রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ সংকটে পুনর্বাসন বঞ্চিত শারীরিক অক্ষম ব্যক্তিরা

তৌহিদুল ইসলাম তারেক :
2022-12-03 20:04:18
রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ সংকটে পুনর্বাসন বঞ্চিত শারীরিক অক্ষম ব্যক্তিরা

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ও মিটফোর্ড হাসপাতালে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভা

প্রতিবন্ধকতা বা বিশেষ চাহিদা শুধু জন্মগত দুর্বলতা নয়, দুর্ঘটনা বা অসুস্থতায় হওয়া ব্যক্তিকেও বুঝায়। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। সেই হিসেবে দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ শতাংশ পুনর্বাসনের সুযোগ পায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এর জন্য প্রয়োজনের তুলনায় রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞের সংকটকে দায়ি করছেন তারা।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তারা এসব কথা জানান।

আলোচকরা জানান, সারাবিশ্বে মোট জনগোষ্ঠীর ১৫ শতাংশ মানুষ শারীরিক বা মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী। এর মধ্যে শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষ আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করে। বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রতিবন্ধী। তাদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ পুনর্বাসনের আওতায় আসেন। এ প্রক্রিয়া ফিজিওলজিস্টের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। অথচ আমাদের দেশে ফিজিওলজিস্টের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কম। তবে দেশে এ পুনর্বাসনকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ছে জানিয়ে তারা বলেন, দেশে প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের সেবার পরিধি বাড়ছে।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২০০ এর অধিক এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ১০৩ সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে তাদের সেবা দেওয়া হয়। সারাদেশের ৩০ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে ১৪টিতে রিহেবিলিটেশন বিভাগ রয়েছে। এছাড়া ৬টি স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ৮ বেসরকারি বেসরকারি হাসপাতাল, ৪০ জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৬৪ উপজেলায় রিহেবিলিটেশন সার্ভিস চালু রয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা লেনিন বলেন, দেশে ক্রমবর্ধমান হারে প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। আমরা তাদেরকে প্রতিবন্ধী বা অক্ষম না বলে সাহায্য প্রয়োজন এমন মানুষ বলি। অক্ষম শব্দটি তাদের মানসিকভাবে দূর্বল করে দেয়। সারাদেশ দেশ থেকে এসব রোগী রাজধানী ঢাকায় আসে। ফলে এত বেশি রোগী হয় যে, সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। এ অবস্থায় আমাদের কর্তা ব্যক্তিদের বুঝাতে হবে ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসা জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ছড়িতে দিতে হবে। এতে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চাপ কমবে। রোগীও ভালো সেবা পাবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদুজ্জামান বলেন, যে কোন সময়, যে কোন মানুষ ডিজেবল হতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের চলাচলের ক্ষমতা ও চোখের দৃষ্টি কমে আসতে পারে। প্রতিবন্ধী মানেই অটিস্টিক না। যে কোন ডিজেবল ব্যক্তিই প্রতিবন্ধি। যেটা, আমি আপনি সবাই হতে পারি। তাই এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। তাদের প্রতি সদয় হতে হবে এবং সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি জানিয়ে অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান খান বলেন, 'বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ও শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। এখন এটি আর শুধু প্রতিবন্ধী দিবস না, শারীরিকভাবে অক্ষম সকলকে নিয়ে এই দিবস। ইউরোপ, আমেরিকা ও আমাদের তৃতীয় বিশ্বের দেশের চিন্তাধারায় বিরাট পার্থক্য রয়েছে। এটি দূর করতে হবে। সমাতা নিশ্চিতে আমাদের সকলকে আন্তরিক ও সদয় হতে হবে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিডফোর্ট হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. আহমেদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. হাসান মাসুদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. জাহিদুল ইসলাম, নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মনিরুল ইসলাম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. এহসানুল হক খান এবং অধ্যাপক ডা. খুরশীদ মাহবুব।

এতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএস) ও বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন মূল প্রবন্ধ উপাস্থাপন করেন।


আরও দেখুন: