গর্ভেই নিপাহ ভাইরাসের অ্যান্টিবডি পায় সন্তান
২০০১ সাল থেকে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৩৬ জন
মায়ের কাছ থেকে সন্তানের শরীরে নিপাহ ভাইরাসের অ্যান্টিবডি (সম্ভাব্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) প্রবাহিত হয়— প্রথমবারের মতো তেমন প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।
সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদন সম্প্রতি ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার প্রায় ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ। বাংলাদেশে এই হার ৭১ শতাংশ। নিপাহ ভাইরাস থেকে আরোগ্য হলেও পরবর্তীতে গুরুতর স্নায়বিক জটিলতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থাকে।
খেজুরের কাঁচা রস পানে ফরিদপুরে এক নারী ও তার পাঁচ বছরের কম বয়সী কন্যা ২০২০ সালের জানুয়ারিতে নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়। পরে শিশুটির মৃত্যু হয় এবং ওই নারী গুরুতর স্নায়বিক জটিলতার শিকার হন।
জাতীয় নিপাহ সার্ভেইল্যান্স কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরের বছরের আগস্টে তিনি একটি সুস্থ ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। নিয়মিত চিকিৎসার অংশ হিসেবে নবজাতকের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
মায়ের কাছ থেকে শিশুর সংক্রমণের (ভার্টিকেল ট্রান্সমিশন) সম্ভাবনা বাদ দেওয়ার জন্য সেই নমুনা রেফারেন্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়েছিল। র্যাপিড ও পিসিআর টেস্টে নিপাহ সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। তবে অ্যান্টি-নিপাহ আইজিজি-এর একটি উচ্চ টাইটার দেখতে পাওয়া যায়।
এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন আইসিডিডিআর,বির সংক্রামক রোগ বিভাগের সমন্বিত সংক্রমণ শাখার সহকারী বিজ্ঞানী এবং প্রকল্প উপসমন্বয়ক ড. সৈয়দ মইনুদ্দীন সাত্তার। তিনি বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, এ গবেষণায় প্রথম নিপাহ ভাইরাসভিত্তিক ইমিউন প্রপার্টিজের ভার্টিকেল ট্রান্সফার বা মা থেকে শিশুতে পরিবাহিত হওয়ার প্রমাণ নিশ্চিত করে। ভাইরাস নিউট্রিলাইজেশনের কার্যকারিতা এবং নবজাতকের সুরক্ষার সম্ভাব্যতার বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।’
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সম্প্রতি আবারও আমরা খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করছি। এটি কী ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে তা না জেনেই মানুষ খেজুরের কাঁচা রস খাচ্ছে। আমরা সবাইকে খেজুরের কাঁচা রস খেতে নিষেধ করছি। রস সংগ্রহে যত সতর্কতাই অবলম্বন করা হয়ে থাকুক না কেন, এটি অনিরাপদ।’
নিপাহ ভাইরাস একটি জুনোটিক ভাইরাস (প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়) এবং এটি দূষিত খাদ্যের মাধ্যমে অথবা সরাসরি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। টেরোপাস জেনাসের ফলখেকো বাদুড় এই ভাইরাসের প্রাকৃতিক ধারক।
বাংলাদেশে ২০০১ সালে প্রথম এই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ২০০১ সাল থেকে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৩৩১ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৩৬ জন।