মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো নুহা-নাবার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কুড়িগ্রামের মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো ৯ মাস ১২ দিনের শিশু নুহা ও নাবার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে
কুড়িগ্রামের মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো ৯ মাস ১২ দিনের শিশু নুহা ও নাবার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। অস্ত্রোপচার পরবর্তী অবস্থায় নুহা ও নাবা ভাল আছেন। মঙ্গলবার দুপুরে (৩১ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, শিশু নুহা ও নাবার চিকিৎসার সকল খরচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে বহন করছেন। নুহা ও নাবার সার্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন তিনি। শিশুদুটির যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বিএসএমএমইউয়ে বিশ্বমানের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে সফলভাবে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, দেশের প্রথম সফল ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো শিশুদুটিরও অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিএসএমএমইউ’র কেবিন ব্লকের অপারেশন থিয়েটারে গত ২৯ জানুয়ারি রোববার সকাল ৯ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত নুহা ও নাবার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়। সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন। এ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নুহা ও নাবার দেহে টিস্যু বর্ধনকারী ডিভাইস ৪টি এক্সপান্ডা সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। ৬ ঘণ্টা চলা এ অস্ত্রপচারের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী, শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটের তত্ত্বাধায়ক ডা. সামন্তলাল সেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং অনুষদের ডিন ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেন, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ বনিকসহ আরও ১০ জন চিকিৎসক এ অস্ত্রোপচারে অংশগ্রহণ করেন। অস্ত্রোপচার পরবর্তী অবস্থায় সাবধানতার জন্য নুহা ও নাবাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাই কেয়ার ইউনিট এইচডিইউতে রাখা হয়েছে।
সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়ালাগা এ দুই শিশুর অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল, স্পর্শকাতর ও সময় সাপেক্ষ। বেশ কয়েক ধাপে এর অস্ত্রোপচার করা লাগবে। নিউরো সার্জন, ইউরোলজিস্টস, শিশু সার্জন, বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জন, এনেস্থিওলজিস্ট, শিশু পুষ্টিবিদসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের প্রয়োজন হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রবিবার তাদের প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ জোড়া লাগানো জমজ শিশু দুটির চিকিৎসার জন্য ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছেন। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে শিশু সার্জারি, প্লাস্টিক ও রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারি, ভাসকুলার সার্জারি, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন, অ্যানেসথেসিয়াসহ সকল বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ নিয়ে এ বোর্ড গঠন করা হয়।
কুড়িগ্রাম জেলার কাঁঠালবাড়ীর পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানা ও তার স্ত্রী নাসরিনের গর্ভে মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো কন্যা সন্তান নুহা ও নাবা গত বছর ২১ মার্চ জন্ম নেয়। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় Pygopagus Conjoined twin বলে। জন্মের অল্প কয়েকদিন পর এপ্রিল মাসে বিএসএমএমইউ’র র্সাজারী অনুষদের ডিন ও নিউরো স্পাইন সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের অধীনে নুহা ও নাবাকে ভর্তি করা হয়।