেছেন ২৩৫ জন, মৃতের হার ৭১ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম মাসেই শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ। অথচ ২০২২ সালে সারাবছরে তিনজন শনাক্ত হয়, তাদের মধ্যে দুজন মারা যান।
২০২১ সালে দুজন শনাক্ত হলেও কেউ মারা যাননি। ২০২০ সালে সাতজন শনাক্ত হয়, তাদের মধ্যে মারা যায় ৫ জন। ২০১৯ সালে আটজন শনাক্ত হয়, তাদের মধ্যে মারা যায় ৭ জন। ২০১৮ সালে শনাক্ত চারজনের মধ্যে দুজন মারা যায়। ২০১৭ সালে তিনজন শনাক্ত হয়, দুজন মারা যান। ২০১৬ সালে শনাক্ত পাওয়া যায়নি। ২০১৫ সালে শনাক্ত ১৫ জনের মধ্যে মারা যায় ১১ জন।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন জানান, কোথাও নিপাহ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে ওই স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। কারণ, যেখানে নিপাহ ভাইরাসের রোগী পাওয়া যায়, সেখানে বাদুড় ও খেজুরের রস থাকে। সে জন্য যেসব জেলায় রোগী পাওয়া গেছে, সেখানে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এদিকে গত ২৯ জানুয়ারি ‘নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠক থেকে নিপাহ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ঢাকার মহাখালীর ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ২০টি শয্যা প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, নিপাহ ভাইরাসে এবার শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বেশি। এখনই সর্তক হতে হবে। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সতর্কতামূলক বার্তা দেওয়া হয় ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে।
ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান জানান, নির্দেশনা পেয়ে নারী ও পুরুষ পৃথক করে ১৬টি সাধারণ শয্যা ও ১৭টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত করেছেন তারা। এরই মধ্যে নিপাহ আক্রান্ত দুজন ভর্তি হয়েছেন। তারা সুস্থ আছেন।