গুণগত স্বাস্থ্যসেবায় অপরিণত শিশুর মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব

অনলাইন ডেস্ক
2022-11-17 21:31:43
গুণগত স্বাস্থ্যসেবায় অপরিণত শিশুর মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রি-ম্যাচুউরিটি দিবসের আলোচনা

গুণগত স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে অপরিণত বয়সে জন্মানো শিশুর মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। ১৭ নভেম্বর বিশ্ব প্রিম্যাচিওরিটি দিবস উপলক্ষে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চিকিৎসকেরা এ কথা বলেন।

চিকিৎসকেরা আরও বলেন, মায়ের বুকের দুধ, প্রত্যেক মা ও তার শিশুর উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োগ প্রিম্যাচিওরিটির শিকার শিশুর মৃত্যুরোধে কাজ করে।

বিশেষভাবে তারা বলেন, অপরিণত শিশুর জীবন রক্ষায় ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (KMC) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেএমসি হচ্ছে অপরিণত বয়সের শিশু ও কম ওজনের শিশুকে মায়ের বুকে জড়িয়ে রেখে সুরক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি। ক্যাঙ্গারু  মাদার কেয়ার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত একটি পদ্ধতি বলে উল্লেখ করেন চিকিৎসকেরা। 

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ কামরুল হাসান সোহেল। আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. নুরেন তাসকিন তুলি, মেডিকেল অফিসার (রোগ-নিয়ন্ত্রণ) ডা.  সিফাত সালেহ সহ সকল মেডিকেল অফিসার, সিনিয়র স্টাফ নার্স ও মিডওয়াইফ। আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মেডিকেল অফিসার ডা. নির্ঝর ভৌমিক।

আলোচনায় বলা হয়, শিশুর প্রিম্যাচিওরিটি সারা বিশ্বের একটি সমস্যা। সাধারণত মাতৃগর্ভে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে কিছু আগে অর্থাৎ ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্মগ্রহণ করা এবং ওজন অত্যন্ত কম হওয়া শিশুদের অপরিণত শিশু বা প্রিম্যাচিউর শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। 

মূল আলোচনায় বলা হয়, সময়ের আগে শিশুর জন্ম নেওয়ার কোনও নির্দিষ্ট কারণ এখনও পাওয়া যায়নি। মায়ের পুষ্টিহীনতা, বাল্যবিবাহ, সাধারণত একটি শিশুর জন্মের দু’বছর পার হওয়ার আগেই আর একটি শিশু জন্ম হলে, মা স্থুলকায় হলে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে, হাইপারটেনশন থাকলে, গর্ভাবস্থায় মা একলাম্পশিয়ায় (খিঁচুনি) ভুগলে, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত রান্না বা কাপড় ধোয়ার কাজ করলে, অ্যাজমা, গর্ভকালীন অবস্থায় পানি আগে ভাঙলে, গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে, হঠাৎ পড়ে গেলে, ধূমপান বা তামাক গ্রহণ করলে, মায়ের রক্তশূন্যতা ইত্যাদি কারণে সন্তান অপরিণত হয়ে জন্মায়।

ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট : প্রিম্যাচিউর নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যার জন্য নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের বাচ্চাদের জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই বিশেষ ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। শিশুর স্বাস্থ্যের উপর চিকিত্‍সা নির্ভর করে। কোন কোন বাচ্চা এই বিশেষ কেয়ার ইউনিটে কয়েক ঘণ্টা বা দিন থাকে। আবার কোন কোন শিশুর ক্ষেত্রে সেই সময়টা অনেকটা বেড়ে যায়। কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস থাকতে হতে পারে।

এনআইসিইউ-তে ইনকিউবেটর এবং বিশেষ সরঞ্জাম: তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, খাওয়ানোর জন্য ফিডিং টিউব ও ভেন্টিলেটরসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় না ফেরা পর্যন্ত এই বিশেষ সরঞ্জামগুলি শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কাজে লাগানো হয়।

সংক্রমণ বা জীবাণুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ: এই ধরনের বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই থাকে না বললে চলে। তাই শরীরে সংক্রমণের তীব্র সম্ভাবনা তৈরি হয়। এনআইসিইউতে ডাক্তার এবং নার্সদের পাশাপাশি বাড়ির পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে নিয়মিত পরীক্ষা করা : এই ধরনের শিশুদের জীবনরক্ষকারী ভ্যাকসিনগুলো নিশ্চিতে বিশেষ নজর দিতে হবে। শিশুর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করানো প্রয়োজন পড়ে।

খাওয়ানোর অসুবিধা : এই শিশুদের শরীরের অংশগুলি এত দুর্বল হয় যে, একটু বেশি নড়াচড়া করলেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই তাদের খাওয়ানোর জন্য কিছুটা অসুবিধার মুখে পড়তে হয় বৈকি। ফিডিং টিউবে করে শিশুকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।

এই ধরনের শিশুদের ঘুমের চক্র : ঘুমের পরিমাণের চেয়ে ঘুমের গুণমান বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একটি প্রি-টার্ম শিশুর ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমাতে পারে। নিয়মিত খাওয়ানোর প্রয়োজন, যাতে তারা ভাল ঘুমাতে পারে। সঠিক যত্ন, চিকিৎসা, সহায়তা এবং পর্যায়ক্রমিক ফলো-আপে প্রিম্যাচিওর শিশুদের ভালভাবে চলার সম্ভাবনা বেশি থাকে।


আরও দেখুন: