করোনা মানবসৃষ্ট ভাইরাস, ছড়িয়েছে উহান থেকে
করোনা ভাইরাস
করোনা একটি মানবসৃষ্ট ভাইরাস এবং অসাবধানতাবশত: ছড়িয়েছে উহানের গবেষণাগার থেকেই। সম্প্রতি নিজের প্রকাশিত ‘দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট উহান’ বইয়ে এমন দাবি করেছেন, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের জীবাণু সংক্রান্ত গবেষণাগার উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির (ডব্লিউআইভি) অ্যান্ড্রু হফ নামের এক মার্কিন গবেষক।
তিনি আরও দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) অর্থায়নেই ডব্লিউআইভিতে সার্সগ্রুপের বিভিন্ন ভাইরাস নিয়ে গবেষণা চলছিল। সার্স-কোভ ২ বা করোনাভাইরাস সেসব ভাইরাসেরই একটি, যা অসাবধানতার কারণে সেই গবেষণাগারের বাইরে বেরিয়ে এসেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউইয়র্কভিত্তিক অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ইকোহেলথ অ্যালায়েন্সে বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে আছেন অ্যান্ড্রু হফ। এই সংস্থাটি সংক্রামক রোগ-জীবাণু নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও গবেষণা করে।
দ্য নিউইয়র্ক পোস্টকে হফ বলেন, ইকোহেলথ অ্যালায়েন্সের প্রতিনিধি হিসেবে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে স্বেচ্ছাসেবী গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
তিনি জানান, গবেষক হিসেবে তিনি যোগ দেওয়ার আগে থেকেই ডব্লিউআইভিতে বাদুড়বাহী বিভিন্ন সার্স গ্রুপের ভাইরাস নিয়ে গবেষণা চলছিল; আর এই গবেষণায় অর্থয়ান করেছিল এনআইএইচ।
যুক্তরাষ্ট্রে রোগজীবাণু ও চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোনো গবেষণায় তহবিলের যোগান দেওয়ার জন্য সরকারিভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এনআইএইচ। সরকার থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সব গবেষণাতেই অর্থ প্রদান করে এই কর্তৃপক্ষ।
‘দ্য ট্রু অ্যাবাউট উহান’ বইয়ে অ্যান্ড্রু হফ বলেন, ‘বিদেশি গবেষণাগারগুলোতে সাধারণত যথাযথ বায়োসেফটি, বায়োসিকিউরিটি থাকে না এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অনেক সময়েই এসব গবেষণাগার ব্যর্থ হয়। করোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ডব্লিউআইভির সেরকমই একটি ব্যর্থতার উদাহারণ।’
‘চীন প্রথম দিন থেকেই জানতো, যে ডব্লিউআইভিতে কী নিয়ে গবেষণা চলছে। এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে ডব্লিউআইভির দায় যতখানি, এনআইএইচের দায় তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কোনো বিচার বিবেচনা না করে একটি অত্যাধুনিক জৈব অস্ত্রের প্রযুক্তি আমরা চীনের হাতে তুলে দিয়েছি।’
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।
তারপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
অ্যান্ড্রু হফের বই থেকে জানা যায়, উহানের ডব্লিউআইভির গবেষণাগারটিতে নিয়মিত সরকারি বরাদ্দ দেয় না চীনের সরকার। সে কারণে গবেষণা পরিচালনা ও কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে বাইরের বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর ‘ফরমায়েশি গবেষণা’ করে ডব্লিউআইভি।