কোভিডবিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির ৪ দফা সুপারিশ

অনলাইন ডেস্ক
2022-12-25 12:47:57
কোভিডবিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির ৪ দফা সুপারিশ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত বিশ্বে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বাংলাদেশের করণীয় শীর্ষক ভার্চুয়াল সভা

পার্শ্ববর্তী চীন-ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষিতে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে করোনা সংক্রমণের সম্ভাব্য নতুন ঢেউ মোকাবিলায় সরকারকে ৪ দফা সুপারিশ করেছে কোভিডবিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটি।

আজ রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত বিশ্বে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বাংলাদেশের করণীয় শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় এই সুপারিশের তথ্য জানানো হয়। 

সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির জানান, চীন-ভারতসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। চীনের সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু আছে। অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া করছেন। এই অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে শনিবার বৈঠক করেছে জাতীয় কারিগরি কমিটি। বৈঠক শেষে চারটি বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। 

অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, করোনা সংক্রমণের নতুন ভ্যারিয়েন্টে সবচেয়ে ভয়াবহ হবে টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য। এ কারণে যারা এখনো টিকা নেয়নি, তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা নেয়ার সুপারিশ করেছেন  কারিগরি কমিটি। একইসাথে সেকেন্ড বুস্টার ডোজের (চতুর্থ ডোজ) প্রচার প্রচারণা বৃদ্ধির বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। যারা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, প্রেগন্যান্ট নারী ও ষাটোর্ধ যারা আছেন, তাদেরকে দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ দ্রুততম সময়ে নেওয়ার কথা  বলা হয়েছে।

দ্বিতীয় সুপারিশ হলো যাদের কোমরবিড কন্ডিশন রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রটেকটিভ কেয়ার যেমন- মাস্ক ব্যবহার করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকার বিষয়ে কারিগরি কমিটি থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তৃতীয় সুপারিশে বলা হয়েছে, বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ সব পোর্টগুলোতে পরীক্ষা জোরদার করতে হবে। ইতোমধ্যে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক পোর্টগুলোতে চিঠি দিয়েছেন। বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ সমস্ত জায়গায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের অ্যান্টিজেন টেস্ট করে তাদেরকে শনাক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও যেসব দেশে করোনার দ্রুত বিস্তার ঘটছে, সেসব সন্দেহভাজন দেশ থেকে যারা আসবেন, তাদের মধ্যে উপসর্গ থাকলে দ্রুত পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। যাতে কোনভাবেই করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট  আমাদের দেশে আসতে না পারে। 

এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ইতোমধ্যে আইইডিসিআরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সংক্রমণ পজিটিভ হলে, তার যেন জেনেটিক সিকোয়েন্স করা হয়। অর্থাৎ সংক্রমণের নতুন ভ্যারিয়েন্ট আছে কিনা সেটি পরীক্ষার নির্দেশ দেয়া আছে।  


কারিগরি কমিটির সভায় আরও বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বুস্টার ডোজে ফাইজারের যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, সেটির মেয়াদ ফাইজার কোম্পানিই এক্সটেনশন করেছে। এ বিষয়ে ডিজিডিএ অ্যাপ্রুভাল দিয়েছে, জাতীয় কারিগরি কমিটিও বলেছে সেই ভ্যাকসিনটি দ্রুত দিয়ে দেওয়ার জন্য। একই সঙ্গে এটি নিয়ে যেন সন্দেহ-অবিশ্বাস  তৈরি না হয়, সে বিষয়েও কারিগরি কমিটি নির্দেশনা দিয়েছে।


আলোচনায় যুক্ত হয়ে কোভিড সংক্রমনের নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন কারিগরি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা। তিনি বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। 


তিনি বলেন, মানুষ একদম স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে ভুলে গেছে। যেহেতু সংক্রমণ বাড়ছে আবারও পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। আবারও সচেতনতা বাড়াতে হবে। বুস্টার ডোজ যারা নেয়নি, তাদের দ্রুত নিয়ে নিতে হবে।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, টিকার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে একটি ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। টিকা নিয়ে সন্দেহের কোন কারণ নেই। মেনুফ্যাকশন কমিটির সঙ্গে কথা বলেই টিকার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। 

তিনি বলেন, সারাবিশ্বে কোভিড মহামারি বেড়ে গেছে। চীনে অসংখ্য মানুষ আবারও আক্রান্ত হচ্ছে। টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য ভয় বেশি। তাই সবাইকে টিকা নিয়ে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।

সংক্রমণ বাড়ার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ডিএনসিসিসহ কোভিড হাসপাতালগুলোর সঙ্গে মিটিং করেছি। তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আইসোলেশন ইউনিটগুলোকে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। অধিদপ্তর সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে সতর্ক এবং প্রস্তুত আছে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম। 


আরও দেখুন: