দিল্লির বিমানে বাংলাদেশি চিকিৎসকের সেবায় রক্ষা পেল সঙ্কটাপন্ন শিশু

বাংলাদেশি চিকিৎসক
2022-11-22 11:03:32
দিল্লির বিমানে বাংলাদেশি চিকিৎসকের সেবায় রক্ষা পেল সঙ্কটাপন্ন শিশু

দিল্লির বিমানে বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. জোবায়ের আহমেদের মানবিক সেবায় রক্ষা পেল সঙ্কটাপন্ন শিশুর জীবন

চলন্ত বিমানে বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. জোবায়ের আহমেদের মানবিক সেবায় রক্ষা পেল সঙ্কটাপন্ন শিশুর জীবন। এ ঘটনায় দেখে তাঁকে দাঁড়িয়ে স্যালুট জানিয়েছেন বিমানযাত্রীরা। ডক্টর টিভিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডা. জোবায়ের আহেমেদ। নিজ ফেসবুকওয়ালেও ঘটনাটি শেয়ার করেছেন তিনি।

ডা. জোবায়ের জানান, গতকাল সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ভিসতারা এয়ারওয়েজের ইউকে ১৮২ ফ্লাইটে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ঠিক ১১ টায় বিমানের কেবিন ক্রু চিফ ঘোষণা করলেন একটা মেডিকেল ইমারজেন্সি। বিমানে কোন ডাক্তার আছে কিনা। সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিয়ে এগিয়ে যান তিনি। নিজের চিকিৎসক পরিচয়ের প্রমাণ দিয়ে পাইলট ও শিশুটির বাবা-মাকে আশ্বস্ত করেন। এরপর থেকে দিল্লি পর্যন্ত শিশুটির ইমার্জেন্সি চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রাখেন এই মানবিক চিকিৎসক।

দিল্লিতে বিমানটি অবতরনের পর পাইলট রাহুল নায়ের মানবিক চিকিৎসক ডা. জোবায়েরের সঙ্গে ককপিটে দেখা করেন এবং ছবি তুলেন। এ সময় অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে তাকে স্যালুট জানান। একজন ডাক্তার হিসেবে এ ঘটনাকে অত্যন্ত গর্বের বলে জানিয়েছেন তিনি।

ডা. জোবায়েরের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ডক্টর টিভির পাঠকদের জন্য নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো। 

গতকাল ১০.১৫ তে Vistara Airways এর Uk 182 flight এ চড়ে বসেছি
গন্তব্য ঢাকা টু দিল্লি। ফাইনাল ডেস্টিনেশন আমার ভূ-স্বর্গ কাশ্মীর।
ঠিক ১১ টায় বিমানের কেবিন ক্রু চিফ Gaursauran kaur ঘোষণা করলেন একটা মেডিকেল ইমারজেন্সি।
বিমানে কোন ডাক্তার আছে কিনা।
আমি রেস্পন্ড করলাম বেল বাজিয়ে।
একজন বাচ্চার ইমারজেন্সি অবস্থা।
আমি বেল বাজালাম।
তারপর সেই বাচ্চা দেখলাম।
এবং তাদের কাছে স্টেথোস্কোপ চাইলাম।
কিন্ত মেডিকেল কিট বক্স খুলার আগে আমার credentials পাইলট দেখতে চাইলেন।
আমার ভিজিটিং card সাথে ছিলো বাংলায়।
তারপর গুগল ড্রাইভ থেকে BMDC certificate দেখাই যেটা কেবিন ক্রু আমার মোবাইল নিয়ে পাইলটকে নিয়ে দেখায়।
তারপর মেডিকেল কিট বক্স খুলে স্টেথোস্কোপ দেয়।
আমি চেক করি।
বাচ্চাটার congenital heart disease ছিলো।
বিমান যখন ৩২৫০০ ফিট উচ্চতায় চলছিলো তখন ৬ মাস বয়সী বাচ্চাটার high altitude hypoxia হয়ে
অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে ৭০% হয়ে যায়।বাচ্চার তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
৬ মাস বয়সী বাচ্চার মা বাবা চিল্লাপাল্লা করে কান্না শুরু করে।
আমি গিয়ে বাচ্চাটাকে চেক করি।
বাচ্চার অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে ৭০% এ নেমে আসে।
বাচ্চাকে অক্সিজেন দিতে ব্যবস্থা নেই।
আলহামদুলিল্লাহ স্যাচুরেশন বাড়তে থাকে।
বাচ্চার ডিস্ট্রেস কমতে থাকে
আমি পুরো journey তে বাচ্চাকে অক্সিজেন দেওয়া নিশ্চিত করি।
আলহামদুলিল্লাহ বাচ্চাটা সেইফ হলো।
না হয় একটা এক্সিডেন্ট ঘটে যেতো।
পাইলট বলেন আমি বললে ইমারজেন্সি ল্যান্ডিং করবে।
তারপর দিল্লিতে বিমান ল্যান্ড করলে পাইলট রাহুল নায়ের আমাকে ডেকে ককপিটে দেখা করেন এবং ছবি তুলেন।
অনেক ধন্যবাদ দেন।
না হলে তাদের ইমারজেন্সি ল্যান্ডিং করা লাগতো।
বাচ্চাটার জীবন সংকটে পড়ে গেছিলো।
আলহামদুলিল্লাহ আমি কিছু করতে পেরে শুকরিয়া আদায় করি মহান আল্লাহ এর দরবারে।
তারপর আমি পরামর্শ দেই বাচ্চাটাকে ল্যান্ডিং এর পর যেন সবার আগে নামতে দেওয়া হয়।
পাইলট ও ক্রেবিন ক্রু সেটা নিশ্চিত করেন।
একজন ডাক্তার হিসেবে দিনটা আমার জন্য গর্বের।
অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে আমাকে স্যালুট জানায়।
বিমানে পাইলট ও কেবিন ক্রু স্বাক্ষরিত ইন্সিডেন্ট নোট আমাকে দেওয়া হয়।
আলহামদুলিল্লাহ আমি একজন ডাক্তার হিসেবে প্রাইড ফিল করি।

-ডঃ আহমেদ জোবায়ের।


আরও দেখুন: