রাজশাহী মেডিকেলে শিক্ষার পূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে : অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ নওশাদ

ইলিয়াস হোসেন :
2023-01-17 16:06:29
রাজশাহী মেডিকেলে শিক্ষার পূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে : অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ নওশাদ

রাজশাহী মেডিকেলে শিক্ষার পূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে : অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ নওশাদ আলী

রাজশাহী মেডিকেলে শিক্ষার পূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির  অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ নওশাদ আলী। সম্প্রতি ডক্টর টিভি অনলাইনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

তাঁর ভাষায়, ‘রাজশাহীর সন্তান ও মেডিকেল কলেজটির সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে বরাবরই এর উন্নতি আমার ভাবনায় ছিলো। অধ্যক্ষ হওয়ার পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল একাডেমিক পরিবেশ তৈরি। দায়িত্বলাভের শুরু থেকেই এ বিষয়ে চেষ্টা করেছি। মেডিকেলের সব ফ্যাকাল্টি, শিক্ষক-সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা দারুণভাবে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছেন। 

ক্যাম্পাসে এক সময় রাজনৈতিক কোন্দল ছিল। সেটা মোকাবেলা করে পড়ালেখার সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা সত্যিকার অর্থেই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এ ব্যাপারে সফল হয়েছি। 

মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ আমরা করেছি। কারণ সুন্দর পরিবেশ নিঃসন্দেহে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনকে ভাল রাখতে সাহায্য করবে।

বিভিন্ন স্বাস্থ্য দিবসগুলো আমরা জাঁকজমকভাবে পালন করার চেষ্টা করছি। কলেজ ম্যাগাজিন করছি। সেখানেও আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনেক বিষয়ে লেখা প্রকাশের সুযোগ পেয়েছেন। 

রামেকের অধ্যক্ষ জানান, আমি নিজে একাডেমিশিয়ান। নিজে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল, ছাত্রদের জন্য সুন্দর একটা পরিবেশ দিতে পারলে, এখান থেকে ভাল চিকিৎসক তৈরি করা সম্ভব। যা নিশ্চিতভাবে দেশের কাজে লাগবে। 

প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে অর্জন সম্পর্কে তিনি আরও জানান, সরকারি মেডিকেল কলেজে নতুন কিছু করা খুবই কঠিন একটা বিষয়। চাকরিবিধিসহ নানা সীমাবদ্ধতা থাকে। ইচ্ছা করলেই কোনকিছু করে ফেলা যায় না। এরপরও আমরা বেশকিছু কাজ করেছি। যেমন : শিক্ষক দিবস পালন, আরএমসি দিবস উদযাপন (এ দিবসকে ঘিরে সাবেক শিক্ষার্থীদের ইনভাইট করা, তাদের নিয়ে প্রোগ্রাম করা) কালচার ইভেন্টের আয়োজন ইত্যাদি সাড়া জাগানো সব কর্মসূচি। কোভিডের বিধিনিষেধের কারণে দু’বছর ওপেন প্রোগ্রাম করতে পারিনি। কোভিড পরবর্তী সময়ে আবার তা চালু করেছি। রি-ইউনিয়ন টাইপের প্রোগ্রামে সিনিয়র জুনিয়ররা হাজির হন। সিনিয়ররা খোলামেলা পরামর্শ দেন। যা আমদের বাস্তবে অনেক কাজে লাগে। 

 

এছাড়া, দেশের অন্য মেডিকেল কলেজগুলোতে কিভাবে পড়ালেখা চলছে সে বিষয়েও সজাগ দৃষ্টি রাখেন বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ নওশাদ আলী। তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারি মেডিকেল কলেজের ৩৭ জন অধ্যক্ষদের মধ্যে অনলাইনে প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময়-কথাবার্তা হয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি স্যার এ বিষয়ে মধ্যস্থতা করে থাকেন। যেটা আমাদের পেশাগত কাজের ক্ষেত্রে পজিটিভ প্রভাব রাখছে। একে অপরের কাজের ধরণ ও মান জানতে পারছি। এতে আরও ভাল কিছু করার ব্যাপারের পরস্পরের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।  

মেডিকেলের কারিকুলাম নিয়ে সন্তুষ্টি ঃ

অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ নওশাদ বলেন, আমাদের দেশের মেডিকেলের কারিকুলাম ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ড। আমি নিজেও কারিকুলাম কমিটির মেম্বার। অন্য সদস্যদের সাথে প্রায়ই এ বিষয়ে বৈঠক হয়। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, ইউরোপ-আমেরিকার কারিকুলামে আমাদের শিক্ষার্থীদের পড়ালে কিন্তু চলবে না। কারণ প্রত্যেক দেশেরই ডিজিজ প্যাটার্নে পার্থক্য আছে। আমাদের দেশে ডায়রিয়ায় অনেক রোগী মারা যায়। ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড ও কালাজ্বরেরও অনেক প্রকোপ আছে। এসব রোগেও লোকেরা মারা যায়। অথচ পশ্চিমা বা ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে এ রোগের তেমন প্রভাব নাই। ওখানকার কারিকুলামেও এসব রোগ নিয়ে তেমন একটা আলোচনা নেই। তাছাড়া মানুষের সাইকোলজি, ফিজিওলজি, ইকোনোমিক অবস্থা সবমিলিয়েই তো সামাজিক স্ট্রাকচারটা দাঁড়ায়।

রামেকের অধ্যক্ষ বলেন, আমাদের কথা অত্যন্ত স্পষ্ট- সমাজে ভূমিকা রাখতে হলে ইউরোপিয়ান স্টাইলে মেডিকেল কারিকুলাম করলে চলবে না। এদেশের মেডিকেল  কারিকুলামের মূল কথা হচ্ছে- লার্নিং বাই ডুয়িং। অর্থাৎ শিখতে হবে- সাথে সাথে কাজ করতে হবে। এই জায়গাটায় আমাদের অবস্থা খুবই স্ট্যান্ডার্ড। মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস তৃতীয়বর্ষ থেকেই এটার সুযোগ রয়েছে। সরকারি মেডিকেলগুলোতে শতভাগ প্রতিফলিত হচ্ছে বলেই আমার বিশ্বাস। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের থিওরিটিক্যাল পড়ালেখা বেশি। এ সময় হিউম্যান ডেড বডি নিয়ে ল্যাবরেটরিতে অনেক শেখানো হয়। এরপর তৃতীয়বর্ষ থেকে ক্লিনিক্যাল এটাচমেন্ট অর্থাৎ রোগীকেন্দ্রিক পড়ালেখা শুরু। মেডিকেল স্টুডেন্টরা যদি হাসপাতালের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঠিকমত ঘুরে বেড়ায়, তাহলে সে অবশ্যই ভাল ডাক্তার হবে। এ সময় তাকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। টিচারদের সংস্পর্শে থাকতে হবে। আমাদের হাসপাতালে রোগীর কোন অভাব নেই। সুতরাং লার্নিং বাই ডুয়িংয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের কোন ঘাটতি নেই।

টার্গেট ডিএমসি ঃ

অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ নওশাদ আলী বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজকে (ডিএমসি) আমরা সবসময় টার্গেটে রাখি। কারণ সেখানে তুলনামূলক ভাল শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। সেখানকার ফ্যাসিলিটিজও বেশি। তারপরও আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেকেই ভাল করছেন। আমরা এমবিবিএস পরবর্তী ধাপগুলোতে খেয়াল রাখি। অর্থাৎ এমডি, এমএস, এফসিপিএস, পিএইচডি-সহ পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনে আমাদের কতজন ভর্তি হতে পারলো। বর্তমানে রামেকে এমবিবিএস পাশের হার অনেক ভাল। প্রতি বছর আমাদের এখান থেকে পাস করা ডাক্তারেরা গড়ে ২০/৩০ জন পোস্টগ্র্যাজুয়েশনে চান্স পাচ্ছেন। এ সবই সুন্দর একাডেমিক পরিবেশের প্রভাব। 

সাফল্যের রহস্য ঃ

ডাঃ মোঃ নওশাদ আলী বলেন, প্রতিটা মানুষেরই অঞ্চলভিত্তিক আলাদা টান থাকে। আগের প্রিন্সিপ্যালদের ৯০ ভাগই ছিলেন ভিন্ন এলাকার। প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের দায়িত্ব থাকলেও অতটা দরদ ছিল না। যেটা আমার বা বর্তমান প্রশাসনের আছে। কারণ বর্তমান শিক্ষকদের ৮০ ভাগই রাজশাহী ও তার আশ-পাশের জেলার। আমি নিজে এই মেডিকেলের ছাত্র ছিলাম। এই জেলারই সন্তান। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে আমি এবং বর্তমান প্রশাসন মনেপ্রাণে ধারণ করি। এর উন্নতির লক্ষ্যে সব সময় বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করি। 

দৃঢ়তার সাথে অধ্যাপক ডাঃ মোঃ নওশাদ আলী বলেন, একটা কথা বলতে চাই- আমার শিক্ষক-সহকর্মীরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করেন। তাদের জন্য প্রমোশনসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে সবাই খুবই সেটিসফাইড। সবাইকে নিয়ে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও ভাল মানের ডাক্তার হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য সব ধরনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পেরেছি। এটা অবশ্যই আমার প্রশাসনের স্বার্থকতা। 


আরও দেখুন: