শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আয়েশা বেদোরা চৌধুরী

অনলাইন ডেস্ক
2022-12-14 14:13:55
শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আয়েশা বেদোরা চৌধুরী

১৯৭১ সালের বিজয়ের দিন ১৬ ডিসেম্বর শহীদ হন ডা. আয়েশা বেদোরা চৌধুরী

নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ যখন চূড়ান্ত বিজয়ের পথে, তখন বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে অসংখ্য শিক্ষক, চিকিৎসক, লেখক, কবি বা সাংস্কৃতিক কর্মী বেছে বেছে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী।

শহীদদের এ তালিকায় নারী বুদ্ধিজীবীদের খুঁজতে গেলে মাত্র চারজনের নাম পাওয়া যায়। তাঁরা হলেন- শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভিন, শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা, শহীদ শিক্ষক লুৎফুন্নাহার হেলেন ও শহীদ ডা. আয়েশা বেদোরা চৌধুরী ডোরা।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ডা. আয়েশা বেদোরা চৌধুরীর নাম একটু ভিন্নভাবেই সামনে আসে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তৎকালীন স্টেট ব্যাংকের নারী চিকিৎসক ছিলেন।

১৯৩৫ সালের ৬ এপ্রিল কলকাতায় জন্ম ডা. আয়েশার। বাবা ইমাদউদ্দিন চৌধুরী আর মা কানিজ ফাতেমা মাহমুদা। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রথম সন্তান। ডা. আয়েশা কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে আসাম সরকারের অধীনে কিছুদিন চাকরি করেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ থেকে দুটি গোল্ড মেডেল পেয়ে এমবিবিএস পাস করেন তিনি।

১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চাকরিতে যোগ দেন ডা. আয়েশা। এরপর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংকের মেডিকেল অফিসার হিসেবে ঢাকার অফিসে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ড. আবুল বাশারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁর দুই মেয়ে মোনালিসা ও বেলারোসার জন্ম হয় ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে। তাঁরাও চিকিৎসক এবং বর্তমানে প্রবাসী।

১৯৭১ সালের বিজয়ের দিন ১৬ ডিসেম্বর শহীদ হন ডা. আয়েশা বেদোরা চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস গোপনে তিনি ক্রমাগত সাহায্য করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের। একাত্তরের দিনগুলোয় মুক্তিযোদ্ধাদের শুধু চিকিৎসাই দেননি, তাদের দিয়েছিলেন আশ্রয়, সেবা ও প্রয়োজনীয় জিনিসের যোগান।

১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ডা. আয়েশা ঢাকায় ছিলেন। তিনি যুদ্ধাহত মানুষদের চিকিৎসা দিতে সাধ্যের বাইরে গিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করে যেতেন। গোপনে ওষুধপত্র, কাপড়, শুকনো খাবার এবং অর্থ নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিতেন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় মিছিল দেখে তিনি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, দেশ চূড়ান্ত বিজয় পেয়ে গেছে। তিনি ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হন। সঙ্গে ছিলেন খালু সড়ক বিভাগের সাবেক চিফ ইঞ্জিনিয়ার হাতেম আলী খান, খালা কানিজ ফাতেমা মোহসিনা ও ভাবী রশীদা চপল।

তাঁরা প্রথমে ছুটে যান ১৮ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িতে, যেখানে শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব এবং তাঁর দুই কন্যা গৃহবন্দি। কিন্তু ডা. আয়েশা জানতেন না, বাড়িটি তখনও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পাহারা দিচ্ছে। কারণ পাকিস্তানি সেনাদের কাছে তাদের চূড়ান্ত পরাজয়ের খবর এসে পৌঁছায়নি।

ডা. আয়েশার গাড়ি ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনারা কোনো প্রশ্ন করার আগেই গুলি ছুড়তে থাকে। টানা গুলিবর্ষণে ঝাঁঝরা হয় গাড়িটি। ডা. আয়েশা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্ষতবিক্ষত হন। নয় মাস শত্রুর মুখোমুখি ঢাকায় বসবাস করার পর বিজয়ের প্রথম দিনেই তিনি শহীদ হন। ঘটনাস্থলে তাঁর সঙ্গে শহীদ হন গাড়িচালক মুনির আহমেদ। খালু, খালা ও তাঁদের পুত্রবধূ গুলিবিদ্ধ হলেও অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান।

এরপর ১৭ ডিসেম্বর সকালে বেগম সুফিয়া কামাল, বেগম সায়েম ও বেগম হাফিজ ঘটনাস্থলে গিয়ে ডা. আয়েশার মরদেহ গোসল করান। পরে আজিমপুর কবরস্থানে তাঁর দাফন করা হয়।


আরও দেখুন: