কিডনি রোগীর করোনা হলে ফলাফল অত্যন্ত খারাপ : বিএসএমএমইউ’র গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
2023-01-31 13:40:51
কিডনি রোগীর করোনা হলে ফলাফল অত্যন্ত খারাপ : বিএসএমএমইউ’র গবেষণা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মাল্টিটিউড অব ইস্যুস ইন কোভিডঃ রেনাল, কার্ডিয়াক এন্ড মেটাবোলিক ইনফ্লুয়েন্স’ ও ‘লং টার্ম হেলথ কনসিকোয়েন্সেস অ্যাস এ পোস্ট কোভিড-১৯ সিকোয়াল ইন হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত

কিডনি রোগীদের করোনা হলে ফলাফল অত্যন্ত খারাপ। ডায়ালাইসিসের রোগীদের করোনা হলে শতকরা ৫০ ভাগ রোগী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ক্রনিক কিডনি ডিজিজের রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চেয়ে ১০ গুণ বেশী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) পরিচালিত গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।  বিএসএমএমইউ’র অর্থায়নে ২০২২ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ৮শ ৪ জন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে একটি প্রাথমিক গবেষণা পরিচালিত হয়।

সোমবার দুপুরে (৩০ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে ‘কিডনি ডিজিজ রিসার্চ গ্রুপ’ এর আয়োজিত সিম্পোজিয়ামে বলা হয়, পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের রোগীদের করোনা হওয়ার ঝুঁকি অনেক থাকে। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের করোনায় মৃত্যু ঝুঁকি শতকরা ৫০ ভাগ। করোনার টিকার কার্যকারিতা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের অনেক কম। করোনার টিকা ডায়ালাইসিস রোগীদের কার্যকারিতা শতকরা ৮৭ ভাগ। করোনার টিকা নেফ্রাইটিস রোগের পুনরাগম ঘটাতে পারে।

গবেষক দলের প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বলেন, করোনায় আক্রান্তদের ১২ শতাংশ ডিপ্রেশনে ভুগছেন। তাদের এ অবস্থা থেকে চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। করোনায় বাংলাদেশে পেশাজীবীদের মাঝে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশী মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়াও কোভিড আক্রান্ত চিকিৎসকদের শতকরা ৪০ ভাগ চিকিৎসক এবং শতকরা ৩৪ ভাগ নার্সেরা লং কোভিডে ভুগছেন। করোনায় যাদের ডায়াবেটিস ছিল না তাদের ডায়াবেটিস হয়েছে। করোনায় অনেকের মায়োপ্যাথি হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএসএমএমইউ’র সব চিকিৎসককে গবেষণার কাজ করতে হবে। একবার গবেষণার কাজ করলেই হবে না। ধারাবাহিকভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী বলেন, কোভিড শেষ হয়ে যায়নি। বিশ্বের অনেক দেশেই কোভিড রয়েছে। কোভিডের সংক্রমণের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।

সিম্পোজিয়ামে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু সালেহ আহমেদ, বার্ডেমের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া আফসানা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কনসালট্যান্ট ডা. মীর ইসারাকুজ্জামান একটি করে গবেষণা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে গবেষণা ফল প্রকাশ করেন অধ্যাপক ডা. মাসুদ ইকবাল।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. দিপল কৃষ্ণ অধিকারী। সিম্পোজিয়ামে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী ও বার্ডেমের অধ্যাপক ডা. ফারুক পাঠান, অধ্যাপক ডা. এম আইয়ুব আলী চৌধুরী।

সিম্পোজিয়ামে আরও জানানো হয়, ডায়াবেটিস, ওজনাধিক্য, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘ মেয়াদী অসংক্রামক রোগ, অন্যদিকে কোভিড নিউমোনিয়া, একটি সংক্রামক রোগ। কোভিড হলে এই দুই ধরণের রোগের কিছু জটিলতা দেখা যায় এবং একটি রোগের দ্বারা অন্যটি প্রভাবিত হয়। তাই কোভিড নিউমোনিয়া হলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। ঠিক অপর দিকে যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের কোভিড জটিলতাও বেশী হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সকল কোভিড আক্রান্ত রোগীর মাঝে শতকরা ১০ ভাগের ডায়াবেটিস আছে এবং এদের শতকরা ১৫ ভাগের চিকিৎসাধীন থাকার প্রয়োজন হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিআইসি’র মধ্যে যাদের ওজনাধিক্য, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে। তার কোভিডের টিকা গ্রহণ করবে। তবে অবশ্যই টিকা গ্রহণের সময় রক্তের গ্লোকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকতে হবে। তবেই টিকা প্রদানের পর একজন ব্যক্তি কোভিড থেকে সুরক্ষা পাবে। কোভিড পরবর্তী কিছু জটিলতা নিয়েও কিছু রোগী আমাদের কাছে আসছেন। তাকে পোস্ট কোভিড অথবা লং কোভিড চিনডম বলা হয়। দুর্বলতা, গায়ে ব্যথা, মাথা ধরা ঘুম কম হওয়া ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে কোভিড টিকা গ্রহণের মাধ্যমে কোভিড জটিলতা প্রতিরোধ অনেকাংশে কমানো সম্ভব।


আরও দেখুন: